
বিহার বিধানসভা নির্বাচনে কোনও নির্দল প্রার্থী কি ভোটে দাঁড়িয়ে ‘শূন্য’ ভোট পেয়েছেন? এমন প্রশ্ন উঠছে কারণ সোশ্যাল মিডিয়ায় এক মহিলার একটি ভিডিও খুব ভাইরাল হচ্ছে যেখানে তাঁকে এমন দাবি করতে শোনা যাচ্ছে। যদিও কোন আসনের নির্দল প্রার্থী শূন্য ভোট পেয়েছেন সেটা তিনি বলছেন না। কিন্তু এই ভিডিওটির মাধ্যমে অনেক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোট চুরির অভিযোগ তুলছেন।
ভিডিওতে এই মহিলাকে ইংরেজি ও হিন্দি মিশিয়ে বলতে শোনা যাচ্ছে যে, “অনেকের মনে হচ্ছে যে আমরা হেরে গেছি। কিন্তু অনেক জিনিস খুব পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে। যদি কোনও নির্দল প্রার্থী শূন্য ভোট পান, তাহলে তিনি কি তিনি নিজেকেও ভোট দেননি? ভাবার মতো প্রশ্ন। ভাবুন, সবার ভাবা উচিত, যে কী হয়েছে?”
এই ভিডিওটি পোস্ট করে অনেকেই দাবি করছেন, এই মহিলা নিজে একজন নির্দল প্রার্থী ছিলেন যিনি একটিও ভোট পাননি। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “বিহারের একজন নির্দল প্রার্থী ছিলেন ইনি এই বিধানসভা নির্বাচনে, পেয়েছেন সর্ব সাকুল্যে "০" ভোট, আজ্ঞে হ্যাঁ, মোট শূণ্য টি ভোট পেয়েছেন, অর্থাৎ ইনি নিজেও নিজেকে ভোট টা দেন নি (বিজেপির পোষ্য নির্বাচন কমিশনের হিসাব মতে), ভাবুন, ভোট চুরির লেভেল টা, চুরি না ডাকাতি নাকি লুটপাট, বোঝা দায়, ভারতের ইতিহাসে এহেন চুরি ইংরেজরাও কখনো করেছিলো কিনা কেউ জানে না, সিস্টেম কে পুরো কিনে নিয়েছে এরা। মানুষ যদি না জাগে এরা সব শেষ করে দেবে, সব। আপনার বাড়ি ঘর, আপনি প্রবেশ করতে পারবেন না ওদের অনুমতি ছাড়া, এই দিন বেশি দূরে না।”
তবে তাঁর কথা থেকে এটা স্পষ্ট হচ্ছে না যে তিনি কোনও একটি বুথে হওয়া ভোটদান নিয়ে কথা বলছেন নাকি কোনও বিধানসভা কেন্দ্রে হওয়া মোট ভোট নিয়ে বলছেন। কিন্তু ভিডিওটির নিচে কিছু কমেন্টস পড়লে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে অনেকেই একে নির্বাচন কমিশনের কারচুপি বলে মনে করছেন। কেউ কেউ তো তাঁকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যাওয়ারও পরামর্শ দিচ্ছেন।
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে এই মহিলা কোনও নির্দল প্রার্থী নয়। তিনি শূন্য ভোটও পাননি। আর নির্বাচন কমিশনের ফলাফলে কোনও নির্দল প্রার্থী শূন্য ভোট পাওয়ার কোনও প্রমাণ নেই।
সত্য উন্মোচন
যদি বিহার বিধানসভা নির্বাচনে কোনও নির্দল প্রার্থী সত্যি শূন্য ভোট পেতেন, তাহলে এটি একটি চমকপ্রদ ঘটনা হতো এবং এই বিষয়ে কোনও না কোনও খবর অবশ্যই প্রকাশিত হত। কিন্তু কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে খুঁজেও আমরা এমন কোনও খবর খুঁজে পাইনি। ভাইরাল ভিডিওর স্ক্রিনশটগুলি রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে খুঁজে আমরা আসল ভিডিওটি First Bihar Jharkhand-এর এক্স হ্যান্ডেলে পাই। পোস্টের ক্যাপশনে উল্লেখ পায় যে এই মহিলা মুন্না শুক্লার মেয়ে শিবানী শুক্লা।
এই বিষয়ে সার্চ করা হলে একাধিক রিপোর্ট পাওয়া যায়, যার থেকে জানা যায় যে আরজেডি এই নির্বাচনে মুন্না শুক্লার মেয়ে শিবানী শুক্লাকে লালগঞ্জ থেকে প্রার্থী করেছিল। মুন্না শুক্লা লালগঞ্জের প্রাক্তন বিধায়ক, যিনি বর্তমানে জেলে আছেন।
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে লালগঞ্জ আসনের ফলাফল খতিয়ে দেখলে পরিষ্কার হয়ে যায় যে শিবানী শুক্লা নির্দল প্রার্থী ছিলেন না, আর তিনি শূন্য ভোটও পাননি।
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, শিবানী শুক্লা ৯৫ হাজার ৪৮৩টি ভোট পেয়েছিলেন। অন্যদিকে বিজেপি প্রার্থী সঞ্জয় কুমার সিং ১ লাখ ২৭ হাজার ৬৪০টি ভোট পেয়েছিলেন। যে কারণে শিবানী ৩২ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে হেরে যান।
কোনও নির্দল প্রার্থী কি শূন্য ভোট পেয়েছেন?
এই দাবির সত্যতা জানতে আমরা নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে বিহারের এক-একটি আসনের ফলাফল আলাদা-আলাদা ভাবে দেখা শুরু করি। কিন্তু সর্বসাকুল্যে ২৪৩টি আসনের ভোটের তথ্য দেখার পরেও আমরা এমন কোনও আসন পাইনি যেখানে কোনও নির্দল প্রার্থী শূন্য ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে উপলব্ধ ফলাফল অনুযায়ী, নির্দল প্রার্থী হিসেবে গয়া টাউন বিধানসভা আসনের শিবম কুমার সিনহা সবচেয়ে কম, ৯০টি ভোট পেয়েছিলেন। অন্যদিকে কোনো দলের নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে লড়ে গয়া টাউন আসনের সমাজবাদী লোক পরিষদ প্রার্থী মুন্না কুমার সবচেয়ে কম, ৯৮টি ভোট পেয়েছিলেন।
সবমিলিয়ে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, বিহারে কোনও নির্দল প্রার্থী একটিও ভোট না পাওয়ার দাবির কোনও সত্যতা নেই।
এই ভিডিওতে বিহার বিধানসভা নির্বাচনের এক নির্দল প্রার্থীকে দেখা যাচ্ছে যিনি একটিও ভোট পাননি।
এই ভিডিওটি বিহারের লালগঞ্জ আসনের আরজেডি প্রার্থী শিবানী শুক্লার, যিনি ৯০ হাজারেরও বেশি ভোট পেয়েছিলেন। এমন কোনও নির্দল প্রার্থী নেই যিনি একটিও ভোট পাননি।