Advertisement

প্রথম ভোটেই 'জায়ান্ট কিলার' হয়েছিলেন মমতা! এবার সুযোগ মীনাক্ষির সামনেও

মনোনয়ন জমা দিয়ে মন্দিরে মন্দিরে ঘুরে বেড়ানোর সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন আহত হয়েছেন ঠিক তখনি আলিমুদ্দিনে আসন্ন বিধানসভা ভোটে বামেদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করছিলেন বিমান বসু। আর তাতে নন্দীগ্রাম আসনের জন্য উঠে আসে মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায়ের নাম। সেই সঙ্গেই রাজ্য রাজনীতিতে আলোচনা শুরু হয়ে যায় মীনাক্ষিকে নিয়ে। রাজনৈতিক জীবনের প্রথম মহাসংগ্রামে এইরকম কঠিন লড়াইয়ের সামনে দল কেন এক আনকোরা মুখকে ঠেলে দিল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তবে DYFI রাজ্য সভানেত্রী কিন্তু যথেষ্ট লড়ুকা বলেই জানা যাচ্ছে। হাইভোল্টেজ নন্দীগ্রামে দুই হেভিওয়েটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তরুণ্যে ভরা মীনক্ষির দিকে তাই আগামী কয়েকদিন বাড়তি নজর থাকবেই গোটা দেশের মিডিয়ার তা বলাই বাহুল্য।

৩৭ বছর পর মীনাক্ষি পাড়বেন ইতিহাস ফেরাতে ?
সুমনা সরকার
  • কলকাতা,
  • 11 Mar 2021,
  • अपडेटेड 6:08 PM IST
  • প্রথম ভোটে চমকে দিয়েছিলেন 'আনকোরা' মমতা
  • শুভেন্দু-মমতার বিরুদ্ধে এবারের বামেদের ভরসা মীনাক্ষি
  • ৩৭ বছর পর মীনাক্ষি পাড়বেন ইতিহাস ফেরাতে ?

একুশের বিধানসভা ভোটে রাজ্যের সবচেয়ে হাইপ্রফাইল সিট নন্দীগ্রাম। যেখানে স্বয়ং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই আসন থেকে জিতেই তৃতীয়বার বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর মসনদে বসতে চাইছেন মমতা। তবে এবার তৃণমূলনেত্রীর লড়াইটা কিন্তু অত সহজ নয়। কারণ তাঁর বিপরীতে লড়াইয়ের ময়দানে স্বয়ং এলাকার ভূমিপুত্র শুভেন্দু অধিকারী। সেই শুভেন্দু অধিকারী যিনি তৃণমূলের শুরু থেকে ছিলেন মমতার পাশে। যে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের হাত ধরে মমতার উত্তরণ তার অন্যতম হোতা ছিলেন শুভেন্দু। রাজনীতির ময়দানে দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধা আজ বিপরীত মেরুতে। রাজনীতির এই মহাসংগ্রামে যুযুধান দুই পক্ষের টক্কর যে সমানে-সমানে হবে তা বলাই বাহুল্য। এই আবহে নন্দীগ্রামের মত হাইভোল্টেজ আসনে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী কে হবেন সেদিকেই নজর ছিল সকলের। সেই পর্দা উন্মোচিত হয়েছে বুধবার রাতেই। মনোনয়ন জমা দিয়ে মন্দিরে মন্দিরে ঘুরে বেড়ানোর সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন আহত হয়েছেন ঠিক তখনি আলিমুদ্দিনে আসন্ন বিধানসভা ভোটে বামেদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করছিলেন বিমান বসু। আর তাতে নন্দীগ্রাম আসনের জন্য উঠে আসে মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায়ের নাম। সেই সঙ্গেই রাজ্য রাজনীতিতে আলোচনা শুরু হয়ে যায় মীনাক্ষিকে নিয়ে। রাজনৈতিক জীবনের প্রথম মহাসংগ্রামে এইরকম কঠিন লড়াইয়ের সামনে দল কেন এক আনকোরা মুখকে ঠেলে দিল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তবে DYFI রাজ্য সভানেত্রী কিন্তু যথেষ্ট লড়ুকা বলেই জানা যাচ্ছে। হাইভোল্টেজ নন্দীগ্রামে দুই হেভিওয়েটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তরুণ্যে ভরা মীনক্ষির দিকে তাই আগামী কয়েকদিন বাড়তি নজর থাকবেই গোটা দেশের মিডিয়ার তা বলাই বাহুল্য।

