বাংলা জয়ের লক্ষ্যে এ বার সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়েছিল কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা বিজেপি। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, জেপি নাড্ডা, যোগী আদিত্যনাথ, স্মৃতি ইরানীর মতো একাধিক হেভিওয়েট বিজেপি নেতা-নেত্রীদের লাগাতার প্রচার, মুহুর্মুহু আক্রমণ সামলে বাংলার মসনদে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির বিজয় রথ রুখে দিয়ে দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী প্রমাণ করলেন ‘বাংলা নিয়েজ মেয়েকেই চায়’!
কেন্দ্রীয় হেভিওয়েট নেতৃত্বের প্রচারের সুনামি রুখে দিয়ে শুধু যে টিকে থাকলেন তা নয়, বিজেপির বাংলা জয়ের স্বপ্ন ভেঙে দিলেন মমতা। ভোটের আগে দলের ভাঙন নিয়ে তিনি যে মোটেই বিচলিত নন, তা বার বার দাবি করেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে ‘দলবদলু’রা কেউই সে ভাবে দাঁত ফোটাতে পারেননি। আর এক দলত্যাগী হেভিওয়েট প্রার্থী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় যিনি গতবারের বিধানসভা ভোটে রেকর্ড সংখ্যক লক্ষাধিক ভোটে জিতেছিলেন তৃণমূলের হয়ে, তিনিও এবার বিজেপিতে যোগ দিয়ে পরাজিত হয়েছেন। নন্দীগ্রামের হাইভোল্টেজ কেন্দ্রে দলত্যাগী হেভিওয়েট প্রার্থী সুভেন্দু অধিকারী অবশ্য শেষমেশ মমতাকে হারিয়ে জিতেছেন। মমতাকে ৫০ হাজার ভোটে হারানোর দাবি করা সুভেন্দু হাড্ডাহাড্ডির লড়াইয়ে শেষমেশ তৃণমূল সুপ্রিমোকে হারালেন ১,৯৫৭ ভোটে।
বঙ্গীয় বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের গৌরবময় জয়ে জন অধিকার পার্টির শীর্ষ নেতা ও প্রাক্তন সাংসদ পাপ্পু যাদব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘দেশের ভবিষ্যৎ’ বলে উল্লেখ করেছেন। ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। প্রথম থেকেই সরাসরি মোদীর সরকারের বিরোধিতা করে গিয়েছেন মমতা। বারবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতা, মেরুকরণের অভিযোগে সরব হয়েছেন তিনি। বারবার বিরোধীদের একজোট হওয়ার ডাক দিয়েছেন। এমনকী ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে মমতা বলেছিলেন, ভোটে জিতে বিজেপি বিরোধী জোটই সরকার গড়বে। কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা বিজেপিকে গদিচ্যুত করতে আঞ্চলিক দলগুলিকে জোটবদ্ধ করতে চেয়েছেন মমতা।
দেশের বিভিন্ন রাজ্যের ভোটের প্রচারেও কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে মহারাষ্ট্রে উদ্ধব সরকারের, দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের পাশে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে মমতা পাশে পেয়েছেন উত্তরপ্রদেশে সপা নেতা অখিলেশ যাদবকে। এর সঙ্গ বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে মমতার পাশে রয়েছে জাতীয় কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। ফলে এ বারের বিধানসভার নির্বাচনে গেরুয়া শিবিরের বাংলা জয়ের স্বপ্নে জল ঢেলে আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির চিন্তা বাড়াতে চলেছেন দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। শক্তি বাড়িয়ে এ বার প্রত্যাঘাতের পালা!
ভোটের আগেই কেন্দ্র বিজেপির মাথা ব্যথা বাড়িয়ে দিল্লিতে চলা কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে ডেরেকের মতো নেতাদের পাঠিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাশ্মীরে ওমর আবদুল্লা, মেহবুবা মুফতিদের আটক করা নিয়ে একমাত্র মমতাই সরাসরি তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন। বাংলায় বিজেপির জয়ের আশায় জল ঢালতেই শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল, অখিলেশ যাদব, শারদ পাওয়া, ওমর আবদুল্লারা। মমতাই এখন দেশের বিজেপি-বিরোধী জোটের অন্যতম মুখ। তাই বাংলায় তৃণমূলের জয়ের পর এ বার দিল্লির সিংহাসন থেকে বিজেপিকে সরাতে মমতাকে সামনে রেখেই এগোতে চাইছে গোটা দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল।