Advertisement

ফ্যাক্ট চেক: নেপালের পশুপতিনাথ মন্দিরে হামলার দাবিতে ছড়াল ধর্মীয় উৎসবের পুরনো ভিডিও 

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওর সঙ্গে বর্তমানে নেপালে চলতে থাকা সরকার বিরোধী বিক্ষোভের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং এটি ২০২৫ সালের জুলাই মাস থেকেই ইন্টারনেটে রয়েছে এবং এতে পাহাচারে উৎসবের সময় পশুপতিনাথ মন্দিরে জোর করে প্রবেশের একটি ঐতিহ্য বা রীতি দেখানো হয়েছে।

সুরাজউদ্দিন মণ্ডল
  • কলকাতা,
  • 11 Sep 2025,
  • अपडेटेड 4:25 PM IST

‘জেন-জি’দের বিক্ষোভে উত্তাল নেপাল। এই হিংসাত্মক আন্দলোনের জেরে ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। বিক্ষোভকারীরা একাধিক সরকারি ভবন, নেপালের সংসদ এবং অনেক নেতার বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। বিক্ষোভের ফলে এখনও পর্যন্ত ২২ জন নিহত এবং ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়েছে নেপালের বিখ্যাত পশুপতিনাথ মন্দিরের একটি ভিডিও। যেখানে কয়েকজন ব্যক্তিকে জোর করে মন্দিরের বন্ধ দরজা ভাঙার চেষ্টা করতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, নেপালে সরকার বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন বিক্ষোভকারীরা পশুপতিনাথ মন্দিরে হামলা চালিয়ে এর দরজা ভাঙার চেষ্টা করেছে।

উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “চাড্ডি gulo কোথায় গেল ‼️নেপালের সরকারের বিরোধী General -Z রা বাংলাদেশের থেকেও ভয়ঙ্কর। পরিকল্পিত প্রপাগান্ডা। হিন্দুদের ঐতিহ্যশালী পশুপতি মন্দিরেও লুটপাট করতে হাজির! কারা যেন সব এখানে লম্ফঝম্প করছে নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির উপর আক্রমণ হচ্ছে বলে!! আমাদের সাবধান থাকা দরকার। সাম্রাজ্য বাদ জানান দিয়ে চলেছে, তাদের বিরুদ্ধে গেলে কি হতে পারে ?।” (সব বানান অপরিবর্তিত)

আরও পড়ুন

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওর সঙ্গে বর্তমানে নেপালে চলতে থাকা সরকার বিরোধী বিক্ষোভের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং এটি ২০২৫ সালের জুলাই মাস থেকেই ইন্টারনেটে রয়েছে। এখানে একটি ধর্মীয় উৎসব উদযাপনের সময় পশুপতিনাথ মন্দিরে জোর করে প্রবেশের একটি ঐতিহ্য বা রীতি দেখানো হয়েছে।

সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে

ভাইরাল দাবি ও ছবির সত্যতা জানতে সেটি গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৫ সালের ১৪ জুলাই ‘হামরো যাত্রা’ নামক একটি ফেসবুক পেজে এই একই ভিডিও-সহ একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টের ক্যাপশন নেপালি ভাষায় লেখা হয়েথে, "পশুপতিনাথ মন্দিরের এই শোভাযাত্রা সম্পর্কে কেউ জানেন? এটি কোন শোভাযাত্রা এবং কখন হয়? কেন এতে গেটে ওঠে?" যা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে ভিডিওটি ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে নেপালে শুরু হওয়া বিক্ষোভের অনেক আগের।

Advertisement

ফেসবুক পোস্টটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করার সময় আমরা লক্ষ্য করি এর কমেন্ট সেকশনে অনেকেই ভিডিওটিকে নকশাল ভগবতী যাত্রার বলে উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি, তারা জানিয়েছেন, এই যাত্রায় জড়িত কিছু লোক পশুপতিনাথ মন্দিরের বন্ধ দরজায় উঠে জোর করে দরজা খুলে প্রবেশের চেষ্টা করেন, যা একটি ঐতিহ্য। 

