সম্প্রতি একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে পুলিশ নাকি অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। একই ভিডিও শেয়ার করে কেউ কেউ দাবি করেছেন যে হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে নাকি গ্রেফতার করা হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কালো কোট পরিহিত কোনও ব্যক্তিকে পুলিশ ও আধাসেনার পোশাকে থাকা ব্যক্তিরা একটি চত্ত্বর থেকে টেনে বের করে নিয়ে যাচ্ছে। ভিডিওটি পোস্ট করে লেখা হয়েছে, "আইনের বাইরে কেউ না আসামের বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মাকে দেখুন পুলিশে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে।"
একই ভিডিও পোস্ট করে কেউ আবার লিখেছেন, "ডক্টর হেমন্ত বিশ্ব শর্মা গ্রেফতার হয়েছে।"
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে দাবিটি মিথ্যে। এই ভিডিওতে বিহারের এক আইনজীবীকে দেখা যাচ্ছে যাকে গত জুন মাসে আদালত থেকে আটক করা হয়েছিল।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
সবার প্রথমেই বলা রাখা দরকার, ভারতের কোনও রাজ্যের কোনও মুখ্যমন্ত্রীকে যদি পুলিশ এভাবে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায়, তবে সেই সংক্রান্ত খবর নিশ্চিতভাবে কোনও না কোনও সংবাদ মাধ্যমে পাওয়া যাবে। কিন্তু এমন কোনও খবর না থাকায় দাবিটি অসত্য সেই বিষয়ে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া যায়।
ভাইরাল ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে তার রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে ওই একই ভিডিও পক্কি খবর নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে পাওয়া যায়। গত ২০ জুন আপলোড হওয়া এই ভিডিও-র ক্যাপশনে লেখা হয়, "দরভাঙ্গার আলোচিত আইনজীবী আম্বর ইমাম হাশমিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।"
২০ জুন ওই একই ভিডিও পোস্ট করে আরেক ব্যক্তি নিজের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে লিখেছিলেন, "দরভাঙ্গা: বিখ্যাত সিনিয়র অ্যাডভোকেট আম্বার ইমাম হাশমি ওরফে "ছোটে সাহাব"-কে ADJ-3 হেফাজতে নিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে। এই ভিডিওতে পুলিশ হেফাজতে থাকা ব্যক্তি হলেন "অ্যাডভোকেট সুশীল কুমার চৌধুরী জি"। এটি দারভাঙ্গা আদালত প্রাঙ্গণের একটি ভিডিও। সিনিয়র অ্যাডভোকেট আম্বার ইমাম হাশমি সাহাবের আটকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য পুলিশ তরুণ অ্যাডভোকেট সুশীল কুমার চৌধুরীকে অমানবিকভাবে আটক করে এবং তারপর তাঁকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।"
এই বিষয়ে সবিস্তারে জানতে কিওয়ার্ড সার্চ করা হলে চলতি বছর ২০ জুন এবং ২২ জুন প্রকাশিত অমর উজালা এবং লাইভ হিন্দুস্তানের রিপোর্ট পাওয়া যায়। সেই রিপোর্টগুলিতে নিশ্চিত করা হয়, দারভাঙ্গা সিভিল কোর্টে বিখ্যাত ফৌজদারি আইনজীবী আম্বর ইমাম হাশমিকে ৩২ বছর বয়সী একটি খুনের মামলায় আদালত থেকেই গ্রেপ্তার করা হয় এবং জেলে পাঠানো হয়। কারণ তিনি আদালতকে বিভ্রান্ত করেছিলেন এই বলে যে তিনি জেলার বাইরে আছেন। কিন্তু বাস্তবে তিনি অন্য একটি মামলার কাজে ওই একই আদালতে উপস্থিত ছিলেন। কিছু আইনজীবী এই গ্রেফতারির প্রতিবাদ জানাতে তাদের মধ্যে সুশীল কুমার চৌধুরীকেও গ্রেফতার করা হয়।
অর্থাৎ পরিষ্কার বোঝাই যাচ্ছে যে এই ভিডিওটির সঙ্গে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার গ্রেফতারির কোনও সম্পর্ক নেই। একটি অসম্পর্কিত ভিডিও সম্পূর্ণ ভুয়ো এবং মনগড়া দাবিতে ছড়ানো হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে কীভাবে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে পুলিশ টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে।
দাবিটি পুরোপুরি ভুয়ো। এই ভিডিটওটি গত জুন মাসের। বিহারের দারভাঙ্গার একটি আদালতে এক আইনজীবী গ্রেফতারের সঙ্গে জড়িত।