দীর্ঘ সময় পর গাজায় অবশেষে শান্তি ফিরতে পারে, এমন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কারণ হামাস যে সকল ইজরায়লিদের আটক করেছিল তাদের মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে। অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ইজরায়েলকে হামলা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এই আবহে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে একটি সুবিশাল জমায়েতের একটি ভিডিও। রাতের অন্ধকারে সেই ভিডিওটি কোনও উঁচু জায়গা থেকে তোলা হয়েছে এবং দেখা যাচ্ছে শহরের ব্যস্ত এলাকায় আলো হাতে বিপুল জনসমাগম। ভিডিওটি পোস্ট করে একে সাইবেরিয়ার দৃশ্য বলে দাবি করা হয়েছে।
ভিডিও-র ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “ফিলিস্তিনের সমর্থনে সাইবেরিয়ায় স্লোগান "আওয়াজ তুলুন, বিশ্বকে জানান।”
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভাইরাল ভিডিওটি সাইবেরিয়ার নয়। পাশাপাশি এই জমায়েতের সঙ্গে ফিলিস্তিনের সমর্থনের কোনও সংযোগ নেই।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে তার রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে ওই একই ভিডিও দেখা যায় একটি থ্রেডস্ হ্যান্ডেলে। offtheweb.in নামে হ্যান্ডেল থেকে চলতি বছর ৯ সেপ্টেম্বর ভিডিওটি পোস্ট করে লেখা হয়েছিল, এই দৃশ্যটি সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডের। সেই সঙ্গে একটি খবরের শিরোনামের স্ক্রিনশটও সেখানে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই খবর অনুযায়ী, এই প্রতিবাদ ছিল সার্বিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে।
পরবর্তী ধাপে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে খোঁজা হলে আসল ভিডিওটি পাওয়া যায় djordjevukojicic নামে এক ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীর হ্যান্ডেলে। তিনি ভিডিওটি চলতি বছর ১৫ মার্চ পোস্ট করেছিলেন। ভিডিওটির সঙ্গে থাকা ক্যাপশন থেকে পরিষ্কার হয়ে যায় যে এই ঘটনার সঙ্গে ফিলিস্তিন বা সাইবেরিয়ার কোনও সম্পর্ক নেই।
তিনি লেখেন, “গতকাল, ২০২৫ সালের ১৫ই মার্চ, সার্বিয়া কয়েক দশকের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ এক বিক্ষোভের সাক্ষী হলো, যখন সাড়ে ৭ লক্ষের বেশি মানুষ বেলগ্রেডে ভিড় করে। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে এই বিক্ষোভ, যার নাম ছিল "15th for the 15", তা ছিল কয়েক মাস ধরে চলা দুর্নীতি-বিরোধী প্রতিবাদের চূড়ান্ত রূপ। এই প্রতিবাদের জন্ম হয়েছিল নভেম্বর ২০২৪-এ নভি সাদে একটি রেলওয়ে স্টেশনের ছাউনি ভেঙে পড়ার ঘটনা থেকে, যাতে ১৫ জন মারা যান।”
এই বিষয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করে বিবিসি-র একটি খবর পাওয়া যায় যা গত ১৬ মার্চ প্রকাশ পেয়েছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী, সার্বিয়ান বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ পথে নেমে এসেছিলেন। আনুমানিক ৩ লক্ষ ২৫ হাজার মানুষের জমায়েত হয়েছিল রাজধানী বেলগ্রেড এবং অন্যান্য শহরে। গত নভেম্বর মাসে সার্বিয়ার নোভি সাদ নামের শহরে একটি স্টেশনে ব্রিজ দুর্ঘটনায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তারপর থেকেই বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ বাড়তে থাকে। তারই অংশ হিসেবে এই বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়।
এই সম্পর্কে কিওয়ার্ড সার্চ করে এই একই বিক্ষোভের একই জায়গার ছবি দেখা যায় স্টক ফটো ওয়েবসাইট গেটি ইমেজের ওয়েবসাইটে। সেখানে লেখা হয়, বেলগ্রেডে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের বিরুদ্ধে গত ১৫ মার্চ রাতে এভাবেই পথে নেমে আসে সে দেশের জনতা।
ফলে বুঝতে বাকি থাকছে না যে একটি অসম্পর্কিত ভিডিওকে বিভ্রান্তিকর দাবিতে শেয়ার করা হচ্ছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে সাইবেরিয়ায় কীভাবে ফিলিস্তিনের সমর্থনে আন্দোলন চলছে।
ভাইরাল ভিডিওটি সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডের। চলতি বছর ১৫ মার্চ স্থানীয় সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সেখানে আন্দোলন চলছিল, ভিডিওটি তখনই তোলা।