বাংলাদেশে দীর্ঘসময় ধরে চলা ছাত্র আন্দোলনের পর প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে সোমবার দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। কিন্তু এই ঘটনার পর আবারও একাধিক হিংসার ঘটনার খবর এসেছে প্রতিবেশী দেশটি থেকে। সংখ্যালঘু সমাজ ও শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের কর্মীদের ওপর দুর্বৃত্তরা বেছে বেছে হামলা করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এই আবহে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট বেশ ভাইরাল হচ্ছে যাতে একদিকে বাংলাদেশী ক্রিকেটার লিটন কুমার দাসের ছবি দেখা যাচ্ছে, অন্যদিকে আগুনে পুড়ে যাওয়া একটি দোতালা বাড়ির ছবি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। দুটি ছবি একসঙ্গে পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে যে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের হিন্দু খেলোয়াড় লিটনের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
উদাহরণস্বরূপ, ফেসবুকে ছবিদুটি পোস্ট করে অনেকেই লিখেছেন, "ব্রেকিং। বাংলাদেশী ক্রিকেটার লিটন দাসের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।"
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে এই দাবিটি পুরোপুরি মিথ্যে। এই আগুন লিটন দাসের বাড়িতে নয় বরং বাংলাদেশে ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্তাজার বাড়িতে লাগানো হয়েছিল।
কীভাবে জানা গেল সত্যি
ভাইরাল ছবিটিকে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে খোঁজার পর আমরা ওই ছবিটি ৫ আগস্ট প্রকাশিত 'দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড'-এর একটি প্রতিবেদনে দেখতে পাই। এই খবরে লেখা হয় যে, ছবিতে থাকা বাড়িটি নড়াইল-২ এলাকার সাংসদ ও সাবেক ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজার।
একই জ্বলন্ত বাড়ির আরেকটি ছবি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসিনা দেশ ছাড়ার পর মহিষখোলা নামে একটি এলাকায় সংসদের হুইপ মাশরাফির বাড়িতে হামলা চালানো হয়। প্রথমে বাড়ি ও জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয়, তারপর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র বসু ও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়।
মাশরাফির বাড়িতে আগুন দেওয়ার ভিডিও 'প্রথম আলোর' ইউটিউব চ্যানেলেও আপলোড করা হয়েছে। এখানে দেখা যাবে কীভাবে মাশরাফির দোতলা বাংলো আগুনে দাউদাউ করে পুড়ছে।
উল্লেখ্য, মাশরাফি বিন মুর্তজা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়কও ছিলেন। তাঁকে সর্বশেষ ২০২০ সালের মার্চে বাংলাদেশের জার্সিতে খেলতে দেখা যায়। তবে, তিনি তাঁর রাজনৈতিক ইনিংস শুরু করেছিলেন ২০১৮ সালে যখন তিনি আওয়ামী লীগের টিকিটে প্রথমবারের মতো সাংসদ হন।
অন্যদিকে কিওয়ার্ড সার্চ করে লিটন দাসের বাড়িতে হামলার কোনও খবর আমরা পাইনি। সুনির্দিষ্ট তথ্যের জন্য ঢাকার কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বললে তারাও জানান যে এটা ভিত্তিহীন।
সুতরাং এটা পরিষ্কার যে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও সাবেক ক্রিকেটারের বাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক তকমা দেওয়ার লক্ষ্যে এই বিভ্রান্তিকর পোস্টটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে।
এই ছবিটি বাংলাদেশী ক্রিকেটার লিটন কুমার দাসের বাড়ির যেখানে আগুন লাগানো হয়েছে।
এই ছবি লিটনের বাড়ির নয়, বরং বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও আওয়ামী লীগের সাংসদ মাশরাফি বিন মুর্তজার বাড়ির।