সম্প্রতি ভারতের কাছে হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বতী সরকার। এরই মধ্যে গতকাল সন্ধ্যায় হাসিনার পাসপোর্ট বাতিল করেছে ইউনুস সরকার। আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ছবি। যেখানে দেখা যাচ্ছে একটি বরফাবৃত জায়গায় গাড়ি থেকে নামছেন হাসিনা। অন্যদিকে গাড়ির দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন নরেন্দ্র মোদী।
ছবিটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, হিন্দুস্তান টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সঙ্গে নিয়ে লাদাখ সফর করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ছবিটি শেয়ার করে লিখেছেন, “ভারত চিন সিমান্ত উত্তেজনার মধ্যে লাখাদে গিয়েছে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী - হিন্দুস্তান টাইমস।” (সব বানান অপরিবর্তিত।)
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ছবিটি সম্পাদিত। মূল ছবিটি ২০০৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত একটি সেমিনারে যোগ দেওয়ার মুহুর্তে শেখ হাসিনার ছবিটি তোলা হয়। পরবর্তীতে সেই ছবিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি এডিট করে বসানো হয়েছে।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে লাদাখ সফর করলে সেই সংক্রান্ত খবর অবশ্যই ভারত এবং বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হত। কিন্তু এই সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চ করলে হিন্দুস্তান টাইমস বা অন্য কোনও সংবাদমাধ্যমে এমন কোনও নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন বা তথ্য পাওয়া যায়নি যা থেকে এই দাবির সত্যতা প্রমাণ হয়। যা থেকে অনুমান করা যায় যে ভাইরাল দাবিটি মিথ্যে বা বিভ্রান্তিকর হলেও হতে পারে।
তবে এরপর এই সংক্রান্ত পরবর্তী অনুসন্ধানে ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে larseklund.in নামক একটি ওয়েবাসাইটে ভাইরাল ছবির সঙ্গে সাদৃশ্য যুক্ত শেখ হাসিনার একটি ছবি-সহ “লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের উপর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতা” শীর্ষক একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি সেখানে আয়োজিত একটি সেমিনারে ”Climate Change in Bangladesh – Facing the Challenges” বিষয়ক একটি বক্তৃতাও প্রদান করেন তিনি।
এরপর উক্ত সূত্র ধরে পরবর্তী সার্চ করলে সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ওয়েবসাইট SASNET বা সুইডিশ সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ নেটওয়ার্কে প্রকাশিত এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনের আর্কাইভ সংস্করণ পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদনেও এই একই ছবি-সহ একই তথ্য পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৯ সালের ৭-১৯ ডিসেম্বর ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেন আয়োজিত জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে (COP15) অংশগ্রহণ করেন হাসিনা। সেই সফরকালে তিনি ১৯ ডিসেম্বর প্রতিবেশী দেশ সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেন এবং সেখানে আয়োজিত জলবায়ু বিষয়ক একটি সেমিনারে বক্তৃতাও দেন।
larseklund.in এবং SASNET-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত শেখ হাসিনার ছবির সঙ্গে ভাইরাল ছবিটিকে পাশাপাশি রেখে তুলনা করলে লক্ষ্য করা যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি ব্যতীত দুটির ছবির সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে। যা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় ভাইরাল ছবিটিতে শেখ হাসিনার পাশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবিটি এডিট করে বসানো হয়েছে। নিচে উভয় ছবির তুলনা দেখা যাবে।
এরপর এই সংক্রান্ত পরবর্তী সার্চে ২০০৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম বিডি নিউজ-২৪-এ লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে হাসিনার বক্তৃতা সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। পাশাপাশি বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত বিভিন্ন বিদেশ সফরের বক্তৃতার প্রতিলিপি পাওয়া যায়। ২২২ পেজের সেই প্রতিলিপির ২৮ নং পেজে লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে হাসিনার বক্তৃতা সংক্রান্ত প্রতিলিপিটিও খুঁজে পাওয়া যায়।
এর থেকে প্রমাণ হয় যে, বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একটি সম্পাদিত ছবি শেয়ার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।
ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সঙ্গে নিয়ে লাদাখ সফর করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
ভাইরাল ছবিটি সম্পাদিত। শেখ হাসিনার মূল ছবিটি ২০০৯ সালে সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তোলা হয়েছিল। পরবর্তীতে সেই ছবিতে নরেন্দ্র মোদীর ছবি এডিট করে বসানো হয়েছে।