অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ইস্যুতে সরগরম দেশের রাজনৈতিক মহল। এই আবহে সোশ্যাল মিডিয়ায় TV9 বাংলার একটি ভিডিও প্রতিবেদনের ক্লিপ বেশ ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, তিনজন হিন্দু বাংলাদেশি যারা অবৈধভাবে ভারতে এসেছিলেন, তারা জলপাইগুড়িতে ট্রেনের চেন টেনে গ্রেফতার হয়েছেন।
ভিডিওটি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, ধৃতরা সকলেই হিন্দু বাংলাদেশি এবং তাঁরা কেউ বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। ভিডিওটির সঙ্গে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “তিন বাংলাদেশি হিন্দু চেন টেনে ট্রেন থামালো।”
এই একই ভিডিও-র উপর আরও একটি লেখা জুড়ে দেওয়া হয়েছে। যেখানে লেখা, “ধৃতরা বাংলাদেশী হিন্দু, বৈধ কাগজ দেখাতে পারেনি। প্রশ্ন উঠছে নিরপত্তা নিয়ে।”
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে দাবিটি ভুয়ো। গ্রেফতার হওয়া সকলেই ভারতীয় নাগরিক এবং রেল পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
যেহেতু ভাইরাল ভিডিওটি TV9 বাংলা চ্যানেলের লোগো স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছিল, সেই কারণে কিওয়ার্ড সার্চের সাহায্যে সবার প্রথম TV9 বাংলার ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড হওয়া ভিডিওটি খুঁজে বের করা হয়। চলতি অগস্ট মাসের ৪ তারিখ এই ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছিল। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা হয়, “চেন টেনে ট্রেন থামাল পূণ্যার্থীরা, গ্রেফতার ৩।”
প্রতিবেদনে বলা হয়, জল্পেশ মন্দিরে যাওয়ার সময় চেন টেনে ট্রেন থামানোর এই ঘটনায় তিন পূণ্যার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উক্ত ঘটনাটি ৩ অগস্ট ঘটেছিল বলে জানানো হয়। সে সময় তিস্তা সেতুর উপর তিস্তা-তোর্সা প্যাসেঞ্জার ট্রেনের চেন ট্রেনে তা দাঁড় করানো হয়, যার জেরে ট্রেনের ভালভ্ খুলে যায়। অ্যাসিসটেন্ট লোকো পাইলটের সাহায্যে বিপত্তি কাটে। প্রাথমিকভাবে আটজনকে আটক করা হয় ও পরবর্তী সময় তিনজন গ্রেফতার হয়। তবে এই প্রতিবেদনে কোথাও লেখা হয় ধৃতরা বাংলাদেশি নাগরিক।
এই বিষয়ে আরও সার্চ করা হলে RNF News-এর ইউটিউব চ্যানেলে ওই একই ঘটনা সম্পর্কে আরেকটি প্রতিবেদন মেলে। সেই খবরে বলা হয়, একই ধরনের ঘটনা গত ২৭ জুলাইও ঘটেছিল। সেই কারণে যাত্রীদের সচেতন করার পাশাপাশি একাধিক স্টেশনে স্টপেজের সময়ও বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই ফের একবার একই ধরনের ঘটনা ঘটায় রেল পুলিশ সতর্কই ছিল। সঙ্গে সঙ্গে চেন টেনে ট্রেন থেকে নামা ৮ পূণ্যার্থীকে জিজ্ঞাবাদের জন্য আটক করে রেল পুলিশ। এদের মধ্যে পাঁচজনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।
TV9 বাংলায় প্রকাশিত খবরে লেখা হয়, ধৃত সকলেই আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার জেলার বাসিন্দা। কোনও খবরে কোথাও এই তথ্য উল্লেখ করা হয়নি যে ধৃতরা বাংলাদেশি হিন্দু।
এই বিষয়ে সার্চ আরও সার্চ করা হলে News18 বাংলা এবং এই সময়ে গত ৪ অগস্ট প্রকাশিত দুটি খবর থেকে জানা যায়, শ্রাবণ মাসে জল্পেশ মন্দিরে ব্যাপক ভক্ত সমাগম হয়। সে সময়েই সেখানে শ্রাবণী মেলা বসে। মেলাকে কেন্দ্র করে ভিড় জমে। যাঁরা ট্রেনে আসেন, তাঁরা ময়নাগুড়ি স্টেশনে নেমে অনেকটা রাস্তা অতিক্রম করে দোমহনি এলাকায় তিস্তার শ্রাবণী ঘাটে পৌঁছোন। কিন্তু এ বছর অনেকেই শর্টকাট নিতে ব্রিজের উপরই চেন টেনে ট্রেন থামিয়ে দিচ্ছেন। একাধিকবার এই ঘটনা ঘটার পরই তিস্তা ব্রিজের উপর নিরাপত্তা আটোসাঁটো করে রেল পুলিশ।
ধৃতদের বিষয়ে সবিস্তারে জানতে আমরা জলপাইগুড়ি রেল পুলিশের ইন্সপেক্টর বিপ্লব দত্তের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আজ তক ফ্যাক্ট চেক টিমকে নিশ্চিত করেন যে ধৃত তিনজন বাংলাদেশি নাগরিক নয় বরং সকলেই আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার জেলার বাসিন্দা। ধৃতদের পরিচয়পত্র দেখে তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কিছু মানুষ রাজনৈতিক স্বার্থে এই ধরনের ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
অর্থাৎ, সবমিলিয়ে পরিষ্কার হয়ে যায় যে গত ৩ অগস্ট জলপাইগুড়ির তিস্তা ব্রিজের উপর চেন টেনে ট্রেন থামানোয় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অবৈধ বাংলাদেশি হিন্দু নাগরিক বলে দাবি করা হচ্ছে, যা অসত্য।
জলপাইগুড়িতে চেন টেনে ট্রেন থামানোর ঘটনায় তিন অবৈধ বাংলাদেশি হিন্দু নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ধৃতরা সকলেই ভারতীয় নাগরিক ও পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। রেল পুলিশ এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।