সিঙ্গাপুরে নর্থ-ইস্ট ফেস্টিভ্যালে যোগ দিতে গিয়েছিলেন সঙ্গীত শিল্পী জুবিন গর্গ। সেখানেই গত ১৯ সেপ্টেম্বর সাঁতার কাটার সময় রহস্যজনকভাবে জলে ডুবে মৃত্যু হয় তাঁর। যদিও গায়কের মৃত্যুর সঠিক কারণ ঘিরে দানা বাঁধছে একাধিক রহস্য। ইতিমধ্যে, মৃত্যুর তদন্তে নেমে অনুষ্ঠানের আয়োজক শ্যামকানু মহন্তকে গ্রেফতার করেছে অসম পুলিশ। আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্য সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে। যেখানে কয়েকশো মানুষকে একটি অগ্নিদগ্ধ বাড়ির সামনে জড়ো হতে এবং তাদের মধ্যে অনেকেই মোবাইলে অগ্নিকাণ্ডের ভিডিও করতে দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, অসমের বিক্ষুব্ধ জনতা গায়ক জুবিন গর্গের রহস্য মৃত্যুর অন্যতম অভিযুক্ত শ্যামকানু মহন্তের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, দেশের কিংবদন্তি গায়ক জুবিন গার্গ এর রহস্যজনক খুনে অভিযুক্ত শ্যাম কানুর বাড়ি জালিয়ে দিয়েছে আসামের ক্ষিপ্ত জনতা॥ এই বিশ্বখ্যাত গায়ক তথা পরোপকারী, সমাজসেবী জুবিন গার্গ এর অকাল প্রয়াণ কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেননা আসামের জনগণ।” (সব বানান অপরিবর্তিত)
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিও’র বাড়িটি জুবিন গর্গের মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার শ্যামকানু মহন্তের নয়। বরং সেটি নেপালের ভক্তপুরে অবস্থিত দেশটির প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির ব্যক্তিগত বাসভবনে বিক্ষোভকারীদের অগ্নিসংযোগের দৃশ্য।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল ভিডিও এবং দাবির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম সংগ্রহ করে সেগুলি গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর একটি টিকটক হ্যান্ডেলে একটি ভিডিও পাওয়া যায়। যার সঙ্গে ভাইরাল ভিডিও’র অগ্নিদগ্ধ ভবনটির হুবহু মিল পাওয়া যায়। টিকটক হ্যান্ডেলটিতে ভিডিওটি শেয়ার করে সেটিকে নেপালের জেন-জি বিক্ষোভের দৃশ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য, সঙ্গীত শিল্পী জুবিন গর্গের মৃত্যু হয়েছিল গত ১৯ সেপ্টেম্বর। কিন্তু ভাইরাল অগ্নিদগ্ধ ভবনটির ভিডিও উক্ত টিকটক হ্যান্ডেলে তারও প্রায় দশদিন আগে পোস্ট করা হয়েছিল। যা থেকে অনুমান করা যায় যে অগ্নিদগ্ধ ভবনটির সঙ্গে জুবিন গর্গের মৃত্যুর ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই। তাই এরপর ভিডিও'র ভবনটি সম্পর্কে জানতে এই সংক্রান্ত পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর নেপাল ভিত্তিক এক চিত্র সাংবাদিকের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে ভাইরাল অগ্নিদগ্ধ ভবনের বেশ কয়েকটি ছবি পাওয়া যায়। যার সঙ্গে ভাইরাল ভিডিওর ফ্রেমের হুবহু মিল রয়েছে। ছবিগুলি শেয়ার করে ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, “প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির বাড়িতে আগুন।”
উপরে উক্ত সূত্র ধরে একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করলে ভাইরাল অগ্নিদগ্ধ ভবনের একাধিক ছবি ও ভিডিও-সহ একাধিক সংবাদমাধ্যমে এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেইসব প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ৯ সেপ্টেম্বর সরকার বিরোধী বিক্ষোভের সময় নেপালের ভক্তপুরের বালকোটে অবস্থিত দেশটির প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির ব্যক্তিগত বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। ৮ সেপ্টেম্বর ওলির পদত্যাগের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বিক্ষোভকারীরা তাঁর ব্যক্তিগত বাসভবনটি ঘিরে ফেলে এবং তাতে লুটপাট চালায়। এবং শেষে ভবনটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পাশাপাশি, এখানে উল্লেখ্য আমরা আমাদের অনুসন্ধানে শ্যামকানু মহন্তের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া সংক্রান্ত কোনও তথ্য বা প্রতিবেদন খুঁজে পাইনি।
এর থেকে প্রমাণ হয় যে, জুবিন গর্গের রহস্য মৃত্যুর অন্যতম অভিযুক্ত শ্যামকানু মহন্তের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার দৃশ্য দাবিতে ছড়ানো হচ্ছে নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির ব্যক্তিগত বাসভবনের ভিডিও।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, অসমের বিক্ষুব্ধ জনতা গায়ক জুবিন গর্গের রহস্য মৃত্যুর অন্যতম অভিযুক্ত শ্যামকানু মহন্তের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
ভাইরাল ভিডিও’র বাড়িটি জুবিন গর্গের মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার শ্যামকানু মহন্তের নয়। বরং সেটি নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির ব্যক্তিগত বাসভবনে বিক্ষোভকারীদের অগ্নিসংযোগের দৃশ্য।