সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একজন মধ্যবয়সী মহিলা এবং একটি অল্প বয়স্ক ছেলের ছবি বেশ ভাইরাল হয়েছে। ছবিটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, পাকিস্তানের বাসিন্দা সম্পর্কে মা-ছেলে এই দু’জন একে অপরকে বিয়ে করেছেন।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ছবিটি শেয়ার করে লিখেছেন, “যেভাবে #মাদার৳#দ গালির উৎপত্তি হল!! এটা কিন্তু ব্যাপার পাকিস্তানে এইকাজ বেশরিয়তি বলে কেউ চিল্লাচ্ছে না, বরং প্রশংসা পাচ্ছে। তার মানে আম্মুকে নিকাহ করে ইয়ে করা ইস্লাম সম্মত।” (সব বানান অপরিবর্তিত।) পোস্টটির আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে আব্দুল আহাদ নামক ওই পাকিস্তানি যুবক তাঁর মা'কে বিয়ে করেনি। বরং সে অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে মা'কে দ্বিতীয় বার বিয়ে দিয়েছে।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
ভাইরাল দাবির সত্যতা জানতে ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর একটি এক্স হ্যান্ডেলে এই একই ছবি ও দাবি-সহ হিন্দিতে একটি পোস্ট পাওয়া যায়। তবে পোস্টটির কমেন্ট সেকশন ভালো করে পর্যবেক্ষণ কররার সময় আমরা লক্ষ্য করি সেখানে একজন ইউজার লিখেছেন, দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যে ও বিভ্রান্তিকর। আসলে ছেলেটি তাঁর মা'কে নিজে বিয়ে করেনি বরং সে অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে দ্বিতীয় বার মায়ের বিয়ে দিয়েছে।
এরপর উক্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে কিওয়ার্ড সার্চ করলে এই সংক্রান্ত একাধিক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়ছে, পাকিস্তানের আব্দুল আহাদ নামক এক যুবক তাঁর মা'কে অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে দ্বিতীয় বার বিয়ে দিয়েছে।আসলে, বিগত ১৮ বছর যাবৎ আহাদকে একাই মানুষ করেছেন তাঁর মা। তাই নিজের মায়ের একাকিত্ব ও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দ্বিতীয় বার বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আহাদ।
২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর আব্দুল আহাদ তাঁর ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে একটি ভিডিও শেয়ার করে মা'কে বিয়ে দেওয়া সংক্রান্ত খবরটি জানায়। সেখানে সে উল্লেখ করেছে, “গত ১৮ বছর ধরে আমি তাঁকে (মা) ভাল রাখার চেষ্টা করছি। আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করছি, যাতে সে ভালভাবে জীবন কাটাতে পারে। আমাদের জন্য সে তাঁর পুরো জীবন উৎসর্গ করেছে। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁরও শান্তিপূর্ণ জীবন প্রাপ্য। তাই ছেলে হিসেবে আমার মনে হয়েছে আমি সঠিক কাজ করেছি। ১৮ বছর পর মা যখন তাঁর জীবনে দ্বিতীয় ভালবাসাকে সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তখন আমি মায়ের পাশে দাঁড়াই।”
এরপর ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। তারপর আবার আহাদের কণ্ঠে শোনা যাচ্ছে, “অন্য কাউকে আমার মায়ের প্রথম অগ্রাধিকার হতে দেওয়া খুব কঠিন ছিল। আমি মনে করি এটি আমার জীবনের সবচেয়ে নিঃস্বার্থ সিদ্ধান্ত। কারণ তিনিই একমাত্র মানুষ যাঁকে আমি আমার বলতে পারি।”
২০২৪ সালের ২০ ডিসেম্বর ভাইরাল পোস্টে ব্যবহৃত ছবি-সহ মায়ের বিয়ে নিয়ে অন্য একটি পোস্টে আহাদ লিখেছেন, “সঙ্কোচের কারণে মায়ের বিয়ের খবর প্রকাশ্যে আনতে আমার বেশ কিছুদিন সময় লেগেছে। কিন্তু আপনারা সকলেই আমাকে যে পরিমাণ ভালবাসা দিয়েছেন এবং যেভাবে আমার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন, তা সত্যিই অভাবনীয়। আমি আম্মাকে (মা) বলেছি আপনারা আমাদের সিদ্ধান্তকে কতটা সমর্থন করেছেন এবং সম্মান জানিয়েছেন। এর জন্য আমরা দু'জনেই আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ।”
এর থেকে প্রমাণ হয় যে পাকিস্তানি যুবক আব্দুল আহাদের নিজের মা'কে বিয়ে করার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যে ও বিভ্রান্তিকর। আসলে সে অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে দ্বিতীয় বার তাঁর মায়ের বিয়ে দিয়েছে।
পাকিস্তানে নিজের মা'কে বিয়ে করেছে এক যুবক।
আব্দুল আহাদ নামক ওই পাকিস্তানি যুবক তার মা'কে বিয়ে করেনি। বরং সে অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে মা'কে দ্বিতীয় বার বিয়ে দিয়েছে।