Advertisement

EXCLUSIVE: যত বার জোট, তত কম ভোট! জোট-রাজনীতি কি ক্ষয়িষ্ণু করে তুলছে বঙ্গের বামশক্তিকে?

জোট রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার পর থেকেই ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়ছে বামশক্তি, কমছে জন সমর্থন। অন্তত ভোটের ফলাফল তাই বলছে। তাহলে জোট-রাজনীতি কি বামশক্তির ক্ষয় ধরাচ্ছে, ধার কমাচ্ছে? কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলানোয় কি রক্তে, মজ্জায় বামপন্থীরাও কি মুখ ফেরাচ্ছে সিপিএম-এর থেকে? আলোচনায় এমনই নানা প্রসঙ্গ...

CPI(M)
সুদীপ দে
  • কলকাতা,
  • 19 Feb 2021,
  • अपडेटेड 7:52 PM IST
  • জোট রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার পর থেকেই ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়ছে বামশক্তি, কমছে জন সমর্থন।
  • কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলানোয় কি রক্তে, মজ্জায় বামপন্থীরাও কি মুখ ফেরাচ্ছে সিপিএম-এর থেকে?
  • তাহলে জোট-রাজনীতি কি বামশক্তির ক্ষয় ধরাচ্ছে, ধার কমাচ্ছে?

এ বারে পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে! বাংলায় প্রায় এক দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা তৃণমূল কংগ্রেসকে গদিচ্যুত করতে একদিকে যেমন প্রচার চালাচ্ছে গেরুয়া শিবির, তেমনই অন্যদিকে বিজেপি ছাড়া বাকি সমস্ত সরকার বিরোধী শক্তিকে একত্রিত করছে বাম-কংগ্রেস জোট (Left-Congress alliance)। পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম (CPIM)-এর জোট ভাবনা ও বর্তমান পরিস্থিতির কথা শুরু করার আগে একটু বছর পনেরো আগের সময়টা ঝালিয়ে নেওয়া যাক।

২০০৬ সালের বিধানসভা ভোটে বাম সরকারের নিরঙ্কুশ জয় ও সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন:
২০০৬ সালের বিধানসভা ভোট। রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ২৩৫টি আসনে জিতে ক্ষমতায় জাঁকিয়ে বসেছিল বামপন্থী জোট। ২ জন আরজেডি এবং ২ জন এনসিপি প্রার্থীর অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ঘটনা আলাদা করে ধরা হলে অন্য কোনও ‘পন্থী’দের সঙ্গে জোটের জন্য ভাবতে হয়নি সে সময়। কিন্তু এর পরই ২০০৬-এর মে মাসে সিঙ্গুরে টাটাদের জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু হয়। সিঙ্গুরে টাটাদের কারখানা তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণের সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলেন রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জমি-জটে থমকে যায় টাটাদের ন্যানো গাড়ির কারখানা তৈরির কাজ।

নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলন ও তৃণমূলের শক্তি বৃদ্ধি:
সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন সামলাতেই যখন রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার, তখন ‘গোদের উপর বিষফোড়া’র মতো মাথা চাড়া দিতে শুরু করে নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলন। নন্দীগ্রামে প্রস্তাবিত কেমিক্যাল হাব গড়ার বরাত পেয়েছিল সালেম গোষ্ঠী। কেমিক্যাল হাবের জন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণের সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। এর মধ্যেই ১০ নভেম্বর, ২০০৭ সালে ভূমি-উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির মিছিলে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে সিপিএমের ‘বাহিনী’র বিরুদ্ধে। রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় নন্দীগ্রাম। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি চালায় পুলিশ। পুলিশের গুলিতে চোদ্দো জন গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়। এই ঘটনা আগুনে ঘি সংযোগের মতো কাজ করে।

Advertisement

বাংলায় বাম দুর্গের পতন:
এই দুই আন্দোলনের প্রভাব পড়ে ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনের উপর। রাজ্যের ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ১৫টি নিজেদের দখলে রাখতে সক্ষম হয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন শাসকদল। এ দিকে রাজ্যের তৎকালীন রিবোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলায় সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজ্যজুড়ে প্রবল সরকার-বিরোধী হওয়া (ঝড় বইছে বলাই ভাল)। প্রভাব পড়ল ২০১১-র বিধানসভা ভোটে। ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে মাত্র ৬২টি আসনে জয় পেল রাজ্যের ক্ষমতায় থাকা দল। ফলে বাংলায় ক্ষমতাচ্যুত হল বামপন্থী জোট সরকার।২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে মাত্র অবসান হল দীর্ঘ ৩৪ বছরের সিপিএম (CPIM) জামানার।

