সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট বেশ ভাইরাল হয়েছে। সেই পোস্টে দাবি করা হচ্ছে যে ভারতের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রায়াত্ত্ব ব্যাঙ্ক স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া নাকি রিলায়েন্স জিও গোষ্ঠীর কর্ণধার মুকেশ অম্বানির কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছে।
এই পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে কেউ কেউ লিখছেন, "SBI Bank বিক্রি হয়ে গেলো। বিক্রেতা নরেন মোদী। ক্রেতা মুকেশ আম্বানি। ভারতের বিকাশ দ্রুত গতিতে হচ্ছে।"
কেউ আবার টিভি9 বাংলার একটি গ্রাফিক কার্ড শেয়ার করছেন। যেখানে লেখা, "SBI-এর হাত থেকে সব শেয়ার কিনে নিল Reliance, এই ব্যাঙ্কের মালিক এবার Jio একাই!" এই গ্রাফিক কার্ড শেয়ার করে কেউ কেউ লিখেছেন, "SBI Bank বিক্রি হয়ে গেলো। বিক্রেতা নরেন মোদী। ক্রেতা মুকেশ আম্বানি। ভারতের বিকাশ দ্রুত গতিতে হচ্ছে। আমার কথা মিলিয়ে নেবেন এক সময় এরম আসবে যে বিজেপি পুরো দেশটা কে বিক্রি করে ঝোলা তুলবে আর পালিয়ে যাবে মোদী বাবু কোথায় কোথায় বলেন না কি মাইন তো ফকির হুন মেরা ক্যায়া হয় ঝোলা উঠাউঙ্গা আওর চল দুঙ্গা!"
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে দাবিটি বিভ্রান্তিকর। SBI নিজস্ব কোনও শেয়ার বা অংশ অম্বানির সংস্থাকে বিক্রি করেনি। বরং SBI-এর কাছে থাকা Jio-র একটি ব্যাঙ্কের শেয়ার Jio-ই পুরোপুরি কিনে নিয়েছে।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
সবার প্রথম এই বিষয়ে টিভি9 বাংলার প্রতিবেদনটি (আর্কাইভ লিঙ্ক) আমরা খতিয়ে দেখি। সেখানে লেখা হয়, '২০১৮ সালে জিও পেমেন্টস ব্যাঙ্ক শুরু করেছিল রিলায়েন্স জিও। সেই সময় এই পেমেন্টস ব্যাঙ্কের ১৭.৮৩ শতাংশ শেয়ার ছিল স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার হাতে। আর এই ১৭.৮৩ শতাংশ শেয়ার এবার স্টেট ব্যাঙ্কের কাছ থেকে কিনে নিল জিও ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস।'
এই প্রতিবেদনে কোথাও লেখা হয়নি যে স্টেট ব্যাঙ্ক তাদের নিজেদের শেয়ার বিক্রি করেছে। বরং, স্পষ্টভাবেই লেখা ছিল যে জিও পেমেন্টস ব্যাঙ্কের যে ১৭.৮৩ শতাংশ শেয়ার স্টেট ব্যাঙ্কের কাছে ছিল, সেটা জিও ফিনানশিয়াল সার্ভিসেস কিনে নিয়েছে। জিও পেমেন্টস ব্যাঙ্ক হলো ফিনানশিয়াল সার্ভিসেসের অধীনস্থ একটি সংস্থা।
অর্থাৎ একটি বিষয় এখানেই পরিষ্কার হয় যে শিরোনামে রিলায়েন্স কিনেছে লেখা হলেও আদতে জিও ফিনানশিয়াল সার্ভিসেস কিনেছে জিও পেমেন্টস ব্যাঙ্কের শেয়ার। রিলায়েন্স এবং জিও ফিনানশিয়াল সার্ভিসেস দুটি আলাদা বাণিজ্যিক সংস্থা। যদিও তাদের কর্ণধার বা মালিক একজনই, মুকেশ অম্বানি।
এই বিষয়ে আরও সার্চ করা হলে মিন্ট এবং ইকনমিক টাইমসের একটি খবর পাওয়া যায় যা গত ১৮ জুন প্রকাশ পেয়েছিল। যেখানে শিরোনামেই স্পষ্ট করে লেখা হয়, এসবিআই-এর থেকে জিও পেমেন্ট ব্যাঙ্কের ৭.৯ কোটি শেয়ার কিনে নিয়েছে জিও ফিনানশিয়াল সার্ভিসেস। খবরের ভেতরে আরও লেখা হয়, ১০৪.৫৪ কোটি টাকার বিনিয়মে এই ৭ কোটি ৯০ লক্ষ ৮০ হাজার জিও পেমেন্টস ব্যাঙ্কের শেয়ার কিনে নেওয়া হয়। যার ফলে বর্তমানে জিও পেমেন্টস ব্যাঙ্কের ১০০ শতাংশ মালিকানা জিও ফিনানশিয়াল সার্ভিসেসের অধীনে চলে এলো। আগে জিও পেমেন্টস ব্যাঙ্কের ১৭.৮৩ শতাংশ মালিকানা স্টেট ব্যাঙ্কের কাছে ছিল। যা বর্তমানে আর থাকলো না।
জিও ফিনানশিয়াল সার্ভিসেসের পক্ষ থেকে গত ১৮ জুন এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি প্রেস রিলিজও দেওয়া হয়। সেখানেও লেখা হয় যে এই পদক্ষেপের ফলে জিও ফিনানশিয়াল সার্ভিসেস এখন জিও পেমেন্টস ব্যাঙ্কের একক মালিকানা ভোগ করবে।
এই বিষয়ে বিশদে জানতে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম সুব্রত ভট্টচার্যর সঙ্গে, যিনি পেশায় একজন অর্থনৈতিক এবং শেয়ার মার্কেট বিশেষজ্ঞ। তিনি আমাদের বলেন, "স্টেট ব্য়াঙ্কের হাতে থাকা জিও পেমেন্টস ব্যাঙ্কের প্রায় ১৮ শতাংশ মালিকানা জিও নিজে প্রায় ১০৫ কোটিতে কিনে নিয়েছে। এর ফলে একে স্টেট ব্যাঙ্কের কোনও অংশে সম্পদে বিরাট লোকসান বা ক্ষতি বা মালিকানা ক্ষয় হিসেবে কোনও ভাবেই গণ্য করা যাবে না। নানা সংস্থা একে অপরের সঙ্গে এই ধরনের শেয়ার কেনাবেচা প্রায়ই করে থাকে। যার বাজারমূল্যও অনেক বেশি হয়। যেহেতু এ ক্ষেত্রে ক্রেতা সংস্থার নাম জিও, তাই এই বিষয়টি এতটা প্রচারের আলো পেয়েছে।"
ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে এসবিআই ব্যাঙ্কের নিজস্ব কোনও শেয়ার বিক্রি হয়নি এবং যে তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হচ্ছে, সেটা বিভ্রান্তিকর।
স্টেট ব্যাঙ্ক তার সব শেয়ার রিলায়েন্সকে বিক্রি করে দিয়েছে।
গত ১৭ জুন স্টেট ব্যাঙ্কের হাতে থাকা জিও পেমেন্টস ব্যাঙ্ক সার্ভিসেসের ১৭.৮ শতাংশ শেয়ার কিনেছে জিও ফিনানশিয়াল সার্ভিসেস। স্টেট ব্যাঙ্কের নিজস্ব কোনও শেয়ার এ ক্ষেত্রে বিক্রি করা হয়নি।