এ বছরের ক্রিকেট বিশ্বকাপ একেবারেই ভাল যায়নি বাংলাদেশের। গ্রুপ স্টেজের ৯টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র দুটি ম্যাচে জয় পেয়েছে। সেই সঙ্গে, দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে নিয়েও সমালোচনা হয়েছে তুখড়।
এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় সাকিবের একটি ভিডিয়ো বেশ ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, কিছু মানুষেরা সাকিবকে ঘিরে রয়েছেন এবং রীতিমতো তাঁকে ধরে টানা-হেঁচড়া করা হচ্ছে। সেই মানুষের ভিড় কোনও মতে কাটিয়ে দোকানে গিয়ে ঢুকছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। ভিডিয়োটিতে কিছু মানুষের কণ্ঠস্বরও শোনা যাচ্ছে যেখানে সাকিবকে মারার জন্য উস্কানিমূলক কথা কানে আসছে।
বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপ শেষে দেশে ফেরার পর এই ভিডিয়োটি শেয়ার করে বোঝাতে চাওয়া হচ্ছে যেন এটি কোনও সাম্প্রতিক ঘটনা। #cricketworldcup2023-র মতো হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে, ও ভিডিয়োটির উপরে লেখা হয়েছে 'ওয়েলকাম সাকিব।'
সেই সঙ্গে ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, "#_বাংলাদেশ ছি! বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুরাগীরা যেদিন থেকে পাকিস্থানকে সমর্থন করতে শুরু করে ঠিক সেইদিন থেকে তাদের স্বভাব আচরণ অসভ্যের মতো হয়ে যাচ্ছে। ক্রিকেটের সংস্কৃতি ও তার সৌজন্যতাবোধ সব এদেশে এসেই যেনো শেষ হয়! শাকিবউল হাসানের উপর এই দৈহিক আক্রমণ তার জ্বলন্ত উদাহরণ। ছি!"
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে এই ভিডিয়োটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, বরং গত মার্চ মাসের। এমনকি ভিডিয়োটি বাংলাদেশেরও নয়।
কীভাবে জানা গেল সত্যি
সবার প্রথম ভাইরাল ভিডিয়োটি থেকে কিফ্রেম সংগ্রহ করে আমরা কিছু কিওয়ার্ডের সাহায্য নিয়ে সেটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। তখন ওই একই পোশাকে সাকিবের ছবি-সহ বেশ কিছু প্রতিবেদন দেখতে পাই।
২০২৩ সালের ১৬ মার্চ প্রকাশিত এই প্রতিবেদনগুলিতে লেখা হয়, দুবাইয়ে একটি জুয়েলারি শোরুম উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন সাকিব যখন ভক্তরা তাঁকে ছেঁকে ধরে। ঘটনাচক্রে, তাঁর এই শোরুম উদ্বোধন করতে যাওয়া নিয়ে বিতর্কও দানা বেঁধেছিল।
কারণ, এই শোরুমের মালিকের নাম জনৈক আরাভ খান। যিনি বাংলাদেশ পুলিশের পরিদর্শক পদমর্যাদার এক সদস্যকে হত্যা মামলার পলাতক আসামি। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই, এমন এক ব্যক্তির মালিকাধীন জুয়েলারি শোরুম উদ্বোধন করা নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি।
এরপর আমরা কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ওই শোরুম উদ্বোধনের ভিডিয়ো খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। তখন RTV News এর মতো বাংলাদেশের প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে আমরা ওই ভিডিয়োটি দেখতে পাই। যেখানে ভাইরাল ভিডিয়োটির মতো ঠিক একই ফ্রেম দেখা যাচ্ছে।
ভিডিয়োটিতে লেখা হয়, দুবাইতে ওই জুয়েলারি শোরুম উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদের হাতে এভাবেই হেনস্থা হতে হয় সাকিবকে।
অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে ভাইরাল ভিডিয়োটির সঙ্গে চলমান বিশ্বকাপের কোনও সম্পর্ক নেই, এবং তাঁর উপর 'দৈহিক আক্রমণ' হয়নি। তাঁকে হেনস্থা করার আট মাস আগেকার ভিডিয়ো বিভ্রান্তিকর দাবির সঙ্গে শেয়ার করা হচ্ছে।
ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বকাপ খেলে বাংলাদেশে ফেরার পর সাকিব আল হাসানকে কীভাবে দৈহিক আক্রমণের সম্মুখীন হতে হয়েছে।
ভিডিয়োটি গত মার্চ মাসের। এবং এটি বাংলাদেশ নয় বরং দুবাইয়ের ঘটনা যেখানে প্রবাসীদের দ্বারা শোরুম উদ্বোধন করতে গিয়ে হেনস্থা হন সাকিব।