বাবার হাত ধরেই রাজনীতিতে মীনাক্ষি
মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায়। DYFI এর রাজ্য সভানেত্রী । রাজনীতিতে তাঁর আসা, বাবা সাগর মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে। সাগরবাবু কৃষক আন্দোলনের নেতা ছিলেন। তাঁর সঙ্গে দলের নানা কর্মসূচিতে দেখা যেত মীনাক্ষিকে। মা পারুলদেবীও দলের মহিলা সংগঠনের নেত্রী। তাই মীনক্ষির রক্তেই রয়েছে রাজনীতি। মীনাক্ষি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। এখন একটি কলেজে কর্মরত রয়েছেন। ছাত্রাবস্থা থেকেই  SFI করতেন। ২০১২ সালে DYFI-র কুলটি জোনাল সম্পাদক হন তিনি। পরে  DYFI এর রাজ্য সভানেত্রী করা হয় মীনক্ষাকি।

Advertisement
দলীয় সভায় মীনাক্ষি

বামেদের নবান্ন অভিযানের নেত্রী ছিলেন
গত ১১ ফেব্রুয়ারি ১০টি বাম সংগঠনের ডাকে নবান্ন অভিযান ঘিরে উত্তাল হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। সেদিন প্রবল উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল নবান্ন চত্ত্বরে। ১০টি বাম ছাত্র যুব সংগঠনের ডাকে নবান্ন অভিযানে  মূলত দাবি ছিল  শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের।পুলিশের বিরুদ্ধে বিনা প্ররোচনায় নির্মম ভাবে লাঠিচার্জ, জল কামান চালানোর অভিযোগ উঠেছিল। সেদিন পুলিশের মারে আহত হয়েছিলেন কয়েকজন ডিওয়াইএফআই কর্মী। তাঁদের মধ্যে পরবর্তীতে ৩১ বছরের মইদুল ইসলাম মিদ্যার মৃত্যু নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় উঠেছিল। ওই দিনের নবান্ন অভিযানের অন্যতম নেত্রী ছিলেন মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায়।

মন্দির-মাজার থেকে চা বানানো-পদযাত্রা, PHOTOS-এ দেখুন মমতার নন্দীগ্রাম সফর

নন্দীগ্রামে বহিরাগত মীনক্ষিকে কেন বাছল বামেরা?
নন্দীগ্রাম আসনটিতে বরাবরই প্রার্থী দেয় বাম শরিক সিপিআই। স্বাধীনতার পর ১৯৫২ সাল থেকে এই আসনে সিপিআই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এসেছে।  গত বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামে বামেদের ঝুলিতে এসেছিল ২৭ শতাংশ ভোট। ১৯৫২ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এলাকায় সিপিআই-এর একচেটিয়া আধিপত্য থাকলেও ছন্দপতন হয় ২০০৬ সালে। ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিধায়ক পদ থেকে সরে দাঁড়ান ইলিয়াস মহম্মদ শেখ। এরপর ২০০৯-এর উপ নির্বাচনে জয়লাভ করেন তৃণমূলের প্রার্থী ফিরোজা বিবি। সেই থেকেই ঘাসফুলের জয়জয়কার চলছে। ২০১১ সালের পরিবর্তনের সময়  নন্দীগ্রামে জয় হয় ঘাসফুল শিবিরেরই। এরপর ২০১৬ বিধানসভায় এই আসনে যেতেন শুভেন্দু অধিকারী। এবার লড়াইটা যে মূল বিজেপি শিবিরে যাওয়া শুভেন্দুর সঙ্গে তাঁর প্রাক্তন দলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর প্রেস্টিজ ইস্যু তা সবাই জানেন। একসময় শোনা গিয়েছিল এবারের একুশের ভোটে বামেরা প্রার্থী দেবে না নন্দীগ্রামে। বরং আসনটি ছাড়া হচ্ছে আব্বাস সিদ্দিকির দল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের জন্য। এমন ইঙ্গিত মিলছিল যে আব্বাস নিজেই এখান থেকে প্রার্থী হতে পারেন। তবে সেই সব জল্পনার অবসান বুধবার রাতেই হয়ে গিয়েছে। এবারে দলের তরুণ ও নতুন মুখ বর্ধমানের মেয়ে  মীনক্ষির ওপরেই ভরসা রাখতে চাইছে বাম শিবির।

বহিরাগত নিয়ে বামেদের সাফাই
এবারের ভোটে বিজেপির বিরুদ্ধে বারবার বহিরাগত ইস্যু তুলছেন তৃণমূলনেত্রী। এদিকে ভবানীপুরের ভোটার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রাম থেকে ভোটে দাঁড়াতেই তাঁকে ‘বহিরাগত’ দাবি করে বিতর্কিত ফ্লেক্স পড়েছে তাঁরই নির্বাচনী কেন্দ্র নন্দীগ্রামে। এই নিয়ে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ তৃণমূলনেত্রী। কর্মিসভা থেকে তুলেছেন প্রশ্ন। বললেন, ‘কেউ কেউ বলছে আমি নাকি বাইরের লোক। ‘আমি বাংলার লোক, বাইরের লোক হলাম কী করে? গুজরাত থেকে যারা আসছে তারা বাংলার লোক?’ মীনাক্ষিও আদতে কুলটির বাসিন্দা।  মীনাক্ষী স্থানীয় প্রার্থী না হওয়ায় তাঁকে নিয়েও যে কথা উঠতে পারে, তা আন্দাজ করেই বিমান বসু আগেই বলেছেন, ‘‘এ বারের ভোটে বীরভূমের কুসুম্বা গ্রামের কথা এসেছে, যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর মামার বাড়ি। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, বীরভূমের মেয়ে নন্দীগ্রামে দাঁড়ালে বহিরাগত হবে কেন? একই ভাবে বলতে পারি, বধর্মানের মেয়ে মীনাক্ষী নন্দীগ্রামে কী ভাবে বহিরাগত হবে?’’

