বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের পর সংখ্যালঘুদের উপরে হামলার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৮৮টি মামলা দায়ের ও ৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এই সংক্রান্ত একটি ভিডিও। যেখানে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় গোলাপি পোশাক পরিহিতা একটি মেয়েকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি তাকে ঘিরে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছেন বেশকিছু মানুষ।
ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশে অষ্টম শ্রেণির এক নাবালিকা হিন্দু ছাত্রীকে প্রথমে অপহরণ করে মাসের পর মাস ধর্ষণ করা হয়। পরবর্তীতে তাকে খুন করে দেহ তার বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় ফেলে দিয়ে যায় ইসলামপন্থীরা।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “অষ্টম শ্রেণীর বাংলাদেশী হিন্দু মেয়েকে অপহরণ।কয়েক মাস ধরে দিনরাত ধর্ষন করা হয়েছে, তার চোখ ফেটে গেছে চোখের রক্তের শিরা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে শরীরে বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন।অবশেষে বাংলাদেশী ইসলামপন্থীরা হত্যা করে তার বাড়ির পাশে ফেলে গেছে।” (সব বানান অপরিবর্তিত।)
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওর মেয়েটি হিন্দু নয় বরং মুসলিম। সে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার আগরদাড়ি গ্রামের রবিউল ইসলাম রুবেলের ৯ বছর বয়সী নাবালিকা কন্যা নুসরাত জাহান রাহি। চলতি বছরের ১৪ ডিসেম্বর বাড়ি সংলগ্ন একটি পুকুর থেকে তার হাত-পা বাঁধা দেহ উদ্ধার হয়। প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হয়, তাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
ভাইরাল দাবি ও ভিডিওর সত্যতা জানতে সেটির কি-ফ্রেম সার্চ করলে ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর একটি ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে এই একই ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটি শেয়ার করে সেখানে লেখা হয়েছে, “সাতক্ষীরা জেলা, আশাশুনি থানা, কুল্যা ইউনিয়নের আগরদাড়ী গ্রামের রুবেল ভাইয়ের মেয়ে, তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রী নূসরাত জাহান রাহীকে ধর্ষন করে হত্যা করা হয়েছে। খুব জঘন্য, নিন্দনীয় কাজের যথাযথ বিচার চাই।” ১৫ ডিসেম্বর একটি এক্স হ্যান্ডেল থেকেও ভিডিওটি শেয়ার করে এই একই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
এরপর উক্ত সূত্র ধরে পরবর্তী সার্চ করলে ওই নাবালিকার একটি ছবি-সহ ‘বাংলাদেশ-২৪ অনলাইন’ নামক বাংলাদেশ ভিত্তিক একটি পোর্টালে ২০২৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, “সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলায় পুকুর থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্তায় নুসরাত জাহান রাহি (৯) নামে দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়ুয়া এক শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার (১৪ডিসেম্বর) কুল্যা ইউনিয়নের আগরদাড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। রাহি একই এলাকার রবিউল ইসলাম রুবেল মেয়ে। সাতক্ষীরা সহকারী পুলিশ সুপার (তালা ও আশাশুনি সার্কেল) হাসানুর রহমান জানান, এ ঘটনায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে থানায় আনা হয়েছে। বর্তমানে তার জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।”
এরপর এই সংক্রান্ত পরবর্তী সার্চে ২০২৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম সময় টিভির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে এই সংক্রান্ত একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, “সাতক্ষীরার আশুশুনিতে হাত-পা বাঁধা পানিতে ভাসমান অবস্থায় নুসরাত নামে ৯ বছরের এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, ধর্ষণের ওই শিশুকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ একজনকে আটক করেছে। শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলার কুল্যা ইউনিয়নের আগোরদাড়ি গ্রামে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত শিশু নুসরাত আগোরদাড়ি গ্রামের রবিউল ইসলাম রুবেলের মেয়ে।”
ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, “নুসরাতের পরিবারের সদস্যরা জানান, শনিবার সকাল ১১টার পর বাড়ির লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজি করে নুসরাতকে না পেয়ে আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে সংবাদ নিতে থাকে। দুপুর ১টার দিকে পাশের সালমান আজিজের পুকুরে ভাসমান অবস্থায় তার মরদেহ দেখতে পায় আজিজের স্ত্রী। পরে থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে।”
এর থেকে প্রমাণ হয় যে বাংলাদেশে হিন্দু ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে দাবি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় মুসলিম নাবালিকার মৃতদেহের ভিডিও শেয়ার করা হচ্ছে।
ভিডিওটিতে বাংলাদেশে অষ্টম শ্রেণির এক হিন্দু ছাত্রীকে প্রথমে ধর্ষণ এবং পরবর্তীতে তাকে খুন করে দেহ তার বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় ফেলে দিয়ে গেছে ইসলামপন্থীরা।
ভাইরাল ভিডিওর মেয়েটি হিন্দু নয় বরং মুসলিম। সে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার আগরদাড়ি গ্রামের রবিউল ইসলাম রুবেলের ৯ বছর বয়সী নাবালিকা কন্যা নুসরাত জাহান রাহি।