বাংলায় প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর, ২০১৫ সালে স্কুল পড়ুয়াদের জন্য ‘সবুজ সাথী’ নমাক একটি প্রকল্প চালু করে তৃণমূল সরকার। যে প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল সরকারি ও সরকারি সাহায্য প্রাপ্ত স্কুলের নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের নতুন সাইকেল প্রদান করা। সেই মতো ওই বছরের অক্টোবর মাসে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় পড়ুয়াদের হাতে প্রথম সাইকেল তুলে দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ৯ বছরে রাজ্যের কয়েক লক্ষ্য পড়ুয়া পেয়েছে সবুজ সাথীর সাইকেল।
তবে সম্প্রতি এই সবুজ সাথী প্রকল্প নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বিশেষ পোস্ট ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দাবি করা হচ্ছে, সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেল ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। অর্থাৎ এই পোস্ট অনুযায়ী যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা ইতিমধ্যে সবুজ সাথীর সাইকেল পেয়েছে তাদের সেই সাইকেল ফিরিয়ে দিতে হবে।
উদাহরণস্বরূপ, এক ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী ভিডিয়ো আকারে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। ছবিটিতে লেখা আছে, “BREAKING NEWS: সবুজ সাথী সাইকেল ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিলো কলকাতা হাইকোর্ট...!!” ভিডিয়োটি পোস্ট করে তার ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “এবার কি হবে আমার।” (ছবির লেখা এবং ক্যাপশনের সব বানান অপরিবর্তিত।) এমনই একটি পোস্টের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেল ফিরেয়ে দেওয়ার কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশটি ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
প্রথমত, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি অন্যতম জনমুখী প্রকল্প হল সবুজ সাথী। যার মাধ্যমে লক্ষ-লক্ষ ছাত্র-ছাত্রীকে সাইকেল দেওয়া হয়। আর সেই সাইকেল ফিরেয়ে দেওয়ার জন্য কলকাতা হাইকোর্ট কোনও নির্দেশ দিলে সেই সংক্রান্ত খবর অবশ্যই প্রথম শ্রেণির সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হত। কিন্তু আমরা আমাদের কিওয়ার্ড সার্চে এমন কোনও নির্ভরযোগ্য তথ্য বা প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি যা থেকে প্রমাণ হয় যে, কলকাতা হাইকোর্ট সবুজ সাথীর সাইকেল ফিরেয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
তবে আমরা আমাদের সার্চে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দ্য ওয়ালে সবুজ সাথী নিয়ে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই। যেখানে লেখা হয়েছে, নরেন্দ্রপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইমতিয়াজ আহমেদ টাকার বিনিময়ে সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেল দিয়েছেন। কলকাতা হাইকোর্টে এক মামলাকারীর আইনজাবী দাবি করেছেন, পড়ুয়া পিছু ৩০০ টাকার হিসেবে ৫,০০০ কুপন বিলি করা হয়েছিল স্কুলের তরফে। উদ্ধার হওয়া কুপনগুলি বর্তমানে টিচার ইনচার্জের কাছে রাখা আছে। এই ঘটনা শোনার পর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। এরপর তিনি তদন্তের অগ্রগতি জানতে পরবর্তি শুনানির দিন নরেন্দ্রপুর থানার আইসিকে সশরীরে এবং বারুইপুর জেলা পুলিশ সুপারকে ভার্চুয়ালি হাজির থাকার নির্দেশ প্রদান করেন।
এর পাশাপাশি আমরা আমাদের কিওয়ার্ড সার্চে সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেল নিয়ে গত ২০ এপ্রিল আনন্দবাজার পত্রিকাতে অন্য একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই। সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের হাটে বিক্রি হচ্ছে সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেল! নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদ জেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া যে সব পুরনো সাইকেল কেনাবেচার দোকান রয়েছে, সেখানেই মিলছে এইসব সাইকেল। তবে আনন্দবাজার ও দ্য ওয়ালের প্রতিবেদনের কোথাও সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেল ফিরিয়ে দেওয়ার বা প্রকল্পটি বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট, এই সংক্রান্ত কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
এর থেকে প্রমাণ হয় যে সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেল ফিরেয়ে দেওয়ার কোনও নির্দেশ দেয়নি কলকাতা হাইকোর্ট। কোনও নির্ভরযোগ্য তথ্য বা সূত্র ছাড়া এই দাবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে।
সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেল ফিরেয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেল ফিরেয়ে দেওয়ার কোনও নির্দেশ দেয়নি কলকাতা হাইকোর্ট।