সম্প্রতি একটি মামলার শুনানির সময় অবিলম্বে দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকার সব পথকুকুরকে লোকালয় থেকে সরানোর নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তবে পরবর্তীতে ২২ আগস্ট আগের নির্দেশ বদলে নতুন রায় দিয়েছে শীর্ষ আদালত। নতুন নির্দেশে বলা হয়েছে, পথকুকুরদের দিল্লির রাস্তা থেকে নির্দিষ্ট আশ্রয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে সঠিক পদ্ধতিতে বন্ধ্যাত্বকরণ এবং প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ করতে হবে। তারপর যেখান থেকে কুকুরদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেখানে আবার ফিরিয়ে দিয়ে যেতে হবে। আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি বেশ ভাইরাল হয়েছে।
যেখানে কোনও একটি মেঝের উপরে একটি গাড়ির পাশে বস্তাবন্দি অবস্থায় একাধিক কুকুরকে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি মেঝেতে ফেলা আছে বেশকিছু বিস্কুট। অন্যদিকে উল্টোদিকে রাস্তায় কুকুরগুলিকে পর্যবেক্ষণ করছেন একজন পুলিশ কর্মী-সহ মোট তিনজন ব্যক্তি। ছবিটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, দিল্লিতে ভ্যাকসিন দেওয়ার নাম করে কুকুরগুলি হত্যা করেছে প্রশাসন। উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ছবিটি শেয়ার করে লিখেছেন, “দিল্লীর সরকারকে ঘৃনা...শুধুই ঘৃনা...যতটা ঘৃনা করা যায় ততটাই ঘৃনা....ভ্যাক্সিনের নামে এই অজস্র খুন কেউ ভুলবে না।” (সব বানান অপরিবর্তিত)
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ছবিটি দিল্লি প্রশাসনের তরফে ভ্যাকসিন দেওয়ার নাম করে কুকুর হত্যার ঘটনা নয়। বরং এটি অসমের গোলাঘাটা জেলার দেরগাঁও থানা এলাকায় অবৈধভাবে পাচারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়ার সময় ২৩টি কুকুর উদ্ধারের দৃশ্য।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল দাবি ও ছবিরর সত্যতা জানতে সেটি নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৫ সালের ২৩ আগস্ট একটি ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে এই একই ছবি-সহ একটি পোস্ট পাওয়া যায়। সেই পোস্টের ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়েছে, “জোরহাটের দিক থেকে আসা একটি গাড়ি থেকে পাচারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া ২৩টি কুকুর উদ্ধার করেছে দেরগাঁও থানার পুলিশ। উদ্ধার হওয়া কুকুরগুলি বর্তমানে দেরগাঁও থানায় রাখা হয়েছে।”
এরপর উক্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে ২০২৫ সালের ২৩ আগস্ট মেঝের উপরে বস্তাবন্দি অবস্থায় পড়ে থাকা কুকুরগুলির অন্য অ্যাঙ্গেল থেকে তোলা ছবি ও ভিডিও-সহ একাধিক সংবাদমাধ্যমে অসমীয়া এবং অন্যান্য ভাষায় এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেইসব প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২২ আগস্ট শুক্রবার রাতে অসমের গোলাঘাটা জেলার দেরগাঁও থানার ৩ নম্বর গেট এলাকায় সন্দেহজনক একটি গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে মোট ২৩টি কুকুর উদ্ধার করে দেরগাঁও থানার পুলিশ। কুকুরগুলি পাচারের উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে নাগাল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বলে পুলিশ সূত্রে খবর। পাশাপাশি এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
২০২৫ সালের ২৩ আগস্ট গোলাঘাটা পুলিশের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেলেও এই ঘটনার পাঁচটি ছবি-সহ এই একই তথ্য জানানো হয়েছে। পাশাপাশি বিষয়টি সম্পর্কে আরও জানতে এরপর আমরা ছবিটি নিয়ে দেরগাঁও থানার ওসি প্রাঞ্জল বড়ুয়া সঙ্গে যোগাযোগ করি। সেটি দেখে তিনি আমাদের জানান, ভাইরাল ছবিটি দেরগাঁও থানার তরফে উদ্ধার করা ২৩টি কুকুরের। এই ঘটনায় আমরা ২ জনকে গ্রেফতার করে আইনত ব্যবস্থা নিয়েছি। পাশাপাশি উদ্ধার হওয়া কুকুরগুলিকে আমরা একটি এনজিওর কাছে হস্তান্তর এবং সবগুলো কুকুর সুস্থ রয়েছে।
এর থেকে প্রমাণ হয় যে, দিল্লিতে ভ্যাকসিন দেওয়ার নাম করে কুকুর হত্যার দৃশ্য দাবি করে শেয়ার করা হচ্ছে অসমের অসম্পর্কিত ছবি।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, দিল্লিতে ভ্যাকসিন দেওয়ার নাম করে কুকুরগুলি হত্যা করেছে সে রাজ্যের প্রশাসন।
ভাইরাল ছবিটি দিল্লির নয়। বরং এটি অসমের গোলাঘাটা জেলার দেরগাঁও থানা এলাকায় অবৈধভাবে পাচারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়ার সময় ২৩টি কুকুর উদ্ধারের দৃশ্য।