উক্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে এই সংক্রান্ত অনুসন্ধান চালালে আমরা চলতি বছরের ২১ মার্চ অন্য একটি ফেসবুক প্রোফাইলে এই ঐতিহ্য বা রীতির সঙ্গে সম্পর্কিত আরেকটি ভিডিও খুঁজে পাই। সেই ভিডিওতেও ভাইরাল ভিডিওর মতো কিছু লোককে পশুপতিনাথ মন্দিরের দরজায় উঠে জোর করে এটি খোলার চেষ্টা করতে দেখা যায়। এমনকি ভিডিওর এক পর্যয়ে এই যাত্রার একটি রথ নিয়ে মন্দিরের দরজায় ধাক্কা মারতেও দেখা যাচ্ছে পুণ্যার্থীদের।

এরপর ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে আমরা ‘হামরো যাত্রা’ নামক ফেসবুক পেজের পরিচালক শ্যাম থা-র সঙ্গে যোগাযোগ করি। শ্যাম আমাদের জানান যে, “আমি কাঠমান্ডুর বাসিন্দা এবং পেশায় একজন ভিডিওগ্রাফার। মূলত আমি নেপালের বিভিন্ন মন্দির ও উৎসবের ভিডিও বানাই। এই ভিডিওটি আমি নিজে ২০২৫ সালের ৩০ মার্চ পশুপতিনাথ মন্দিরে রেকর্ড করেছিলাম।” 

পাশাপাশি তিনি আরও জানান, “এই ভিডিওর সঙ্গে নেপালের বর্তমান বিক্ষোভের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং এটি নেপালের পাহাচার নামক উৎসবের সময় অনুষ্ঠিত নকশাল ভগবতী যাত্রার। যা কাঠমান্ডুর নকশাল এলাকা থেকে শুরু হয়ে পশুপতিনাথ মন্দির পর্যন্ত যায়।” শ্যামের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, “প্রচলিত বিশ্বাস হল, ভগবান শিব এবং পার্বতীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে ভগবান শিব মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন, যার ফলে দেবী পার্বতীকে মন্দিরের বাইরে খেতে হয়েছিল কারণ ভগবান শিব তাকে প্রবেশ করতে দেননি। পাহাড়ে উৎসব পালিত হয় কারণ দেবী পার্বতীর বোন নকশাল পাগবতী এই ভুল বোঝাবুঝির কথা জানতে পেরেছিলেন। তাই, নকশালরা রথ নিয়ে পশুপতিনাথ মন্দিরে আসে এবং দরজা খোলার চেষ্টা করে।”

তবে এখানে উল্লেখ্য, কিছু সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, গত ৯ সেপ্টেম্বর কিছু বিক্ষোভকারী পশুপতিনাথ মন্দিরে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু নেপালি সেনাবাহিনী তাদের মন্দিরে প্রবেশ থেকে প্রতিহত করে এবং মন্দিরের নিরাপত্তা নিজের হাতে তুলে নেয়। প্রতিবেদন অনুসারে, সেনাবাহিনী আসার পর পশুপতিনাথ মন্দিরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

এর থেকে প্রমাণ হয় যে, কয়েক মাস আগে নেপালে উৎসবের সময় পশুপতিনাথ মন্দিরে জোর করে প্রবেশের একটি ভিডিওকে বিক্ষোভকারীদের তরফে মন্দিরে হামলা করা হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যে প্রচার করা হচ্ছে।

Fact Check

Claim

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, নেপালে সরকার বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন বিক্ষোভকারীরা পশুপতিনাথ মন্দিরে হামলা চালিয়ে এর দরজা ভাঙার চেষ্টা করেছে।

Conclusion

এটি একটি পুরনো ভিডিও এবং যেখানে একটি ধর্মীয় উৎসবের রীতি অনুযায়ী পুণ্যার্থীদের পশুপতিনাথ মন্দিরে জোর করে প্রবেশের ভিডিও দেখা যাচ্ছে। এর সঙ্গে নেপালের বর্তমান বিক্ষোভের কোনও সম্পর্ক নেই।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  1. কাক: অর্ধসত্য
  2. একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  3. অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Do you think a messenge is a fake ?
To know the truth, send that to our Number73 7000 7000 you can email on factcheck@intoday.com
Read more!
Advertisement
Advertisement