বলিউড তারকা অজয় দেবগনের সঙ্গে তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেভন্ত রেড্ডির সাক্ষাতের কিছু ভিডিও এবং ছবি ইদানীং সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে। ছবিগুলো ছড়িয়ে দাবি করা হচ্ছে যে এই বলিউড অভিনেতা নাকি জাতীয় কংগ্রেস পার্টিতে যোগদান করেছেন।
ছবিগুলোতে কংগ্রেস শাসিত তেলাঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেভন্ত রেড্ডিকে অজয় দেবগনকে উত্তরীয় পরিয়ে হাতে পুষ্পস্তবক তুলে দিতে দেখা যাচ্ছে। এই ছবিগুলো-সহ একটি ভিডিও পোস্ট করে SD News Media নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে লেখা হয়েছে, "হঠাৎ করে কংগ্রেসে যোগদান করলেন অভিনেতা অজয় দেবগন....।"
কেউ কেউ আবার ফেসবুকে এই ছবিগুলি পোস্ট করে লিখেছেন, "অভিনেতা অজয় দেবগন কংগ্রেসে যোগদান করলেন তেলেঙ্গানার মূখ্যমন্ত্রীর Anumula Revanth Reddy সাথে দেখা করলেন।"
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে কোনও প্রমাণ ছাড়াই এই ভিত্তিহীন দাবি করা হয়েছে যা বিভ্রান্তিকর।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
অজয় দেবগনের মতো প্রথম সারির কোনও বলিউড অভিনেতা যদি সত্যিই আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করে থাকতেন, তবে সেই নিয়ে নানা সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ পেতো। কিন্তু কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে এমন কোনও নির্ভরযোগ্য সংবাদ পাওয়া যায়নি।
অভিনেতা তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কবে এবং কী কারণে দেখা করেছিলেন, সেই বিষয়ে জানতে কিওয়ার্ড সার্চ করা হলে গত ৮ জুলাইয়ের একাধিক নিউজ রিপোর্ট পাওয়া যায়। নিউজ১৮, দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও মিড-ডে'র মতো একাধিক নিউজ রিপোর্ট থেকে জানা যায়। গত ৭ জুলাই রেভন্ত রেড্ডির দিল্লির বাসভবনে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন অজয়। সেখানে গিয়ে তিনি নিজের কিছু পেশাজনিত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা রেভন্ত রেড্ডিকে জানান।
কী সেই পরিকল্পনা? রিপোর্টগুলো থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, অজয় দেবগন তেলেঙ্গানার বিনোদন জগতে বড় বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়ে রেভন্ত রেড্ডির সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সেই পরিকল্পনার অংশ হলো একটি বিশ্ব মানের এবং আন্তর্জাতিক স্তরের ফিল্ম স্টুডিও তেলেঙ্গানার বুকে তৈরি করা।
তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের সরকারি ওয়েবসাইটেও এই সাক্ষাতের বিশদ বিষয়বস্তু তুলে ধরা হয়। সেখানে জানানো হয়, অজয় দেবগন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এই বিনিয়োগের প্রস্তাব তুলে ধরেছেন এবং রাজ্য সরকারের সহযোগিতা প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। অজয় দেবগন এমন একটি স্টুডিও নির্মাণের পরিকল্পনা করেছেন যেখানে অ্যানিমেশন, ভিজ্যুয়াল এফেক্টস এবং আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কাজ একসঙ্গে করা যাবে।
শুধু তাই নয়, বিনোদনের দুনিয়ায় যাবে ভবিষ্যতে প্রতিভার অভাব না হয় সেই কথা মাথায় রেখে অজয় একটি স্কিল ট্রেনিং সেন্টার তৈরির ইচ্ছেপ্রকাশ করেছেন যেখান থেকে ট্যালেন্ট উঠে আসবে। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের এই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কোথাও অজয় দেবগনের কংগ্রেসে যোগদানের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
রেভন্ত রেড্ডি নিজের এক্স হ্যান্ডেলেও অজয় দেবগনের সঙ্গে সাক্ষাতের ছবিগুলি পোস্ট করেন এবং বিস্তারিত লেখেন। সেই সঙ্গে জানান যে, এআই-চালিত ফিল্ম সিটি সম্পর্কে শীঘ্রই আনুষ্ঠানিকভাবে ইতিবাচক ঘোষণা করা হবে। এই পোস্টেও তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী অজয়ের কংগ্রেসে যোগদানের বিষয়ে কিছু লেখেননি। সাধারণত, কোনও ব্যক্তি কোনও রাজনৈতিক দলে যোগ দিলে তাঁকে সেই দলের প্রতীক-যুক্ত পতাকা বা উত্তরীয় দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। কিন্তু কংগ্রেসের প্রতীক রয়েছে এমন কোনও ফ্রেমে অজয়কে দেখা যায়নি।
অতীতে, ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে যখন অজয় দেবগনকে তাঁর রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা বা আকাঙ্খা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি একবার বলেছিলেন যে ফিল্মি দুনিয়ায় থাকার কারণে তিনি রাজনীতিতে জড়াতে চান না। আরেকবার তিনি বলেন যে তিনি বেশি মানুষের ভিড়ে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন না এবং রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে চান।
ফলে সবমিলিয়ে বলাই যায় যে তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অজয় দেবগনের সাক্ষাৎ ঘিরে ভুয়ো তথ্য ছড়ানো হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
বলিউড অভিনেতা অজয় দেবগন তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেভন্ত রেড্ডির সঙ্গে দেখা করে কংগ্রেসে যোগদান করেছেন।
গত ৮ জুলাই রেভন্ত রেড্ডির দিল্লির বাসভবনে অজয় দেখা করে তেলেঙ্গানায় বিনোদন জগতে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেন। কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার কোনও প্রসঙ্গ আনুষ্ঠানিকভাবে এই সাক্ষাতে আসেনি।