গত ৫ আগস্ট পদত্যাগের পর দেশ ছাড়েন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার পরে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেন তিনি। আপাতত তাঁকে কিছু দিন সময় দেওয়া হয়েছে বলে সর্বদল বৈঠকে জানিয়েছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তবে এরপর থেকেই তাঁর পরবর্তী গন্তব্য নিয়ে শুরু হয়েছে একাধিক জল্পনা। আর এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে শেখ হাসিনার বক্তৃতা দেওয়ার একটি ভিডিয়ো।
সেখানে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যাচ্ছে, কয়েকজন দুষ্কৃতী বাংলাদেশের নির্বাচনে ব্যাঘাত ঘটাতে পারবে না। পাশাপাশি তারা দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনিও খেলতে পারবে না। ভিডিয়োটির ৩৮ সেকেণ্ড-সহ একাধিক জায়গায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, গত ২৮ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতে ভারত থেকে বাংলাদেশের নাগরিকদের উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিওটি শেয়ার করে এর ফ্রেমের উপরে লিখেছেন, “ভারত থেকে কি ভাসন দিলো শেখ হাছিনা। ২৮/৮/২০২৪।” পাশাপাশি তিনি ক্যাপশনে লিখেছেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।” (সব বানান অপরিবর্তিত।) এমনই একটি পোস্টের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়ার ভিডিওটি ভারতের নায় বরং ২০২৩ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকায় আয়োজিত জেল হত্যা দিবসের অনুষ্ঠানে তোলা। পাশাপাশি সেখানে নরেন্দ্র মোদীর ভিডিও এডিট করে বসানো হয়েছে।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
ভাইরাল ভিডিওর সত্যতা জনাতে আমরা সেটি থেকে একাধিক স্ক্রিনশট নিয়ে সেগুলির রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। তখন আমরা ২০২৩ সালের ৩ নভেম্বর বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম মাছরাঙা নিউজের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে “জেল হত্যা দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগের স্মরণসভা” শীর্ষক ২ ঘণ্টা ৫ মিনিট ৫৪ সেকেণ্ডের একটি ভিডিও খুঁজে পাই। সেই ভিডিওর সঙ্গে ভাইরাল ভিডিওর ফ্রেমের হুবহু মিল আমরা লক্ষ্য করি। পাশাপাশি মাছরাঙা নিউজের সেই ভিডিওর ২ ঘণ্টা ১ মিনিট ২০ সেকেণ্ডে শেখ হাসিনা হাত নাড়িয়ে নিজের ভাষণে যে কথা বলছেন ভাইরাল ভিডিওতেও আমরা তাঁকে একইভাবে কথা বলতে দেখতে পাই। এর থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে ভাইরাল ক্লিপটি এই অনুষ্ঠান থেকেই নেওয়া হয়েছে।
এরপর উক্ত সূত্র ধরে একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করলে আমরা ২০২৩ সালের ৩ নভেম্বর শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজেও এই একই ভিডিও দেখতে পাই। সেখানে ভিডিওটি পোস্ট করে লেখা হয়েছে, “শোকাবহ জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তারিখঃ ০৩ নভেম্বর ২০২৩, স্থানঃ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র।”
এরপর আমরা আমাদের কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০২৩ সালের ৩ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত জেল হত্যা দিবস সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টার উদ্দেশে পুনরায় একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করি। তখন আমরা গত ৩ নভেম্বর ভাইরাল ভিডিওর সঙ্গে হুবহু মিল থাকা শেখ হাসিনার একটি ছবি-সহ বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম Rtv নিউজের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই। সেখানে লেখা হয়েছে, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সময় এসে গেছে, জনগণকে অগ্নি-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর। অগ্নি-সন্ত্রাসীরা যে যেখানেই থাকুক, যারাই আগুন দেবে, জনগণের ওপর অত্যাচার করবে, সঙ্গে সঙ্গে জনগণকেই প্রতিরোধ করতে এগিয়ে আসতে হবে। কারও ওপর নির্ভর করলে চলবে না। জনগণকেই এগিয়ে আসতে হবে। শুক্রবার (৩ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জেলহত্যা দিবসের আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।”
এর থেকে প্রমাণ হয় যে গত ২৮ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতে ভারত থেকে বাংলাদেশের নাগরিকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়ার ভিডিওটি ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর। আসলে সেটি ২০২৩ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকায় আয়োজিত জেল হত্যা দিবসের অনুষ্ঠানের।
গত ২৮ আগস্ট নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতে ভারত থেকে বাংলাদেশের নাগরিকদের উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
ভিডিওটি ভারতের নায় বরং সেটি ২০২৩ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকায় আয়োজিত জেল হত্যা দিবসের অনুষ্ঠানে তোলা। পাশাপাশি সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভিডিও এডিট করে বসানো হয়েছে।