ফ্যাক্ট চেক: ভারতের দ্বারা পাকিস্তানী বায়ুসেনা ঘাঁটি ধ্বংসের দাবিতে ছড়ানো হলো AI নির্মিত ভিডিও 

একাধিক ভাঙাচোরা যুদ্ধবিমানের দৃশ্য-সহ বায়ুসেনা ঘাঁটির ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনের মাধ্যমে ইঙ্গিত করা হচ্ছে যে এটি সেই প্রমাণ যা অনেকেই দেখতে চাইছিলেন। কেউ কেউ ভিডিওটি পোস্ট করে লিখছেন, "দেশদ্রোহী সিপিআইএম মাকু গুলো প্রমাণ চাইছিল না....।"

কেউ আবার একই ভিডিও পোস্ট করে লিখেছেন, "দেশদ্রোহী সিপিআইএম মাকু গুলো প্রমাণ চাইছিল না....তোমাদের প্রাণভমরা পাকিস্তান।" ভিডিওটির ব্যাকগ্রাউন্ডে একটি কণ্ঠস্বরও শোনা যাচ্ছে যা বলছে, "ভারতের আক্রমণে পাকিস্তানের এয়ারবেসের অবস্থাটা দেখুন। বাংলাদেশ রেডি থাকুন। সারা বিশ্বকে এই ছবিটা শেয়ার করবেন।" 

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভারতের আঘাতে পাকিস্তানের একাধিক বায়ুসেনা ঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলেও এই ভিডিওটি এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তৈরি। এবং এখানে ক্ষতির পরিমাণ অত্যন্ত অতিরঞ্জিত। 

সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে

ভিডিওটি খুব গভীরভাবে লক্ষ্য করা হলে এতে এমন কিছু বিষয় নজরে আসে যা এর সত্যতা নিয়ে সংশয় জাগায়। যেমন, ভিডিওটির চার সেকেন্ডের মাথায় যে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি যুদ্ধবিমান দেখা যাচ্ছে, তার দুটি ইঞ্জিনের আকার ও আকৃতি ভিন্ন। দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট যে কোনও ধরনের বিমানেই এমনটা হওয়া অসম্ভব ও অবাস্তব। 

এর থেকে আন্দাজ করা যায় যে ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তৈরি করা হয়ে থাকতে পারে। এরপর ভাইরাল ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে গুগল লেন্সের মাধ্যমে খোঁজা হলে ওই একই ভিডিও '3amelyon' নামের একটি ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে পাওয়া যায়। 

সেই হ্যান্ডেলের শুরুতেই লেখা ছিল যে এআই সৃষ্ট কন্টেন্ট সেখানে পোস্ট করা হয়। হ্যান্ডেলটিতে একই ধরনের এয়ারবেস ধ্বংস হওয়ার আরও একাধিক একই ধরনের ভিডিও রয়েছে যা এখানে, এখানে, এখানে দেখা যাবে। এর থেকে আন্দাজ করে নেওয়া যায় যে ভিডিওটি খুব সম্ভবত এআই নির্মিত। এই আলোচ্য ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছিল ১৯ মে। 

এরপর cantilux.com নামের একটি এআই যাচাইকারী ওয়েবসাইটে ওই ভিডিওটি পরীক্ষা করা হলে ফলাফল আসে যে এটি ৮৭ শতাংশই এআই দ্বারা তৈরি। 

প্রসঙ্গত, গত ১৪ মে নিউ ইর্য়ক টাইমস্ একটি খবর প্রকাশ করে যেখানে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তোলা হাই ডেফিনেশন ছবিতে স্পষ্ট হয়ে যায় যে পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি বায়ুসেনা ঘাঁটি কীভাবে এবং কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে সেখানে এটাও দেখানো হয় যে পাকিস্তান ভারতের কোনও বায়ুসেনা ঘাঁটি সেভাবে ক্ষতি করতে পারেনি।

এর আগে এই একই ভিডিওটি ছড়িয়ে দাবি করা হয়েছিল যে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা নাকি ইসরায়েলের একটি এয়ারবেস ধ্বংস করে দিয়েছিল। তখন একটি আরবিক রিপোর্টেও এই ভিডিওটির সত্যতা জানানো হয়। 

ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে এআই নির্মিত একটি ভিডিওকে কীভাবে ভুয়ো এবং অতিরঞ্জিত দাবিতে পোস্ট করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।