'ওঁ জয়ন্তী মঙ্গলা কালী...' নন্দীগ্রামে মমতার অপ্রত্যাশিত হিন্দু-কার্ড! প্রথম দিনেই ৩ মন্দিরে পুজো

জীবনের প্রথম ভোটে হেভিওয়েটকে হারিয়েছিলেন মমতা
১৯৮৪  থেকে ২০২১ প্রায় চল্লিশ বছরের বর্ণময় রাজনৈতিক জীবন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেই রাজনৈতির জীবনে এসেছে নানান চড়াই-উতরাই।  চৌত্রিশ বছরের বাম শাসনের অবসান হয়েছে তাঁর নেতৃত্বে । হয়ে উঠেছেন অগ্নিকন্যা, জননেত্রী । সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু নিজের জীবনের প্রথম নির্বাচনে চমকে দিয়েছিলেন।  ১৯৮৪ সালে যাদবপুরে সিপিএমের হেভিওয়েট সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে প্রথমবার সংসদে প্রবেশ করেছিলেন মমতা। মীনাক্ষিও নিজের জীবনের প্রথম বড় রাজনৈতিক লড়াইয়ে নামতে চলেছেন নন্দীগ্রাম থেকে। ১৯৮৪ সালে মমতা যে ক্যারিশ্মা দেখিয়েছিলেন ২০২১ সালে তেমন মীরকল মীনাক্ষি ঘটাতে পাড়বেন কিনা তা সময়ই বলবে। কারণ মমতার থেকেও মীনক্ষির লড়াই কিন্তু আরও কঠিন। একদিকে নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্র আর অন্যদিকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর মাঝে মীনাক্ষি কীভাবে নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব বজায় রাখেন সেই দিকেই চোখ থাকবে সকলের।

Advertisement
মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে মমতা

বামেদের ভরসা কিন্তু তরুণ ব্রিগেডে
কেরলে এক ধাক্কায় ৫ মন্ত্রী ৩৩ বিধায়ককে প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে ক্ষমতাসীন এল ডি এফ। এক্ষেত্রে দলের স্পষ্ট সিদ্ধান্ত ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র ছাড়া ইতিমধ্যেই যারা দু’বার নির্বাচিত হয়েছেন তাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছে। ইঙ্গিত স্পষ্ট নতুন মুখকে সুযোগ করে দেওয়া।  কেরলের পাশাপাশি এবার পশ্চিমবঙ্গের বাম প্রার্থী তালিকাতেও নতুন মুখের ছড়াছড়ি। দলের প্রার্থী তালিকায় একদিকে যেমন আছেন কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়, অশোক ভট্টাচার্যর মত প্রবীণ ব্যক্তিত্ব তেমনই আছে সৃজন ভট্টাচার্য, প্রতীক উর রহমান, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, পৃথা তা, অপূর্ব প্রামাণিক, সপ্তর্ষি দেব, দেবজ্যোতি দাস, দীপ্সিতা ধর, ঐশী ঘোষদের মত একদম নতুন মুখ। এছাড়াও এই তালিকায় আছেন শতরূপ ঘোষ, সায়নদীপ মিত্র, মোনালিসা সিনহাদের মত অপেক্ষাকৃত কম বয়সীরা। যারা প্রথমবার নির্বাচনী লড়াইতে নামছেন। শতরূপ ঘোষ ছাড়া এর আগে কেউই নির্বাচনী ময়দানে নামেননি।  অবশ্যই সবথেকে বড়ো চমক নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের মনোনয়ন। শোনা যাচ্ছে সিপিএম জেলা ডিওয়াইএফআইয়ের সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ পণ্ডাকে প্রথমে বেছে হয়েছিল একুশে নন্দীগ্রামের প্রার্থী হিসেবে। তিনি ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে কাঁথি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সেইসঙ্গে মহাদেব ভুঁইয়ার নাম আলোচিত হচ্ছিল। তিনি জেলা তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। আলিমুদ্দিন স্ট্রিট কিন্তু শেষপর্যন্ত অন্য কথা বলল। বিজেপির তরফে শুভেন্দু প্রার্থী হওয়ার প্রেক্ষিতে সিপিএমের এই পদক্ষেপ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। 


 

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement