Advertisement

এলেন না মিমি-দেবশ্রী, গরহাজির ৫ MP-MLA,'দিদি'র ঘরে কোন অশনিসঙ্কেত?

শুভেভন্দু অধিকারী ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় দল ছাড়ার আগে কয়েক মাস ধরে বেসুরো বেজেছিলেন। দলীয় সভা হোক বা মন্ত্রিসভার বৈঠক, কোনও খানেই দেখা যেত না তাঁদের। তার মধ্যে সাধারণ কর্মী থেকে দলের নেতা-মন্ত্রীরা যেভাবে শিবির বদল করছেন তাতে একুশের ভোটের আগে চিন্তা বাড়ছে বই কমছে না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। শুভেন্দু দলছাড়ার আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের জনসভা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে দেখা মেলেনি অধিকারী পরিবারের কারোর। কিন্তু দলের অন্যান্য সাংসদ-বিধায়করা কিন্তু হাজিরা দিয়েছিলেন। কিন্তু দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় যেখানে মমতা-অভিষেকের হাইভোল্টেজ সভা হল তাতেই অনুপস্থিত থাকলেন পাঁচ-পাঁচজন সাংসদ বিধায়ক।

নিজের গড় ধরে রাখতে পারবেন তৃণমূলনেত্রী?
সুমনা সরকার
  • কলকাতা,
  • 19 Feb 2021,
  • अपडेटेड 12:08 AM IST
  • দক্ষিণ ২৪ পরগনা তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি
  • সেদিকেই এখন নজর গিয়েছে বিজেপির
  • নিজের গড় ধরে রাখতে পারবেন তৃণমূলনেত্রী?

বৃহস্পতিবার রাজ্য রাজনীতি সরগরম ছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাকে ঘিরে। আর হবে নাই বা কেন? একদিকে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর অন্যদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, দু'জনেই একদিনে শক্তি পরীক্ষায় নামলেন। অমিত শাহ যখন গঙ্গাসাগর, নামখানা ও কাকদ্বীপ মাতাচ্ছেন তখন পৈলানে ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে ময়দানে নেমেছিলেন মমতা। স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে সভাও মাতালেন মমতা, কিন্তু নিজের গড় ধরে রাখা নিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারলেন কই তৃণমূলনেত্রী। কারণ, যতই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৩১টি আসনই দখল করবে তৃণমূল বলে হুঙ্কার দিন না কেন যাদের সাহায্য নিয়ে এই লড়াইয়ে নামবে দল তাদের অনেককেই এদিন দেখা যায়নি নেত্রীর পাশে। আর তা নিয়েই রাজ্য রাজনীতিতে শুরু হয়ে গেছে নতুন কানাঘুষো।

শুভেন্দু অধিকারী ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় দল ছাড়ার আগে কয়েক মাস ধরে বেসুরো বেজেছিলেন। দলীয় সভা হোক বা মন্ত্রিসভার বৈঠক, কোনও খানেই দেখা যেত না তাঁদের। তার মধ্যে সাধারণ কর্মী থেকে দলের নেতা-মন্ত্রীরা যেভাবে শিবির বদল করছেন তাতে একুশের ভোটের আগে চিন্তা বাড়ছে বই কমছে না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। শুভেন্দু দলছাড়ার আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের জনসভা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে দেখা মেলেনি অধিকারী পরিবারের কারোর। কিন্তু দলের অন্যান্য সাংসদ-বিধায়করা কিন্তু হাজিরা দিয়েছিলেন। কিন্তু দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় যেখানে মমতা-অভিষেকের হাইভোল্টেজ সভা হল তাতেই অনুপস্থিত থাকলেন পাঁচ-পাঁচজন সাংসদ বিধায়ক। বিষয়টির দিকে যেমন নজর রাখছে বিরোধী শিবির, তেমনি স্বস্তিতে নেই তৃণমূলনেত্রীও।

দুর্গা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিতর্কে দিলীপ, BJP-র মহিলা মোর্চার উত্থানে কিন্তু কপালে ভাজ মমতারও

দক্ষিণ ২৪ পরগনা শক্তি ঘাঁটি তৃণমূলের
২০০৯ সালে তৃণমূলের উত্থানের সূচনালগ্ন থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা তাদের কাছে শক্ত ঘাঁটি। এই দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেই প্রথম জেলাপরিষদ দখল করেছিল তৃণমূল। তার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি ঘাসফুল শিবিরকে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে এই জেলার চারটি আসনেই দাঁত ফোঁটাতে পারেনি বিজেপি। লোকসভা ভোটের নিরিখে বিধানসভা ভিত্তিক ফলে ৩১টি বিধানসভা কেন্দ্রেই এগিয়ে তৃণমূল প্রার্থীরা। তার আগে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে ৩১টির মধ্যে ২৯টিতে জয় পেয়েছিল তৃণমূল। তাই নীল বাড়ির ক্ষমতা দখলে রাখতে এ বারও সে রকম ফলেরই পুনরাবৃত্তি চাইছে শাসক দল। 

Advertisement

পৈলানে মমতার পাশে দেখা গেল না কাদের?
পৈলানের সভা শুরু হয় বেলা ১টায়। প্রধান বক্তা স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু সেই সভায় হাজির ছিলেন না রাজ্যের শাসক দলের  দুই সাংসদ, তিন বিধায়ক।  প্রতিমা মণ্ডল, মিমি চক্রবর্তী , জীবন মুখার্জী, দেবশ্রী রায় এবং মন্টুরাম পাখিরা। অনুপস্থিতির এই তালিকা ঘিরে ইতিমধ্যেই রাজ্য রাজনীতিতে নয়া গুঞ্জন শুরু হয়েছে। আমন্ত্রণ জানানোর পরও দেখা মেলেনি জেলার দুই সাংসদের। ছিলেন না সোনারপুর দক্ষিণ, রায়দিঘি এবং কাকদ্বীপের বিধায়করাও। যাঁদের মধ্যে আবার একজন রাজ্যের মন্ত্রী। যদিও দেবশ্রী রায় ছাড়া সবাই অনুপস্থিত থাকার কারণ জানিয়েছেন বলে তৃণমূল সূত্রে দাবি করা হচ্ছে। দেখে নেওয়া যাক, নেত্রীর সভায় না থাকার কী কারণ দর্শাচ্ছেন দলীয় সাংসদ বিধায়করা।

West Bengal Election 2021: ভোট বঙ্গে হাওয়ায় ভাসছে সৌরভ-মিঠুন-প্রসেনজিৎ! TMC-র নীল নকশা ধরেই এগোচ্ছো BJP?

প্রতিমা মণ্ডল- জয়নগরের সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল পরিজন বিয়োগের কথা বলছেন। প্রতিমাদেবীর দিন কয়েক আগে  শ্বশুরমশাই বিয়োগ হয়েছে । বাড়িতে অনেক কাজ রয়েছে। জেলা সভাপতিকে তাই তিনি জানিয়েছেন কর্মিসভায় থাকতে পারবেন না। তবে এরআগে কুলতলিতে জনসভা করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যয়। সেখানেও তাকে দেখা যায়নি। যদিও প্রতিমা মণ্ডলের অভিযোগ ছিল, তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। 

মিমি চক্রবর্তী- অনুপস্থিতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে যাদবপুরের সাংসদ মিমি চক্রবর্তীকে নিয়ে। যদিও তিনি গোয়ায় ছুটি কাটাতে গিয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। নিজের ফেসবুক পেজ এবং ইনস্টাগ্রামে নিয়মিত ছবিও পোস্ট করছেন। এদিকে দু'দিন আগেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন টলিউডের হালআমলের অন্যতম নায়ক যশ দাশগুপ্ত। টলিউডে যশের কেরিয়ার শুরু হয়েছিল মিমির বিপরীতেই। দু'জনের ভাল বন্ধুত্বও রয়েছে। গোয়ায় ছুটি কাটাচ্ছেন পার্নো মিত্রও। যিনি আবার ২০১৯ সালে বিজেপিতে যোগ দেন। দুই বিপরীত শিবিরের অভিনেত্রীর একসঙ্গে হলিডে  ভিডিও ইতিমধ্যে ভাইরালও হয়েছে। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে গেরুয়া শিবির ইতিমধ্যে নাকি মিমির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তবে এই খবরের সত্যাসত্য এখনও জানা যায়নি।

 

জীবন মুখোপাধ্যায়
সোনারপুর দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক জীবন মুখোপাধ্যায় অসুস্থতার কারণে দলনেত্রীর সভায় উপস্থিত থাকতে পারেননি বলে তৃণমূলের তরফে দাবি করা হচ্ছে।

