সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও এনডিএ জোট ক্ষমতায় এসেছে। গত ৯ জুন অন্ধ্র প্রদেশের নির্বাচনে জয়ী দল টিডিপি ও বিহারের শরিক দল জেডিইউ ছাড়াও ছোট-বড় একাধিক দলকে সঙ্গে নিয়ে শপথ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। চন্দ্রবাবু অবশ্য মন্ত্রিসভায় পাঁচ থেকে ছয়টি মন্ত্রিত্ব এবং লোকসভার স্পিকারের পদ চেয়েছে। তবে এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত মন্ত্রক বণ্টনের কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।
এই আবহে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল রয়েছে। সেই ভিডিও দেখা যাচ্ছে, বেশ কিছু ব্যক্তি চন্দ্রবাবু নাইডুর ছবির উপর চড়-থাপ্পড় মারছে এবং তাতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে, সরকার গঠনে মোদীকে সমর্থন দেওয়ার কারণে অন্ধ্র প্রদেশে চন্দ্রবাবুর বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছে।
ভিডিওটির সঙ্গে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "চন্দ্রবাবু নাইডু মোদীকে সমর্থনের চিঠি দেওয়ার সাথে সাথে অন্ধ্রপ্রদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। জনগণ মোদীজির বিরুদ্ধে ম্যান্ডেট দিয়েছে।। -ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়া হতে সংগৃহীত।"
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে এই ভিডিওটি 2024 সালের মার্চের, যখন টিডিপি নেতার জন্য টিকিট না পেয়ে ক্ষুব্ধরা প্রতিবাদ করেছিল। এর সঙ্গে সরকার গঠনে মোদীকে সমর্থন দেওয়ার কোনও সংযোগ নেই।
কীভাবে জানা গেল সত্যি
ভাইরাল ভিডিও থেকে স্ক্রিনশট সংগ্রহ করে তার রিভার্স ইমেজ সার্চ করার সময় আমরা একটি তেলুগু প্রতিবেদন দেখতে পাই। ভাইরাল ভিডিওতে থাকা ফ্রেমের একটি স্ক্রিনশট ২৯ মার্চ ২০২৪-এর এই খবরে দেখতে পাওয়া যাবে। এই খবর অনুযায়ী, অন্ ধ্রপ্রদেশে অনুষ্ঠিত বিধানসভা নির্বাচনের জন্য টিডিপি প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পরে কয়েকটি স্থানে হিংসাত্মক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছিল। টিকিট না পাওয়া নেতাদের সমর্থকেরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। বিক্ষোভ চলাকালীন এক সময় চন্দ্রবাবু নাইডুর ছবিও পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
এর পরে আমরা ২৯ মার্চে করা একটি তেলেগু নিউজ চ্যানেল থেকে একটি টুইট পাই। ভাইরাল ভিডিওর পাশাপাশি এতে বিক্ষোভের আরও অনেক অংশ রয়েছে। অন্ধ্র প্রদেশের অনন্তপুর জেলার গুন্টকাল এলাকায় এই ঘটনাটি ঘটেছিল বলে জানা যায়। সেখানে লেখা হয়, এখানে টিডিপি কর্মীরা চন্দ্রবাবু নাইডুর ছবি পুড়িয়েছে রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের টিকিট দেওয়ার অভিযোগ এনে।
এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত আরও অনেক প্রতিবেদন আমরা পেয়েছি । সেগুলির মতে, অনেক নির্বাচনী এলাকায় টিডিপি নেতাদের সমর্থকরা এবং কর্মীরা অভিযোগ করেছেন যে দলটি সেই নেতাদের টিকিট দেয়নি যারা বছরের পর বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম করেছে। এই সূত্রে অনন্তপুরের প্রাক্তন বিধায়ক প্রভাকর চৌধুরী টিডিপির বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে টিকিট বিতরণের অভিযোগ তুলেছিলেন। একই সময়ে, ভিজিয়ানগরম থেকে কিমিদি নাগার্জুন এবং নেলোরের বিষ্ণুবর্ধন রেড্ডি এমনকি দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা করে দেন।
একই সময়ে, গুন্টকাল থেকে টিডিপি নেতা জিতেন্দ্র গৌড়ের জায়গায়, ওয়াইএসআর কংগ্রেস পার্টি থেকে টিডিপিতে আসা গুম্মানুর জয়রামকে টিকিট দেওয়া হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জিতেন্দ্র গৌড়ের সমর্থকেরা টিডিপি অফিসে হামলা চালায়, সেখানে রাখা চেয়ার ও টেবিল বের করে, আগুন ধরিয়ে দেয় এবং তারপর চন্দ্রবাবু নাইডুর ছবি পুড়িয়ে দেয়। নাইডুর বিরুদ্ধে টিকিটের বিনিময়ে জয়রামের কাছ থেকে ৩০ কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগও তোলা হয়।
তথ্যটি আরও নিশ্চিত করার জন্য আমরা অনন্তপুর থেকে আজ তকের প্রতিনিধি ভি জগদীশের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের নিশ্চিত করেন যে ভাইরাল ভিডিওটি গুন্টকালের একটি পুরানো ঘটনার। বর্তমানে নাইডুর ছবি পোড়ানোর মতো ঘটনা সেখানে ঘটেনি।
সুতরাং এই বিষয়টি স্পষ্ট যে কেন্দ্রে বিজেপিকে সমর্থন দেওয়ার চন্দ্রবাবুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানোর দাবিটি সঠিক নয়।
কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীকে সরকার গঠনে সমর্থন দেওয়ার কারণে অন্ধ্র প্রদেশে টিপিডি প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছে।
এই ভিডিওটি গত মার্চ মাসের। অন্ধ প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট বণ্টন নিয়ে টিপিডি সমর্থকেরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল।