Advertisement

ফ্যাক্ট চেক: সম্প্রতি জলপাইগুড়িতে নিজের মেয়েকে বিয়ে করেছেন এক ব্যক্তি? জানুন প্রকৃত ঘটনা

সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করা হচ্ছে, সম্প্রতি জলপাইগুড়ি জেলার কাশিয়াজোড়া গ্রামের মুসলিম সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি নিজের কন্যা সন্তানকে বিয়ে করেছেন।

সুরাজউদ্দিন মণ্ডল
  • কলকাতা,
  • 12 Nov 2024,
  • अपडेटेड 4:41 PM IST

বিয়ে নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে কিছু ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। এদের মধ্যে অনেক রীতিই আমাদের কাছে একেবারেই স্বাভাবিক নয়। যেমন আফ্রিকার দেশ উগান্ডার বানিয়ানকোল নামক জনজাতির রীতি অনুযায়ী বিয়ের পর হবু জামাইয়ের সঙ্গে প্রথম রাত কাটান কনের মাসিপিসিরা। অন্যদিকে ভারতের প্রতিবেশী বাংলাদেশের মান্ডি উপজাতির মধ্যে রয়েছে একজন বাবার তাঁর নিজের মেয়েকে বিয়ে করার প্রচলন

এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার একটি বিশেষ বিয়ে সংক্রান্ত পোস্ট। যেখানে দাবি করা হচ্ছে, সম্প্রতি জলপাইগুড়ি জেলার কাশিয়াজোড়া গ্রামের মুসলিম সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি নিজের কন্যা সন্তানকে বিয়ে করেছেন। আর এই বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে, মেয়ের মা তথা ওই ব্যক্তির স্ত্রীর সম্মতিতেই।

উদাহরণস্বরূপ, কিছু ফেসবুক ব্যবহারকারী নিজের ওয়ালে একটি প্রতীকী ছবি ব্যবহার করে লিখেছেন, “আরবের মরু দস্যু বর্বর শাহাজাহান তার নিজের মেয়েকে বিয়ে করেছিল । এই ধরনের নোংরা ঘটনা এবার ঘটলো উত্তরবঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার কাশিয়াজোড়া গ্রামে 37 বছরের মু#লিম পিতা তার নিজের 19 বছরের কন্যাকে বিয়ে করলো। ঐ ব্যক্তির আগের স্ত্রী তথা মেয়ের মা এই বিয়েতে খুব খুশি এবং তার বক্তব্য হচ্ছে -- এটা আল্লাহর আদেশে হয়েছে।” (সব বানান অপরিবর্তিত।) এই একই দাবি-সহ আরও পোস্ট দেখতে এখানে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল দাবিটি অর্ধসত্য ও বিভ্রান্তিকর। কারণ সাম্প্রতি নয় বরং ১৭ বছর আগে ২০০৭ সালে জলপাইগুড়ির কাশিয়াজোড়া গ্রামে এক মুসলিম ব্যক্তি তার নিজের মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন।

কীভাবে জানা গেল সত্য?

সম্প্রতি জলপাইগুড়ির কোনও ব্যক্তি তার নিজের মেয়েকে বিয়ে করে থাকলে সেই সংক্রান্ত খবর অবশ্যই প্রথম শ্রেণির বাংলা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হবে। তাই ভাইরাল দাবির সত্যতা জানতে আমরা এই সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চ করি। কিন্তু সেই সার্চে এমন কোনও নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন বা তথ্য পাওয়া যায়নি যা থেকে এই দাবির সত্যতা প্রমাণ হয়।

Advertisement

তবে আমরা আমাদের কিওয়ার্ড সার্চের সময় আজ থেকে প্রায় ১৭ বছর আগে ২০০৭ সালের ২০ নভেম্বর দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়াতে সাংবাদিক পিনাক প্রিয়া ভট্টাচার্যের লেখা এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই। সেই প্রতিবেদনে প্রদত্ত তথ্যের সঙ্গে ভাইরাল পোস্টের প্রায় হুবহু মিল রয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জলপাইগুড়ির কাশিয়াজোড়া গ্রামের আফাজুদ্দিন আলি নামক ৩৬ বছরের এক ব্যক্তি নিজের ১৫ বছর বয়সী নাবালিকা মেয়েকে বিয়ে করেন। অভিযুক্তের দাবি, তিনি ঈশ্বরের নির্দেশে এই বিয়ে করেছেন। আশ্বর্চের বিষয় হল, এই বিয়ের প্রধান সাক্ষী ছিলেন নির্যাতিতা মেয়ের মা তথা ওই ব্যক্তির স্ত্রী।

এরপর এবিষয়ে বিস্তারিত জনতে ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেকের তরফে দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়ার সাংবাদিক পিনাক প্রিয়া ভট্টাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি আমাদের জানান, “সাম্প্রতিক সময়ের দাবি করে জলপাইগুড়ির কাশিয়াজোড়া গ্রামে এক ব্যক্তির তার নিজের মেয়েকে বিয়ের যে ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করা হচ্ছে সেটি সঠিক নয়। আসলে ঘটনাটি ঘটেছিল ২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে। সেই সময় আমি নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে এ বিষয়ে খবর করেছিলাম এবং তখন মেয়েটির বয়স ছিল ১৫ বছর, ১৯ বছর নয়।” 

তিনি আরও জানান, “অভিযুক্ত আফাজুদ্দিনের মেয়ে তথা নির্যাতিতা নাবালিকা গর্ভবতী হয়ে পড়লে স্থানীয় মানুষদের সন্দেহ তৈরি হয়। তখন তারা ওই নাবালিকাকে প্রশ্ন করে প্রকৃত ঘটনা জানতে পারে। এরপর উত্তেজিত জনতা তাদের উপরে চড়াও হলে তারা বানারহাট থানার দ্বারস্থ হয়। পুলিশ আফাজুদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে দাবি করে, ঈশ্বর বা আল্লাহের স্বপ্নাদেশের কারণেই সে নিজের মেয়েকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পরবর্তীতে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের না হওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।”

এরপর সাম্প্রতিক সময়ে জলপাইগুড়ি জেলায় এহেন কোনও ঘটনা ঘটেছে কিনা সে বিষয়ে জানতে আমরা জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ আইপিএস সুপার সমীর আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান, “সম্প্রতি জলপাইগুড়ি জেলাতে কোনও বাবার তরফে তার মেয়েকে বিয়ে করার ঘটনা ঘটেনি। যে ঘটনাটি সাম্প্রতিক দাবিতে ভাইরাল করা হচ্ছে তা ১৭ বছরের পুরনো ঘটনা।”

এর থেকে প্রমাণ হয় যে, জলপাইগুড়ির কাশিয়াজোড়া গ্রামে বাবার তরফে তার মেয়েকে বিয়ে করার ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ১৭ বছরের পুরনো ঘটনা।

Fact Check

Claim

সম্প্রতি জলপাইগুড়ি জেলার কাশিয়াজোড়া গ্রামের মুসলিম সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি নিজের কন্যা সন্তানকে বিয়ে করেছেন।

Conclusion

ভাইরাল দাবিটি অর্ধসত্য ও বিভ্রান্তিকর। কারণ সাম্প্রতি নয় বরং ১৭ বছর আগে ২০০৭ সালে জলপাইগুড়ির কাশিয়াজোড়া গ্রামে এক মুসলিম ব্যক্তি তার নিজের মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  1. কাক: অর্ধসত্য
  2. একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  3. অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Do you think a messenge is a fake ?
To know the truth, send that to our Number73 7000 7000 you can email on factcheck@intoday.com
Read more!
Advertisement
Advertisement