সিপিএম (CPIM)-এর জোট ভাবনা ও তার ফলাফল:
‘বাঘ তো বুড়ো হলেও বাঘ-ই থাকে’! হয়তো এমনই কোনও বিশ্বাসে ভর করে বিরোধী শক্তি হিসাবে ঘুরে দাঁড়াতে চায় রাজ্যের বাম শক্তি। কিন্তু কেরল থেকে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট— সর্বত্রই সিপিএম (CPIM) শীর্ষ নেতৃত্ব একটা বিষয় আন্দাজ করেন, একক ভাবে ক্ষমতায় ফেরা অসম্ভব। ফলে বাংলায় দীর্ঘ কয়েক দশকের বিরোধী কংগ্রেসের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয় সিপিএম (CPIM)-সহ অন্যান্য বামপন্থী দলগুলি। এ বার এ রাজ্যে সিপিএম (CPIM)-এর জোট ভাবনা ও তার ফলাফলে নজর দেওয়া যাক।

এর মাঝে সারদা-নারদার আর্থিক কেলেঙ্কারিতে উত্তাল হয় গোটা রাজ্য। কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ায় শাসক দলের একাধিক নেতা-মন্ত্রীর। সমালোচনা, বিরোধীতায় সুর চড়ান রাজ্যের সমস্ত বিরোধী দল। এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে ২০১৪-র লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে দীর্ঘ কয়েক দশকের ‘শত্রু’ কংগ্রেসের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয় সিপিএম (CPIM)। ২০০৪ সালে যাদের দখলে ছিল ৩৫টি লোকসভা কেন্দ্র, এক দশক পর কংগ্রেসের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েও রাজ্যের ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ২টিতে জয়ের মুখ দেখে সিপিএম। 

২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটেও কংগ্রেসের সঙ্গে একজোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন শাসকদলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামল সিপিএম। ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে মাত্র ৩২টিতে জয় পেল রাজ্যের বামশক্তি। কাজে এল না শাসকদলের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি বা রাজনৈতিক সন্ত্রাসের অভিযোগ। সে বার অবশ্য বামফ্রন্ট শুধুমাত্র ২০৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল।

২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে ফের কংগ্রেসকে পাশে নিয়ে রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামল সিপিএম। ফলাফল হল আরও করুণ! ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রের একটিতেও জিততে পারল তা এ রাজ্যে ৩৪ বছর রাজত্ব করা বামপন্থী শক্তি। অন্যদিকে ৩৪ বছরের বাম জামানায় ও পরবর্তীতে তৃণমূলের শাসনকালে বিরোধী দল হিসাবে ক্রমশ তাৎপর্য হারানো কংগ্রেস সিপিএমের সঙ্গে ২০১৪-এ জোটের পর থেকেই এ রাজ্যে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করল। বাড়তে থাকল তাদের আসন সংখ্যা, ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করল তাদের ভোট ব্যাঙ্কে।

জোট-রাজনীতি কি ক্ষয়িষ্ণু করে তুলছে বঙ্গের বামশক্তিকে?
জোট রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার পর থেকেই ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়ছে বামশক্তি, কমছে জন সমর্থন। অন্তত ভোটের ফলাফল তাই বলছে। তাহলে জোট-রাজনীতি কি বামশক্তির ক্ষয় ধরাচ্ছে, ধার কমাচ্ছে? কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলানোয় কি রক্তে, মজ্জায় বামপন্থীরাও কি মুখ ফেরাচ্ছে সিপিএম-এর থেকে? রাজ্যের সব স্তরের বামপন্থীদের স্বার্থ এক সরলরেখায় না আনতে পারলে জোটের অঙ্ক মেলানো, অন্তত পশ্চিমবঙ্গে বেশ কঠিন কাজ।

Advertisement

আসলে বস্তুনিরপেক্ষ ভাবে এই জোটের সম্ভাবনা ও ফলাফল বিচার করতে হলে সংখ্যাই একমাত্র ভরসা, স্রেফ পাটিগণিতের হিসেব। তবে জোট ভাবনায় আসন ভাগাভাগির অঙ্কটা ততটা সহজ নয়। গোটা দেশের ধারা পশ্চিমবঙ্গেও বজায় থাকলে আসন্ন নির্বাচনে বিজেপি-র ভোট খুব একটা বাড়ার কথা নয়। তবে এ রাজ্যে সরকার-বিরোধী শক্তি বিজেপি, বাম-কংগ্রেস নয়। তবে এ বারের নির্বাচনে রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ক নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে বাম-কংগ্রেস জোটকে। এই ভোটের উপরেই নির্ভর করবে বাম-কংগ্রেস জোটের সাফল্য। কিন্তু জোট সফল হলেও সিপিএম-এর আসন সংখ্যা কি বাড়বে, ভোটের শতাংশের হিসাবে কি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে? অদূর ভবিষ্যতেই মিলবে তার উত্তর।
 

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement