বরকত গনিখানকে যদি 'গৌড়াধিপতি' বলা যেত, তা হলে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সিকে (Priyaranjan Dasmunshi) উত্তর দিনাজপুরের (North Dinajpur) 'বেতাজ বাদশা' বললে অত্যুক্তি হয় না। ২০০৮ সালে প্রিয়রঞ্জন গভীর কোমায় চলে যাওয়ার পরেও, স্রেফ 'প্রিয়দা' লেগাসিতেই দীপা দাশমুন্সি একাধিক ভোট-বৈতরণী পেরিয়েছেন। ষষ্ঠ দফায় ভোট উত্তর দিনাজপুরে। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি নেই। তাত্পর্যপূর্ণ ভাবে একুশের নির্বাচনে বিশেষ সক্রিয় দেখা যাচ্ছে না দীপা দাশমুন্সিকেও। তবু উত্তর দিনাজপুরের ভোটের আবহে প্রিয়-প্রসঙ্গ অবধারিত ভাবেই ওঠে।
আরও পড়ুন: জ্যোতিবাবুকে ফোন করে গনিখান বললেন, 'আপনি আমার গাড়িতে কর্মসূচিতে যাবেন'
জননেতা হিসেবে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির জনপ্রিয়তা ছিল প্রশ্নাতীত। আবার একই ভাবে নানা বিতর্কও রয়েছে তাঁকে ঘিরে। এমনই বিতর্কের একটি কাহিনি, যা বর্তমান বঙ্গ-রাজনীতিতেও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
আরও পড়ুন: মির জাফর 'বিশ্বাসঘাতক'? সিরাজের পতনে কিন্তু কাঁদেনি মুর্শিদাবাদ!
১৯৮৭ সালের বিধানসভা নির্বাচন। হঠাত্ রাজ্যে চর্চা শুরু হল। জ্যোতি বসুর বিকল্প হিসেবে নাকি তুলে ধরা হয়েছে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সিকে। কে তুলে ধরল? কংগ্রেস হাইকম্যান্ড? তত্কালীন কংগ্রেস সভাপতি রাজীব গান্ধি? প্রদেশ কংগ্রেস? না। কোনও অফিসিয়াল ঘোষণা ছিল না। অথচ চর্চা চলছে, প্রিয়রঞ্জনই নাকি জ্যোতি বসুর মতো হেভিওয়েটের বিকল্প মুখ্যমন্ত্রী মুখ। স্লোগান উঠল, 'এই হতাশা ভাঙতে চাই, নতুন বাংলা গড়তে চাই।'
প্রশ্ন, তা হলে প্রিয়রঞ্জনকে কে প্রজেক্ট করল? তদন্ত করে জানা গেল, মিডিয়াকে কাজে লাগিয়েছিলেন তিনি। সংবাদমাধ্যমকে প্রচুর তথ্য দিয়ে নিজের প্রচার চালিয়েছিলেন। সে বার ভোটে কী ঘটেছিল? কংগ্রেসের রাজ্যে আসন ছিল ৬১। ১৯৮৭ সালে ভোটের ফল বেরনোর পর দেখা গেল, আসন কমে হয়ে গিয়েছে ৪১।
প্রিয়রঞ্জন সে বার রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিতে বলেছিলেন, সারা রাজ্যে ২ টাকা কিলোদরে চাল, ৫ বছরে ১০ লক্ষ বেকারের চাকরি, বেকার যুবকদের ব্যাঙ্ক থেকে কম সুদে ৫ লক্ষ টাকা ঋণ। প্রিয়রঞ্জনের এই সব প্রতিশ্রুতি দেখে রাজ্যের তত্কালীন মুখ্যসচিব রথীন সেনগুপ্ত বলেছিলেন, 'এবার বেকার খাতায় নাম তুলবো। প্রিয়র দেওয়া ৫ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্কে রেখে দেব। সুদের টাকা ভাল ভাবে সংসার চলবে।'
তবুও 'দশ জনের একজন হয়ে ওঠা'র নেতৃত্বসুলভ রাজনীতিই প্রিয়রঞ্জনকে 'প্রিয়' করে তুলেছিল অল্প সময়েই। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় প্রিয়রঞ্জনকে বলতেন 'দ্বিতীয় নেতাজি।' কারণ বুর্জোয়া জমিদারি প্রথায় অভ্যস্ত কংগ্রেসে প্রিয়রঞ্জন ছিলেন আক্ষরিক অর্থেই ছিলেন অন্য ঘরানার। তিনি নিজে ছাত্র-রাজনীতি থেকে উঠেছিলেন, তাই প্রিয়রঞ্জনের হাতিয়ার ছিল ছাত্র-যুবরা। বামপন্থী অবস্থান নিয়ে বামপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াই।
ঋণ স্বীকার: সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত