
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এবিপি আনন্দের একটি ভিডিও প্রতিবেদনের ক্লিপ বেশ ভাইরাল হয়েছে। ক্লিপটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দাবি করা হচ্ছে যে, বঙ্গে ভোটার তালিকায় সংশোধনী বা SIR (Special Intensive Revision)-এর আবহে এ বার পরপর দলীয় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ত্যাগ করেছেন একের পর এক বিধায়ক। ভিডিওটি পোস্ট করে একে এখনকার ঘটনা বলে দাবি করা হয়েছে।
ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “বিজেপি নেতা সুব্রত ঠাকুর, অশোক কীর্তনীয়া পর অসীম সরকার দলের গ্রুপ ছাড়লেন। খেলা জমে গেছে। যাই হোক কাল থেকে বিজেপির কিছু নেতা নেত্রীরা SIR শুরু হওয়ার জন্য লাড্ডু বিতরণ করছে,, সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করে নাচানাচি করছে তাদের উদ্দেশ্যে আরো একটা ভবিষ্যৎ বাণী করি,, কটাদিন অপেক্ষা কর দেখবি তৃণমূল কংগ্রেস কে নিঃস্ব করতে গিয়ে নিজেরাই সম্পূর্ণ খালি হয়ে গেছিস,, থেকে যাবে ওই তোদের সবেধন নীলমণি শুভেন্দু ভোতনাটা...।আফসোস তৃণমূলের ভোটার কমাতে গিয়ে বিজেপি দলের নেতা কমে গেলো গো। তিল তিল করে নেত্রীর রক্তে সঞ্চিত # হয়ে #তৃণমূল কংগ্রেসের জন্ম হয়েছে,, তাঁর ক্ষতি করা এতো সহজ নয়..জয় বাংলা।”
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে এবিপি আনন্দের এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক কোনও ঘটনার নয়। এটি ২০২১ সালের এবং এর সঙ্গে SIR প্রক্রিয়ার কোনও সম্পর্ক নেই।
সত্য উন্মোচন
ভাইরাল ভিডিওটির বিষয়ে কিছু কিওয়ার্ড সার্চ করা হলে এবিপি আনন্দের ইউটিউব চ্যানেলে ওই একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছিল ২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বর। এর থেকেই প্রাথমিক বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায় যে ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়কার নয়।
ভিডিওটির বিবরণে আরও লেখা হয়, “সায়ন্তনের পর বিজেপি আরও ‘বিদ্রোহ’, গ্রুপ ছাড়লেন একাধিক বিধায়ক। বিজেপির হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছাড়লেন একাধিক বিধায়ক। গ্রুপ ছাড়লেন বনগাঁ উত্তর, গাইঘাটা, হরিণঘাটার বিজেপি বিধায়ক। গ্রুপ ছাড়লেন রানাঘাট দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী।‘রাজ্য কমিটিতে প্রতিনিধিত্ব নেই মতুয়াদের, তারই প্রতিবাদ’।হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বেরিয়ে ঘনিষ্ঠমহলে দাবি বিধায়কদের: সূত্র।গ্রুপ ছাড়লেন বনগাঁ উত্তরের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া। গ্রুপ ছাড়লেন গাইঘাটার বিজেপির বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর। গ্রুপ ছাড়লেন হরিণঘাটার বিজেপি বিধায়ক অসীম সরকার।”
এখানেই উল্লেখ্য, বিজেপি তৎকালীন বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী বর্তমানে তৃণমূলে রয়েছেন। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন, এবং রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা আসন থেকেই উপনির্বাচনে জয়ী হন।
অন্যদিকে, পরপর বিজেপি বিধায়কদের দলীয় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছাড়ার বিষয়ে সার্চ করা হলে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত একাধিক রিপোর্ট পাওয়া যায়। নিউজ ১৮, এবং হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার মতো সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরে লেখা হয়, বিজেপির তরফে যে রাজ্য কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল, সেই কমিটিতে সেই ভাবে মতুয়া প্রতিনিধিত্ব হয়নি। মতুয়ারা যোগ্য পদ পাননি। দেখা যায় যে রাজ্য সম্পাদক পদে অনেক বিধায়ককেই অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে, কিন্তু তাঁদের মধ্যে এই পাঁচ বিধায়ক নেই।
অর্থাৎ বুঝতে বাকি থাকে না, ২০২১ সালের একটি প্রতিবেদনের ভিডিওকে বর্তমানে সাম্প্রতিক ঘটনা বলে বিভ্রান্তিকর দাবি ছড়ানো হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
SIR প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, এর মধ্যেই বিজেপির হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ত্যাগ করে বেরিয়ে এলেন একাধিক বিজেপি বিধায়ক।
এবিপি আনন্দের এই খবরটি ২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বরের, সাম্প্রতিক কোনও ঘটনার নয়।