এই জেলাতেই নবান্ন। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কার্যালয়। তবু বিধানসভায় তৃণমূলকে ভাবাচ্ছে গঙ্গার পশ্চিমকূল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলেন, তাঁকে দেখে ভোট দিতে। ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে তিনিই প্রার্থী। তৃণমূলের কাছে হাওড়া জেলার অবস্থাটা এখন আক্ষরিক অর্থেই তা-ই। হাওড়ায় একের পর এক তৃণমূল নেতা-নেত্রীরা দল ছেড়ে বিজেপি-তে যাওয়ায় ওই জেলায় বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে নতুন মুখ নিয়েই লড়তে হবে। তৃণমূলের কাছে হাওড়া এবার বড় চ্যালেঞ্জ।
লোকসভা ভোটে তৃণমূলের খারাপ ফল
হাওড়ায় লোকসভা ভোটে বেশ খারাপ রেজাল্ট ছিল তৃণমূলের। বিশেষ করে উত্তর হাওড়ায় তৃণমূল প্রায় ২ হাজার ৯০০ ভোটে পিছিয়ে পড়ে। এই উত্তর হাওড়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকেই নির্বাচিত হয়েছিলেন একদা তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্লা। মধ্য হাওড়াতেও তৃণমূলের ফল আশানুরূপ হয়নি। ওয়ার্ড ভিত্তিক ফল ধরলে, উত্তর হাওড়ার ১৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬টি ওয়ার্ডেই তৃণমূল পিছিয়ে পড়ে। সম্পূর্ণ অবাঙালি অধ্যুষিত ওয়ার্ড বলে পরিচিতি ১ নম্বরে ২ হাজার ২৫৯, ১০ নম্বরে ৭০০, ১২ নম্বরে ৪, ১৩ নম্বরে ৬ হাজার ৫০০, ১৪ নম্বরে ৯০০, এবং ১৫ নম্বরে ৮ হাজার ৫০০ ভোটের ব্যবধানে পিছিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। অন্যদিকে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ওয়ার্ড ১৬ নম্বরে তৃণমূল সাড়ে পাঁচ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের বিধানসভা ভিত্তিক ফল অনুযায়ী, বৈশালীর কেন্দ্র বালিতে মাত্র ২৯৫ ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে হাওড়া জেলার ১৬টি বিধানসভার ১৫টিতে জিতেছিল তৃণমূল।একটি আসনে জেতে বাম-কংগ্রেস জোট। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের বিধানসভাভিত্তিক ফল অনুযায়ী, ১৬টি বিধানসভার মধ্যে ১৫টিতে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। একটি আসনে এগিয়ে ছিল বিজেপি। কিন্তু এগিয়ে থাকলে ব্যবধান অত্যন্ত কম ছিল। যার নির্যাস, হাওড়ায় ভোট বেড়েছে বিজেপির।
রাজীব-লক্ষ্মী-বৈশালী-রথীনের দলত্যাগ
হুগলির মতোই হাওড়াতেও তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রবল ভাবেই। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। গেরুয়া-শিবিরে রয়েছেন বৈশালীও। হাওড়া পুরসভার প্রাক্তন মেয়র রথীন চক্রবর্তীও বিজেপিতে। লক্ষ্মী আপাতত রাজনীতির মধ্যেই নেই। তবে পরবর্তীকালে বিজেপি-তে যাবেন কি না, এখনও বলা যাচ্ছে না। মূলত হাওড়ায় রাজীব, লক্ষ্মী, রথীন ও বৈশালী বেশ পরিচিত ও শক্ত হাত ছিল তৃণমূলের। এখন বিষয় হল, হাওড়ায় পরিচিত মুখরা ছেড়ে দেওয়ায় একুশের বিধানসভা ভোটে তা হলে একেবারে নতুন মুখের উপরেই ভরসা করতে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
যদিও হাওড়া জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান অরূপ রায় আত্মবিশ্বাসী। এক সংবাদমাধ্যমকে কয়েকদিন আগে তিনি বলেন, 'হাওড়ায় ১৬টার মধ্যে ১৬টাই পাবে তৃণমূল।'
একুশের ভোটে তা হলে হাওড়ায় তৃণমূলের মুখ কারা? মমতার প্রার্থী ঘোষণার অপেক্ষা।