শুভেন্দু অধিকারী বিদায়ের ৫ বছর পর নন্দীগ্রামে সভা করতে গিয়ে সেখান থেকে ভোটে লড়ার ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূলনেত্রী। মমতার ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে উত্থানের অনেকটা জুড়ে রয়েছে নন্দীগ্রাম। তাই সেখান থেকেই নতুন করে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়ে যাবে নাতো? তা নিয়ে এখন জোর আলোচনা রাজ্য রাজনীতিতে। তিনি জিততে পারবেন কিনা, তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণে ব্যস্ত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্র শুভেন্দু অধিকারী চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন, ৫০ হাজার ভোটে হারাবেন প্রাক্তন নেত্রীকে। তবে এসবে থোরাই পরোয়া ৩৪ বছরের বাম শাসনকে অস্তাচলে পাঠানো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দেশের এক নম্বর মিডিয়া হাউস ইন্ডিয়া টুডে-আজতককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিলেন, কথা যখন দিয়েছেন তখন নন্দীগ্রাম থেকেই এবারের ভোটে লড়াই করবেন।
নন্দীগ্রামেই ভোটে দাঁড়াবেন
গত ১৮ জানুয়ারি নন্দীগ্রামে সভা করতে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে গিয়ে বক্তব্য রাখার সময় তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘নন্দীগ্রামের শহিদদের কোনওদিন ভুলিনি, ভুলব না। অত্যাচার, অনাচারকে সহ্য করে যেভাবে আপনার আন্দোলন করেছিলেন, তার কোনও তুলনা হয় না।’ মানতেই হবে ২০০৭-এর নন্দীগ্রাম আন্দোলন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পায়ের তলায় মাটি শক্ত করেছিল। তাই ২০২১ সালের নির্বাচনে সেখান থেকেই আবার নতুন যুদ্ধ শুরু করতে চাইছেন তৃণমূলনেত্রী। তবে সভাঞ্চে বললেও তিনি আদৌ নন্দীগ্রাম থেকে লড়বেন কিনা তা নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। বুধবার সাংবাদিক রাজদীপ সরদেশাইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই রহস্যের অবসান ঘটালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়ে দিলেন তিনি কমিটমেন্ট রাখতে অভ্যস্ত। তাই বলেছেন যখন তখন নন্দীগ্রাম থেকেই এবার নির্বাচনে দাঁড়াবেন।
২০২১ মমতার জন্য 'ডু অর ডাই'
২০১১-তে ইতিহাস গড়েছিলেন। ৩৪ বছরের লালদুর্গের অবসান ঘটিয়েছিলেন। তখন অবশ্য তিনি ছিলেন বিরোধীনেত্রী। ২০১৬ সালে ফের বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছিলেন। ২০২১ সালে তৃণমূলের সেই জয়ের ধারা বজায় থাকবে কিনা তা এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। তারমধ্যে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপির বাড়বড়ন্ত তৃণমূল শিবিরের চিন্তার রেখা আরও বাড়িয়েছে। গেরুয়া শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারা যেভাবে বিধানসভা নির্বাচনের কয়েকমাস আগে থেকে মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন তাতে বোঝাই যাচ্ছে বাংলা জয় করতে বিজেপি কতটা মরিয়া। এই আবহে দলের মধ্যে বিদ্রোহের চাপা আগুন। ক্ষমতার অলিন্দে বসে তাই ২০২১-এর নির্বাচন মমতার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। যদিও একুশের ভোটকে নিজের রাজনৈতিক কেরিয়ারে 'ডু অর ডাই' মানতে একেবারেই নারাজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইন্ডিয়া টুডে ও আজতককে দেওয়া সাক্ষাৎ কারে, তৃণমূলনেত্রীর জবাব ২০২১ সালের নির্বাচনে জনতাই জবাব দেবে, জিতবে তৃণমূলই।
শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাইছেন নেত্রী
বিজেপি এরাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলছে। শাসক দল তৃণমূল রাজনৈতিক হিংসা ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করছে। যদিও এইসব দাবি মানতে রাজি নন মুখ্যমন্ত্রী। সাংবাদিক রাজদীপ সরদেশাইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মমতা বলেন, বিজেপিই এরাজ্যে তৃণমূল কর্মীদের ওপর অত্যাচার করছে। টাকার লোভ দেখিয়ে ভোট কিনতে চাইছে। দাঙ্গার রাজনীতি করছে ভারতীয় জনতা পার্টি। তিনি নিজে শান্তিপূর্ণ ভোট চান। কারণ মানুষের প্রতি তাঁর পূর্ণ আস্থা রয়েছে। যে কাজ গত ১০ বছরে রাজ্যে হয়েছে তাতে নিরপেক্ষ ভোট হলে মানুষ ফের তৃণমূল সরকারকেই আরেক বার ফিরিয়ে আনবেন সে ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিঙ্গ জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।