ঠিক হাতে গুনে একমাস, ১৬ ডিসেম্বর তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলার সভাপতি এবং আসানসোল পুরসভার প্রশাসক থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। আর ১৭ ডিসেম্বর তৃণমূল ছাড়ার ঘোষণা করেছিলেন পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক। যদিও পরের দিনই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে জিতেন্দ্র জানিয়ে দেন তিনি তৃণমূলেই আছেন। এরমধ্যে একমাস কেটে গিয়েছে। দলে থাকলেও সেই আগের গুরুত্ব হারিয়েছেন আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র। এর আগে নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে দলীয় সভার আমন্ত্রণপত্রে তাঁর নাম উধাও হয়ে গিয়েছিল। এবার জিতেন্দ্রর ছেড়ে যাওয়া পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃনমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতির পদে বসানো হল দুর্গাপুরের তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা অপূর্ব মুখোপাধ্যায়কে। জিতেন্দ্র তিওয়ারি পশ্চিম বর্ধমান জেলার সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করার পর একমাস ফাঁকাই ছিল এই পদ। তবে তিনি দলে ফিরলেও পদ আর ফিরে পেলেন না। বরং বিধান সভা নির্বাচনের ঠিক আগে পশ্চিম বর্ধমান জেলার দলের সংগঠন ধরে রাখতে মমতা বন্দোপাধ্যায় আস্থা রাখছেন শিল্পাঞ্চলের তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের উপর। এর আগে অপূর্ববাবু দুর্গাপুর পুরনিগমের মেয়র পদে ছিলেন। তিনি তৃনমুল কংগ্রেসের দুর্গাপুরের বিধায়কও হয়েছিলেন। অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় বর্তমানে দুর্গাপুর পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র পদে আছেন।
কেবল নতুন জেলা সভাপতি বেছে নেওয়াই নয় ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে একইসঙ্গে পশ্চিম বর্ধমান জেলা কমিটি পুর্নগঠন করা হয়েছে। জেলায় দলের কো-অর্ডিনেটরের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এরআগে জেলায় দু'জন কো-অর্ডিনেটর ছিলেন। দুর্গাপুর পূর্ব ও পশ্চিম বিধানসভার কো-অর্ডিনেটর হয়েছেন বিধায়ক বিশ্বনাথ পাড়িয়াল। রানিগঞ্জ ও জামুড়িয়ার কো-অর্ডিনেটর করা হয়েছে শ্রমিক সংগঠনের নেতা হরেরাম সিংকে। আসানসোল উত্তর ও দক্ষিণ বিধান সভার কো-অর্ডিনেটর হয়েছেন ভি শিবদাসন ওরফে দাসু। কুলটির বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়কে কুলটি ও বারাবনি বিধানসভার জেলা কো-অর্ডিনেটর করা হয়েছে। একইভাবে জেলার দুই মুখপাত্র হয়েছেন বিধায়ক তাপস বন্দোপাধ্যায় ও সদ্য আসানসোল পুরনিগমের পুর প্রশাসক বোর্ড থেকে বাদ পড়া অশোক রুদ্র। যদিও তাপস বন্দোপাধ্যায় ও অশোক রুদ্র আগে থেকেই জেলার মুখপাত্র আছেন। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় আসানসোলের দোর্দন্ডপ্রতাপ নেতা ও পশ্চিম বর্ধমানের তাবড় ব্যক্তিত্ব জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে ভোটের আগে দলের জেলার কোন পদে রাখা হয়নি। যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
পশ্চিম বর্ধমান জেলার দলের জেলা সভাপতি পদের পাশাপাশি আসানসোল পুরনিগমের পুর প্রশাসক পদ একইসঙ্গে ছেড়েছিলেন জিতেন্দ্র। ১৭ ডিসেম্বর প্রথমে পুরপ্রশাসক পদে ইস্তফা দেন। পরে পাণ্ডবেশ্বরে বিধায়ক কার্যালয়ে হামলার খবর আসতেই তিনি তৃণমূল ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন। তার আগের দিন অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর কাঁকসায় গিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। যদিও দল ছাড়ার পরের দিনই তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের পর জিতেন্দ্র জানিয়ে দেন, তৃণমূলেই থাকছেন, অন্য কোথাও যাচ্ছেন না। কিন্তু তারপর থেকে তাঁকে দলে সেভাবে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায়নি।
দলের সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার আগে জিতেন্দ্র তিওয়ারি তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, মমতার পরে শুভেন্দু অধিকারীই সব থেকে বড় নেতা। দলে ফিরও তাৎপর্যপূর্ণ ফেসবুক পোস্ট করতে দেখা গিয়েছিল জিতেন্দ্রকে। আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র নিজের ওয়ালে লিখেছিলেন রাজনীতিতে ফুলস্টপ বলে কিছু হয় না। সেই সময় ফের একবার প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল যে তিনি বিজেপির দিকেই ঝুঁকছেন কিনা। শুভেন্দুর সঙ্গে জিতেন্দ্রর সাক্ষাৎই কি তাঁর গ্রহণযোগ্যতা কমিয়ে দিয়েছে দলের অন্দরে, এমন প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে বিশেষজ্ঞ মহলে। কারণ বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায় বেসুরো হতেই তাঁকে দলে রাখতে মরিয়া হয়ে ঝাপাতে দেখা গেছে ঘাসফুল শিবিরকে। শতাব্দীর মানভঞ্জনের পাশাপাশি তাঁকে দলের রাজ্য সহসভাপতির পদও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জিতেন্দ্রর ক্ষেত্রে তেমন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় জিতেন্দ্র কী পদক্ষেপ করেন সেটাই দেখার। যদিও পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক দাবি করছেন, "আমাকে তো পদ থেকে সরানো হয়নি। আমি নিজেই জেলা সভাপতি ও আসানসোল পুরনিগমের পুর প্রশাসক পদ ছেড়েছিলাম। জেলা কমিটিতে না থাকলেও দলে তো আছি। দলের কাজ করছি। দলের বিধায়কও তো আছি। এই কমিটির উপর আমার পুরো আস্থা আছে। আমি তাদেরকে সবরকম সহযোগিতা করবো।" মুখে জিতেন্দ্র তৃণমূলে থাকার কথা বললেও দলবদলের হাওয়ায় তিনি কী করেন সেদিকেই এখন তাকিয়ে বাংলার রাজনৈতিক মহল।