ইন্ডিয়া টুডে কনক্লেভ ইস্ট-এ যোগ দিয়ে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র মা কালী সম্পর্কে এমন কিছু মন্তব্য করেন যা দেশে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সেই আবহেই এ বার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি-র সংসদে বক্তব্যের একটি ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে। সেই ভিডিও-টি শেয়ার করে নেটিজেনদের একাংশ দাবি করছেন, স্মৃতিও মা দুর্গা প্রসঙ্গে কুৎসিত মন্তব্য করেছেন।
ভিডিও-টিতে স্মৃতি ইরানিকে ইংরাজিতে বলতে শোনা যাচ্ছে, "দুর্গাপুজা সবথেকে বিতর্কিত এবং বিদ্বেষপূর্ণ উৎসব। যেখানে ফর্সা এবং সুন্দরী একজন দেবী মহিষাসুর নামক এক কালো ব্যক্তিকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। মহিষাসুর হল একজন আত্ম-সম্মানের অধিকারী ব্যক্তি যাকে ভুল বুঝিয়ে আর্যদের দ্বারা বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর্যরা দুর্গা নামক একজন যৌনকর্মীকে ভাড়া করে তার সঙ্গে মহিষাসুরের বিয়ে দেন, এবং নয় মাসে নয়বার মধুচন্দ্রিমা কাটানোর পর দুর্গা তাকে হত্যা করে।"
স্মৃতি ইরানির বক্তব্যের ৩৪ সেকেন্ডের ভিডিওটি শেয়ার করে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, "#মা_দূর্গা প্রসংগে সেদিনের #স্মৃতি_ইরানির কুৎশিত মন্তব্য ভুলে গেলে চলবে না বন্ধুগণ‼ স্মৃতি ইরানিকে #কে #কখন #কোন_অবস্থায় মা দূর্গা প্রসংগে কুৎসিত মন্তব্য করেছে যা স্মৃতি ইরানি ছাড়া আর কেউ জানে না।"
ইন্ডিয়া টুডে অ্যান্টি ফেক নিউজ ওয়ার রুম (আফয়া) তদন্ত করে পেয়েছে যে ভাইরাল ভিডিওটি বিভ্রান্তিকর দাবির সঙ্গে প্রচার করা হচ্ছে। এই কথাগুলি স্মৃতি ইরানি দুর্গাকে উদ্দেশ্য করে বললেননি। বরং, তিনি বর্ণনা দিচ্ছিলেন যে জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে বামপন্থীদের একাংশ দুর্গা সম্পর্কে কী ধরনের কুরুচিকর মন্তব্য করেছে।
আফয়া তদন্ত
সবার প্রথম আমরা স্মৃতি ইরানির এই বক্তব্যের থেকে কিছু কিওয়ার্ডস তুলে তা গুগলে সার্চ করি। তখন আমরা এমন কিছু ভিডিও দেখতে পাই যার দ্বারা গোটা বিষয়টাই দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে যায়।
কিওয়ার্ড সার্চের দরুণ ওই ৩৪ সেকেন্ডের ভিডিও-টির আরেকটু বড় অংশ উঠে আসে, যা ১ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডের। স্বরাজ্য নামের ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিওটি ২০১৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আপলোড করা হয়েছিল। স্মৃতি ইরানি সেই সময় নরেন্দ্র মোদীর ক্যাবিনেটে মানব সম্পদ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী ছিলেন।
১ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডের সেই ভিডিও-টি শুরু হয় স্মৃতি ইরানির বক্তব্য দিয়ে যেখানে তিনি কোনও খবরের কাগজের কাটআউট তুলে ধরে লোকসভা কক্ষে দেখাচ্ছিলেন। স্মৃতি বলতে শোনা যায়, "জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের এসসি, এসটি, ওবিসি ও সংখ্য়ালঘু পড়ুয়াদের একটা বক্তব্য আপনাদের শোনাই। তারা মহিষাসুর-কে শহিদের সঙ্গে তুলনা করছে। আমি এখন যা পড়তে চলেছি। তার জন্য যেন ভগবান আমায় ক্ষমা করেন। দুর্গাপুজা সবথেকে বিতর্কিত এবং বিদ্বেষপূর্ণ উৎসব। যেখানে ফর্সা এবং সুন্দরী..." এরপর স্মৃতি জেএনইউ পড়ুয়াদের দুর্গা নিয়ে করা বক্তব্যটি পাঠ করেন।
আসল ইউটিউব ভিডিও-র ক্যাপশনেও স্পষ্ট করেই লেখা ছিল যে জেএনইউ পড়ুয়াদের বিষয়েই স্মৃতি এই কথাগুলি বলেন। এরপর আমরা আসল ও পূর্ণাঙ্গ ভিডিওটি বিজেপি-র সরকারি ইউটিউব চ্যানেলে দেখতে পাই। সেখানে লেখা হয় যে জেএনইউ ও রোহিত ভেমুলা ইস্যুতে সংসদ বিতর্কে স্মৃতি ইরানির জবাব।
বিশদে কিওয়ার্ড সার্চের পর ইন্ডিয়া টিভি ও হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে আমরা দেখতে পাই, সেই সময় স্মৃতি ইরানির মন্তব্য নিয়ে বেশ হইচই হয়েছিল। বিরোধী দলগুলি সংসদে এই মন্তব্যের জন্য তাঁর ক্ষমা চাওয়ার দাবি তোলে। কিন্তু স্মৃতির পাল্টা যুক্তি ছিল, তিনি যা বলেছেন পুরোটাই জেএনইউ-র পড়ুয়াদের বক্তব্য, তাঁর নয়। আরেক প্রয়াত অরুণ জেটলিও এই প্রসঙ্গে স্মৃতি ইরানির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। ২০১৯ সালেও এই একই ভিডিও বিভ্রান্তিকর দাবির সঙ্গে ছড়িয়েছিল, তখনও টাইমস অব ইন্ডিয়া সেই দাবি নস্যাৎ করে।
সুতরাং, ৬ বছর পুরনো ভিডিওটি যে বিভ্রান্তিকর দাবির সঙ্গে প্রচার করা হচ্ছে, তা এর থেকেই প্রমাণিত।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে স্মৃতি ইরানি কী ভাবে দেবী দুর্গার প্রতি কুরুচিকর মন্তব্য করছেন।
এই ভিডিওটি সম্পাদিত। আসল ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, স্মৃতি ইরানি জেএনইউ পড়ুয়াদের একাংশের দুর্গা সম্পর্কে যা বক্তব্য, তা পাঠ করছিলেন।