সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিও। যেখানে এক যুবককে একটি মেয়েকে একের পর চড় মারতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওর এক পর্যয়ে অন্য এক যুবক বিবাদটি মেটানোর লক্ষ্যে ওই দু’জনকে এক অপরের থেকে আলাদা করা চেষ্টা করছে।
ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, অশ্লীল প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার জন্য একজন মুসলিম যুবতীকে বেধড়ক মারধর করেছে এক হিন্দু যুবক। উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “মুসলিম মেয়েকে একজন হিন্দু খারাপ কাজের জন্য বলে সে অস্বীকার করলে তাকে মারধর করে হিন্দু ব্যক্তি।” (সব বানান অপরিবর্তিত)
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওর নির্যাতিতা যুবতী নিধি কাশ্যপ এবং অভিযুক্ত যুবক অমরজিৎ কাশ্যপ দু’জনেই হিন্দু এবং একই পরিবারের সদস্য। চলতি বছরের ১৫ মে উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগরের এস ডি কলেজে ব্যক্তিগত বিবাদের জেরে নিধিকে মারধর করে অমরজিৎ।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করার সময় আমরা সেটির ফ্রেমের উপর ‘এস ডি কলেজ, মুজাফফরনগর’ লেখা একটি ওয়াটার মার্ক দেখতে পাই। সেই সূত্র ধরে ভিডিওটির সত্যতা জানতে একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করলে চলতি বছরের ১৭ মে একটি এক্স হ্যান্ডেলে এই একই ভিডিও পাওয়া যায়।
ভিডিওটি শেয়ার করে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগরের এস ডি ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে একজন বিএ পাঠরত ছাত্রীকে মারধর করে অমরজিৎ নামক এক যুবক। অভিযোগ, এই ঘটনার দু’দিন আগে নির্যাতিতা ছাত্রীর সঙ্গে তার এক সহপাঠীর ঝগড়া হয়। এরপর সেই সহপাঠী তার প্রেমিক অমরজিৎকে ঘটনটি সম্পর্কে জানালে সে কলেজে এসে নির্যাতিতা ছাত্রীকে মারধর করে। পুলিশ ইতিমধ্যে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে।
এরপর উক্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে এই সংক্রান্ত একাধিক প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এই সব প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভাইরাল ভিডিওর নির্যাতিতা ছাত্রীর নাম নিধি। অন্যদিকে অভিযুক্ত যুবককের নাম অমরজিৎ এবং তার প্রেমিকার নাম নিকিতা। এস ডি কলেজের অধ্যক্ষ সুধীর কুমার পুন্ডি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, নির্যাতিতা নিধি এবং অভিযুক্ত অমরজিৎ ও নিকিতা একে অপরের পরিচিত এবং সম্পর্কে আত্মীয়।
তিনি আরও জানিয়েছেন, ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই নিকিতাকে কলেজ থেকে সাসপেন্ড করার পাশাপাশি তার এবং বহিরাগত অমরজিতের বিরুদ্ধে নিউ মান্ডি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে আমরা কোনও প্রতিবেদনেই আক্রান্ত নিধি যে মুসলিম এবং সে অশ্লীল প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে মারধর করা হয়েছে বলে এমন কোনও তথ্য খুঁজে পাইনি।
তবে এরপর বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে আমরা উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগর জেলার নিউ মান্ডি থানার এসএইচও দীনেশ বাঘেলের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান, “ভাইরাল ভিডিওর নির্যাতিতা যুবতী নিধি কাশ্যপ এবং অভিযুক্ত যুবক অমরজিৎ কাশ্যপ দু’জনেই হিন্দু এবং একই পরিবারের সদস্য। ব্যক্তিগত বিবাদের জেরে চলতি বছরের ১৫ মে উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগর জেলার এস ডি কলেজে ঢুকে নিধিকে মারধর করে বহিরাগত যুবক অমরজিৎ। ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই আমরা অমরজিৎকে গ্রেফতার করে আইনত ব্যবস্থা নিয়েছি। এই ঘটনার সঙ্গে হিন্দু-মুসলিমের কোনও সম্পর্ক নেই।”
এর থেকে প্রমাণ হয় যে, সোশ্যাল মিডিয়ায় একই পরিবারের দুই হিন্দু যুবক-যুবতীর ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে মুসলিম যুবতীকে মারধর করেছে এক হিন্দু যুবক।
অশ্লীল প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ভিডিওটিতে একজন মুসলিম যুবতীকে বেধড়ক মারধর করছে এক হিন্দু যুবক।
ভিডিওর নির্যাতিতা যুবতী নিধি কাশ্যপ ও অভিযুক্ত যুবক অমরজিৎ কাশ্যপ দু’জনেই হিন্দু। এবং তারা একই পরিবারের সদস্য।