পহেলগাঁওয়ে নৃশংস জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ২৮ জন সাধারণ পর্যাটক। ধর্মীয় পরিচয় জানার পর বুকে একের পর গুলি করে হত্যার অভিযোগ। আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে। যেখানে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ এবং ভারতীয় সেনার যৌথ বাহিনীকে অস্ত্রধারী মুখ ঢাকা দুই ব্যক্তিকে প্রথমে ধাওয়া এবং পরবর্তীতে স্ট্রেচারে করে তাদের দেহ বয়ে আনতে দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, পহেলগাঁও হামলার জবাবে জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে অভিযান শুরু করেছে ভারতীয় সেনা। উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “ভারতীয় সেনার অপারেশন শুরু। দুই জিহাদীর ৭২ হুর প্রাপ্তি হলো। ভারত মাতা কি জয় 💪💪 #indianarmy #SaveHindus”
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওতে পহেলগাঁও হামলার পর জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনার অভিযানের দৃশ্য নয়। বরং সেটি চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি জম্মু-কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার বিজবিয়ারা রেল স্টেশনে কাশ্মীর পুলিশ ও সিআরপিএফ জওয়ানদের যৌথ মক ড্রিলের ভিডিও।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল ভিডিওর দাবিটি সন্দেহজন। করাণ ভিডিওর শেষ অংশে সেখানে উপস্থিত পুলিশ আধিকারিক ও সেনা বাহিনীর সদস্যদের হাসিমুখে নিজেদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। যদি সেটি পহেলগাঁও হামলার জবাবে সেনা বাহিনী এবং পুলিশের তরফে সন্ত্রাসীদের উপরে অভিযানের কোনও ভিডিও হতো সেক্ষেত্রে এমনটা হওয়া সত্যিই অস্বাভাবিক। যা থেকে অনুমান করা যায় যে, ভিডিওটি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনার আসল অভিযান নয় বরং কোনও মক ড্রিলের দৃশ্য হতেও পারে।
এবিষয়ে নিশ্চিত হতে ভাইরাল ভিডিওটি নিয়ে অনুসন্ধান চালালে আমরা সেখানে ‘SRK FILMS’ নামক একটি লোগো দেখতে পাই। সেই সূত্র ধরে একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করলে ‘SRK FILMS’এর ফেসবুক পেজটি খুঁজে পাওয়া যায়। পেজটি ভালো করে অনুসন্ধান চালালে আমরা দেখতে পাই ২০২৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ওই পেজ থেকেই ভাইরাল ভিডিওটি প্রথম আপলোড করা হয়েছিল।
ভিডিওর ক্যাপশন অনুযায়ী, সেটি ২০২৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি জম্মু-কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার বিজবিয়ারা রেল স্টেশনে অনন্তনাগ (কাশ্মীর) পুলিশ ও সিআরপিএফ জওয়ানদের যৌথ মক ড্রিলের দৃশ্য। জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সিআরপিএফ-এর সাহায্যে এই মক ড্রিল পরিচালনা করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন, ডিআইজি এসকেআর শ্রী জাভিদ ইকবাল মাটু, ডিআইজি সিআরপিএফ শ্রী কে এস দেসওয়াল, অনন্তনাগের এসএসপি ড. জি ভি সন্দীপ চক্রবর্তী, এসপি ওপিএস অনন্তনাগ শ্রী ফুরকান কাদির, এসপি এইসকিউআরএস অনন্তনাগ শ্রী সাজাদ আহমেদ-সহ অনেকেই। Excelsior News ও Kashmir News Service-এর ইউটিউব চ্যানেলেও প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদন থেকেও এই একই তথ্য পাওয়া যায়। পাশাপাশি SRK FILMS-এর প্রধান তথা কাশ্মীরি সাংবাদিক ইস্তিয়াক সফিও ভাইরাল ভিডিওটি মক ড্রিলের দৃশ্য বলে আমাদের নিশ্চিত করেছেন।
তবে এখানে উল্লেখ্য, পহেলগাঁও হামলার পর দিন অর্থাৎ গতকাল জম্মু-কাশ্মীরের বারামুলা জেলার উরিতে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতে ঢোকার চেষ্টা করার সময় সেনা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে দুই জঙ্গি। বুধবার সেনার তরফে বিবৃতি দিয়ে এ কথা জানানো হয়েছে। সেনা সূত্রে খবর, বুধবার অন্তত ২-৩ জন জঙ্গি বারামুলার উরিতে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছিল। ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই সেখানে পৌঁছায় ভারতীয় সেনা এবং গুলির লড়াইয়ে ওই দুই জঙ্গির মৃত্যু হয়। দুই জঙ্গির কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে আগ্নেয়াস্ত্র এবং কার্তুজ মিলেছে বলে জানানো হয়েছে সেনাবাহিনীর তরফে।
এর থেকে স্পষ্ট হয় যে, পহেলগাঁও হামলার পর দিন উরিতে সেনা বাহিনীর তরফে দুই জঙ্গিকে খতম করা হলেও ভাইরাল ভিডিওটি সেই অভিযানের নয় বরং একটি মক ড্রিলের দৃশ্য।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, পহেলগাঁও হামলার জবাবে জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে অভিযান শুরু করেছে ভারতীয় সেনা।
ভাইরাল ভিডিওটি চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি জম্মু-কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার বিজবিয়ারা রেল স্টেশনে কাশ্মীর পুলিশ ও সিআরপিএফ জওয়ানদের যৌথ মক ড্রিলের দৃশ্য।