গত শনিবার চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পালের নেতৃত্বে অসমের গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত হয় ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে সংসদীয় যৌথ কমিটির (জেপিসি) বৈঠক। অন্যদিকে এই বিলের বিরোধীতা করে আসন্ন সংসদ অধিবেশনের আগে আগামী ২৪ নভেম্বর দিল্লিতে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা করেছে জয়পুরের একটি মুসলিম সংগঠন।
আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, ভারতে ওয়াকফ বোর্ডের মোট সম্পত্তি সংক্রান্ত একটি পোস্ট। যেখানে দাবি করা হচ্ছে, ভারতে ওয়াকফ বোর্ডের কাছে যে পরিমাণ সম্পত্তি আছে তার আয়তন পাকিস্তানের আয়তনের থেকেও বড়।
উদাহরণস্বরূপ, কিছু ফেসবুক ব্যবহারকারী নিজেদের ওয়ালে লিখেছেন, “পাকিস্তানের আয়তন ৮.৮১ লাখ বর্গকিলোমিটার। ওয়াকফ বোর্ডের আয়তন ৯.৪০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার। একটি পাকিস্তান তৈরি হয়েছিল দেশ ভাগ করে দেশের বাইরে আর অন্যটি তৈরি হয়েছে দেশের ভেতরে।” (সব বানান অপরিবর্তিত।)
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভারতে ওয়াকফ বোর্ডের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৯.৪০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার নয়। কেন্দ্রের রিপোর্ট অনুযায়ী, আসলে এটি ৯.৪০ লক্ষ একর, যা প্রায় ৩,৮০৪ বর্গ কিলোমিটারের সমান। অন্যদিকে পাকিস্তানের মোট আয়তন ৮,৮১,৯১৩ বর্গ কিলোমিটার, যেটি ভারতে ওয়াকফ বোর্ড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সম্পত্তির চেয়ে ২৩১ গুণ বড়।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
ভাইরাল দাবির সত্যতা জানতে এই সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চ করলে চলতি বছরের ৫ নভেম্বর একটি এক্স হ্যান্ডেলে ইংরাজিতে এই একই দাবি-সহ একটি পোস্ট পাওয়া যায়। তবে পোস্টটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করার সময় আমরা সেটির কমেন্টে সেকশনে অন্য এক ব্যবহারকারীর তরফে একটি মন্তব্য দেখতে পাই। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, “পাকিস্তানের আয়তন ৮.৮ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার। অন্যদিকে ওয়াকফ বোর্ডের আয়তন ৮.৮ লাখ একর (কিমি নয়)।”
এরপর উক্ত সূত্র ধরে পরবর্তী সার্চ করলে চলতি বছরের ৮ আগস্ট দ্য ইকোনমিক টাইমসে এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, রেলওয়ে ও প্রতিরক্ষা দপ্তরের পরে ভারতে তৃতীয় বৃহত্তম জমির মালিক হল ওয়াকফ বোর্ড। সারা দেশে ৮,৭০,০০০টি সম্পত্তি মিলিয়ে এর মোট আয়তন ৯,৪০,০০০ একর। যার আনুমানিক মূল্য ১.২ লক্ষ কোটি টাকা।
এরপর পরবর্তী সার্চে চলতি বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ‘ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৪-এর ব্যাখ্যা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ভারত সরকারের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রকের তরফে প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনের ৬ নম্বর পয়েন্টে উল্লেখ করা হয়েছে, "দেশ জুড়ে ৮.৭ লক্ষ সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণ করে ওয়াকফ বোর্ড। যার মোট আয়তন ৯.৪ লক্ষ একর এবং আনুমানিক মূল্য ১.২ লক্ষ কোটি টাকা। বিশ্বের মধ্যে ভারতেই সব থেকে বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী এবং ভারতীয় রেলওয়ের পরে ওয়াকফ বোর্ড ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম জমির মালিক।"
এরপর আমরা ৯.৪ লক্ষ একর সম্পত্তিকে বর্গ কিলোমিটারে রূপান্তর করলে দেখতে পাই তার মোট পরিমাণ হচ্ছে ৩,৮০৪ বর্গ কিলোমিটারের সমান। অন্যদিকে পাকিস্তানের মোট আয়তন ৮,৮১,৯১৩ বর্গ কিলোমিটার। সেই হিসাবে ভারতের ওয়াকফ বোর্ডের দ্বারা পরিচালিত মোট সম্পত্তির থেকে পাকিস্তানের আয়তন ২৩১ গুণ বেশি।
এরপর এ বিষয়ে আরও জানতে আমরা কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলের উন্নয়ন কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ মহম্মদ আলী খানের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান, “ভারতে ওয়াকফ বোর্ডের মোট সম্পত্তির পরিমাণ পাকিস্তানের মোট আয়তনের চেয়ে বেশি বলে যে দাবি করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ইতিমধ্যেই ভারত সরকারের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রকের তরফে ওয়াকফ বোর্ডের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রকাশ করা হয়েছে এবং সেই তথ্যটিই সঠিক। সাধারণ মানুখে বিভ্রান্ত করার লক্ষ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক মিথ্যে দাবি করছে।” উত্তরপ্রদেশ সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান জফর আহমদ ফারুকীও আমাদের এই একই তথ্য জানিয়েছেন।
এর থেকে প্রমাণ হয় যে ভারতে ওয়াকফ বোর্ডের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৯.৪০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার নয় বরং ৯.৪০ লক্ষ একর। যা পাকিস্তানের মোট আয়তনের চেয়ে ২৩১ গুণ ছোট।
ভারতে ওয়াকফ বোর্ডের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৯.৪০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার। যা পাকিস্তানের মোট আয়তনের থেকেও বড়।
কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে ওয়াকফ বোর্ডের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৯.৪০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার নয় বরং ৯.৪০ লক্ষ একর। যা পাকিস্তানের মোট আয়তনের চেয়ে ২৩১ গুণ ছোট।