মন্টুরাম পাখিরা
কাকদ্বীপের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরাও অসুস্থ বলে পৌলানের সভায় উপস্থিত ছইলেন না বলে জানান হচ্ছে।

দেবশ্রীর কাছে জবাব তলব
জানা যাচ্ছে অন্যান্য সাংসদ-বিধায়করা অনুপস্থিতির কারণ দর্শালেও সেই পথ মাড়াননি রায়দিঘির সাংসদ দেবশ্রী রায়। দীর্ঘদিন ধরে তাঁকে নিজের বিধানসভা এলাকাতেও দেখা যায়নি। এদিকে রাজনীতির বদলে শোভন-বৈশাখীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করে তিনি চর্চায় এসেছেন। এরআগে ২০১৯ সালে যেদিন শোভন চট্টোপাধ্যায় দিল্লিতে গিয়ে গেরুয়া শিবিরে যোগ দেন সেদিন বিজেপির সদর দফতরে হাজির হয়েছিলেন দেবশ্রীও। তখন এমন শোনা গিয়েছিল অভিনেত্রী রাজনীতিক এবার শিবির বদল করতে চলেছেন । তবে শোভন ও বৈশাখীর অপত্তিতেও নাকি তা হয়ে ওঠেনি দেবশ্রীর পক্ষে। তবে তাঁকে নিয়ে স্বস্তিতে নেই তৃণমূল শিবির। শোনা যাচ্ছে কর্মিসভায় অনুপস্থিতির পরে তাঁকে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে বলেছে তৃণমূল কংগ্রেস।

Advertisement

অভিষেকের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ
দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকেই সাংসদ হয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।  তাই জেলায় দলের ভাল ফল করানো প্রেস্টিজ ইস্যু যুব তৃণমূল সভাপতিরও।  দীর্ঘদিন এই জেলার দায়িত্বে ছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। দল বদল করে তিনি এখন বিজেপিতে। গত লোকসভা নির্বাচনেও এই জেলায় নিজেদের কর্তৃত্ব ধরে রেখেছিল তৃণমূল। কিন্তু শোভন বিজেপিতে সক্রিয় হওয়ার পর দক্ষিণ ২৪ পরগনায় পুরনো চমক ধরে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ তৃণমূলের সামনে।  যদিও পৈলানের কর্মিসভায় অভিষেক হুঙ্কার দিয়েছেন, ‘আমরা এখানে ৩১-এ ৩১ করবো।’ এদিকে বৃহস্পতিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনায় শাহের সভায় দাঁড়িয়ে একই দাবি করেছেন  বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীও। তাঁরও দাবি, 'দক্ষিণ ২৪ পরগনার সমস্ত আসন বিজেপি জিতবে'। বাংলা জয়ের পরিকল্পনা নেওয়া শাহ-নাড্ডার তৃণমূলের শক্তি ঘাঁটিকেই এখন তাই টার্গেট করছেন। ভোটের আগে গোটা রাজ্য জুড়ে এই মুহূর্তে রাজনৈতিক শিবিরে দল বদল চলছে। মমতার সভায় দলীয় সাংস- বিধায়কদের এই অনুপস্থিতি ঘিরে তাই জোর জল্পনা সব মহলে।  রাজ্যের একাবের দক্ষিণপ্রান্তের এই জেলায় বিধানসভা ভোটে গ্রামাঞ্চলের ২৬ আর শহুরে ৫টি আসন রয়েছে। রয়েছে যাদবপুরের মত হাইপ্রোফাইল কেন্দ্র। সম্প্রতি অভিষেকের নিজের লোকসভা কেন্দ্রে দলে ভাঙন দেখা দিয়েছে।  তাঁর  সভায় অনুপস্থিত ছিলেন ডায়মন্ড হারবারের বিধায়ক দীপক হালদার, মহেশতলার দুলাল দাস এবং সাতগাছিয়ার সোনালী গুহ। এঁদের মধ্যে ডায়মন্ড হারবারের বিধায়ক দীপক হালদার ইতিমধ্যেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এর আগে সাতগাছিয়াতেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় অনুপস্থিত ছিলেন দীপক হালদার ও দুলাল দাস। ইতিমধ্যে রাজ্যে আসতে চলেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। নির্বাচন কমিশনের তৎপরতা জানান দিচ্ছে, ভোট আর বেশি দূরে নয়। এই আবহে জেলায় নতুন কোনও পটপরিবর্তন হয় কিনা সেদিকেই এখন নজর সকলের। 

 

 

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement