
বিহার বিধানসভা ভোটের পূর্বে মহিলাদের অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা দেওয়া নিয়ে সমাজ মাধ্যম এখনও সরগরম। এই আবহে সোশ্যাল মিডিয়ায় দুটি পৃথক ভিডিও ক্লিপ জুড়ে শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, এগুলি বিহারের দৃশ্য। এবং লেখা হচ্ছে যে ভোটের আগে ১০ হাজার টাকার লোভ দেখিয়ে এখন তাদের সম্পত্তিতে বুলডোজার চালানো হচ্ছে।
এই পোস্টের প্রথম ভিডিওতে এক মহিলাকে দেখা যাচ্ছে একটি বুলডোজার লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে। এরপর সেই মহিলাকে বলপূর্বক ধরে নিয়ে যাচ্ছেন নিরাপত্তাকর্মীরা। দ্বিতীয় ভিডিওটি কোনও বাজার এলাকার। যেখানে নিচে পড়ে থাকা আলু ও সবজির উপর বুলডোজার চালানো হচ্ছে।
ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “বিহার ভোট হয়েছে এক মাস ও হলনা, দশ হাজারের লোভ দেখিয়ে ভোট নিয়ে সরকারে এসে মানুষ এর কী অবস্থা করছে। মোদী জী ভোটের আগে বিহার এ বলে গেলেন এক কোটি চাকরি দেবে যুবক দের। ভোট এর পর এই তো দেখতেই পাচ্ছি কী দেওয়া হচ্ছে। বলি কি বাংলার মানুষ বোকা নয় জুমলা দেখিয়ে কিছু করা যায়না।”
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, দ্বিতীয় ভিডিওটি বিহারের হলেও প্রথম ভিডিওটির সঙ্গে বিহারের কোনও সম্পর্ক নেই। ভিডিওটি আসলে নেপালের।
সত্য উদঘাটন
ভাইরাল হওয়া পোস্টে থাকা প্রথম ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট সংগ্রহ করে তার রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে ওই একই ভিডিও সরোজ কুমার রেগমি নামের এক নেপালি সমাজকর্মীর ফেসবুক পোস্টে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটি তিনি চলতি বছর ১৫ অগস্ট পোস্ট করেছিলেন। যা থেকে পরিষ্কার হয়ে যায় যে ভিডিওটি বিহারের ভোট পরবর্তী কোনও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
ভিডিওটি পোস্ট করে তিনি নেপালি ভাষায় যে ক্যাপশন লিখেছিলেন তার বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, “মনোহরার একটি অবৈধ বস্তিতে মেট্রোপলিটন সিটির বুলডোজারে পাথর ছুড়ছেন এক মহিলা। কোনও বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়াই অবৈধ বস্তি স্থাপন করা সঠিক নয়।”
নেপাল ভাইবস নামের একটি নেপালি ফেসবুক পেজেও এই একই ভিডিও পাওয়া যায় যা ১৫ অগস্ট পোস্ট করা হয়েছিল।
এই বিষয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করা হলে ২০২৫ সালের ১৫ অগস্ট একটি নেপালি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাঠমান্ডু শহরের মনোহরা এলাকায় একটি অবৈধ বস্তি সরাতে বুলডোজারের ব্যবহার করা হয়। মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রধান রাজুনাথ পান্ডের নেতৃত্বে এই বুলডোজার চালানো হয়। উচ্ছেদ সরানোর সময় পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়দের বচসা বাঁধে।
ফলে সবমিলিয়ে বুঝতে বাকি থাকে না যে পোস্টে থাকা ভিডিও ক্লিপের প্রথম অংশটি আসলে নেপালের, বিহারের নয়।
এরপর দ্বিতীয় ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট সংগ্রহ করে রিভার্স সার্চ করা হলে ওই একই ভিডিও একাধিক ইনস্টাগ্রাম চ্যানেলে পাওয়া যায় যা গত ২৪ নভেম্বর পোস্ট করা হয়েছিল। পোস্টের বিবরণ অনুযায়ী, এই ভিডিওটি পটনা শহরের দীঘা ঘাট এলাকার যেখানে পটনা পুরনিগমের পক্ষ থেকে বুলডোজার চালানো হয়েছে।
এই বিষয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করা হলে বেশ কিছু হিন্দি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে নিশ্চিত করা হয় যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই অবৈধ দখলের উপর বুলডোজার অ্যাকশন শুরু করা হয়েছে।
ভাইরাল ভিডিও-র শেষ অংশে রাস্তার ধারে ‘SRI Computer Classes’ লেখা একটি ব্যানারের দেখা মেলে। গুগল ম্যাপে ওই জায়গাটি খোঁজা হলে পটনার দীঘা এলাকার যাদব কলোনিতে ঠিক ওই কম্পিউটার সেন্টার খুঁজে পাওয়া যায়। ভাইরাল ভিডিওতে থাকা আশেপাশের দোকালগুলির সঙ্গে গুগল ম্যাপের অবস্থানও হুবহু মিলে যায়।
ফলে বুঝতে বাকি থাকে না ভাইরাল পোস্টের দ্বিতীয় ভিডিওটি বিহারের সাম্প্রতিক ঘটনার হলেও প্রথম ভিডিওটির সঙ্গে বিহারের কোনও সম্পর্কই নেই। আসল ভিডিওটি নেপালের।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে বিহারে ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসার পর কীভাবে নাগরিকদের সঙ্গে ব্যবহার করছে সরকার।
দ্বিতীয় ভিডিওটি বিহারের সাম্প্রতিক ঘটনা হলেও প্রথম ভিডিও ভারতের নয়। ভিডিওটি নেপালের মনোহরা এলাকায় একটি অবৈধ বস্তি উচ্ছেদের।