সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে। যেখানে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি একটি হোটেল রুম থেকে এক মহিলা ও এক যুবককে জোরপূর্বক বের করতে দেখা যাচ্ছে। এমনকি তারা রুম থেকে বের করে ওই যুবকটিকে বেধড়ক মারধরও করছে। অন্যদিকে যুবকের সঙ্গে থাকা মহিলা হাত জোড় তাদেরকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করছেন। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, লাভ জিহাদের ফাঁদে ফেলার লক্ষ্যে এক হিন্দু বিবাহিতা মহিলাকে হোটেলে নিয়ে যায় এক মুসলিম যুবককে বেধড়ক মারধর করেছে বজরং দলের সদস্যরা।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “কাটুয়া এক হিন্দু বিবাহিত মহিলাকে লাভ জিহাদের ফাঁদে ফেলে OYO তে নিয়ে যায়, সেই খবর বজরং দল পেয়ে যায়। দেশের শক্তি বজরং দল।” (সব বানান অপরিবর্তিত) এখানে উল্লেখ্য, ‘কাটুয়া’ কিংবা ‘আব্দুল’ এই জাতীয় শব্দগুলি মুসলিমদের বোঝানোর জন্য ব্যঙ্গাত্মকভাবে ব্যবহার করা হয়।
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের ৬ আগস্ট আগ্রার শামসাবাদের হোটেলের এই ভিডিওর যুবক এবং মহিলা কেউই হিন্দু নয় বরং উভয়ই মুসলিম।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
ভাইরাল দাবি ও ভিডিওটির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৫ সালের ৯ আগস্ট Live Hindustan-র অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে এই একই ভিডিও-সহ একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ৬ আগস্ট আগ্রার শামসাবাদের টোলা মহল্লার বাসিন্দা সালমান একান্তে কিছু সময় কাটানোর জন্য তারই এলাকার এক মহিলাকে নিয়ে শামসাবাদের শহরের ডিপি হোটেলের একটি রুমে ওঠে। কিন্তু সালমানের মহিলা সঙ্গী একজন হিন্দু এই সন্দেহে বজরং দলের সদস্যরা ওই হোটেলে পৌঁছে সালমানকে রুম থেকে বার করে মারধর করে।
এরপর উক্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে ভাইরাল ভিডিও তথা এর স্ক্রিনশট-সহ একাধিক সংবাদমাধ্যমে এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই সব প্রতিবেদন থেকে জানা, প্রথমিকভাবে বজরং দলের সদস্যরা সালমানের মহিলা সঙ্গীকে একজন হিন্দু ভেবে লাভ জিহাদের অভিযোগ তুলে সালমানকে মারধর করে। কিন্তু পুলিশ পরবর্তীতে তদন্ত করে দেখে যে ওই মহিলা এবং অভিযুক্ত যুবক সালমান একই সম্প্রদায়ের মানুষ।
তবে বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে এরপর আমরা শামসাবাদ থানার ক্রাইম বিভাগের ইনেসপেক্টর মহম্মদ আলি খানের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, “এই ঘটনা যে যুবক এবং মহিলাকে ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে তাদের কেউই হিন্দু নয়। বরং দু’জনেই মুসলিম। পাশাপাশি এই ঘটনার সঙ্গে লাভ জিহাদের কোনও বিষয় জড়িত নয়। একটি ভুল বোঝাবুঝি থেকে এই বিশৃঙ্খলার সূত্রপাত হয়। তবে হোটল মালিকের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা একটি এফআইআর দায়ের করেছি এবং ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” ওই মহিলার নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁর নাম প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হচ্ছে না।
এর থেকে প্রমাণ হয় যে, হিন্দু মহিলাকে হোটেলে নিয়ে যাওয়ায় মুসলিম যুবককে মারধর দাবিতে শেয়ার করা হচ্ছে একই সম্প্রদায়ের যুবক ও মহিলার ভিডিও।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এক হিন্দু বিবাহিতা মহিলাকে হোটেলের রুমে নিয়ে যাওয়ায় এক মুসলিম যুবককে বেধড়ক মারধর করেছে বজরং দলের সদস্যরা।
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের ৬ আগস্ট আগ্রার শামসাবাদের হোটেলের এই ভিডিওর যুবক এবং মহিলা কেউই হিন্দু নয় বরং উভয়ই মুসলিম।