Advertisement

ফ্যাক্ট চেক: চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ফাঁসির আদেশ চট্টগ্রাম আদালতের? না, ভাইরাল নিউজ ক্লিপটি সম্পাদিত

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি নিউজ ক্লিপ শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছে চট্টগ্রাম আদালত।

সুরাজউদ্দিন মণ্ডল
  • কলকাতা,
  • 04 Dec 2024,
  • अपडेटेड 5:06 PM IST

রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গত ২৫ নভেম্বর গ্রেফতার করা হয় বাংলাদেশের সনাতনী জাগরণ জোটের অন্যতম প্রধান মুখ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে। আর এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের সাজা সংক্রান্ত একটি নিউজ ক্লিপ। ২১ সেকেন্ডের ভাইরাল ভিডিওটিতে দুটি আলাদা নিউজ ক্লিপ যুক্ত করা হয়েছে। যেখানে দাবি করা হচ্ছে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছে চট্টগ্রাম আদালত। 

ভিডিওটির প্রথম ১৪ সেকেন্ডের ক্লিপে একজন মহিলা অ্যাঙ্করকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “চট্টগ্রামে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালত এই আদেশ দেন।” দ্বিতীয় ক্লিপটিতে পুরুষ অ্যাঙ্কারকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “দর্শক, চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলীফ হত্যায় চট্টগ্রামে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত।”

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম যমুনা টিভিতে প্রকাশিত ভিন্ন খবরের ক্লিপ এডিট করে ভাইরাল নিউজ ক্লিপ দুটি বানানো হয়েছে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ফাঁসির আদেশ নয় বরং আগামী ২ জানুয়ারি তাঁর মামলার পরবর্তী শুনানির নির্দেশ দিয়েছে চট্টগ্রাম আদালত।

আরও পড়ুন

কীভাবে জানা গেল সত্য?

প্রথমত, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী হলেন বাংলাদেশে হিন্দুদের অন্যতম প্রধান ধর্ম প্রচারক ও ধর্মগুরু। পাশাপাশি সম্প্রতি বাংলাদেশে হিন্দুদের উপরে হওয়া অত্যাচারের প্রধান প্রতিবাদী মুখও তিনি। তাই তাঁকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে কিংবা আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলীফ হত্যার মামলায় ফাঁসি দেওয়া হলে সেই সংক্রান্ত খবর অবশ্যই বাংলাদেশ তথা ভারতের প্রথম শ্রেণির সংবাদমাধ্যমগুলিতে প্রকাশিত হত। কিন্তু এই সংক্রান্ত সার্চে এমন কোনও নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন বা তথ্য পাওয়া যায়নি যা থেকে এই দাবির সত্যতা প্রমাণ হয়।

পক্ষান্তরে ২০২৪ সালের ৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম প্রথাম আলোতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মামলা সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, “জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তার সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন শুনানি পিছিয়ে গিয়েছে। আজ মঙ্গলবার অবকাশকালীন আদালতের বিচারক চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলামের আদালতে শুনানির দিন ধার্য ছিল। তবে চিন্ময় কৃষ্ণের পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় আদালত জামিন শুনানি পিছিয়ে আগামী বছরের ২ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।”

Advertisement

তাই এরপর ভাইরাল ভিডিও ও দাবির সত্যতা জানতে সেটির কি-ফ্রেম ও এই সংক্রান্ত একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করলে ২০২৪ সালের ২৬ নভেম্বর বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম যমুনা টিভির অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে “রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ” শিরোনামে একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ভাইরাল ভিডিওটির প্রথম ক্লিপের সঙ্গে যমুনা টিভির ভিডিওর হুবহু মিল পাওয়া যায়। উভয় ভিডিওতে একই মহিলা অ্যাঙ্করকে একই পোশাকে প্রায়ই একই কথা বলতে শোনা যায়। 

যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ভিডিওতে অ্যাঙ্করকে বলতে শোনা যায, “চট্টগ্রামে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালত এই আদেশ দেন…” অর্থাৎ উভয় ভিডিও ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে যমুনা টিভিতে উপস্থাপিকার বলা ‘কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ’ কথাটি প্রযুক্তির সাহায্যে এডিট করে তার জায়গায় ‘ফাঁসির আদেশ’ শব্দ দুটি যুক্ত করা হয়েছে। 

এরপর ভাইরাল ভিডিওর দ্বিতীয় ক্লিপটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পরবর্তী সার্চ করলে যমুনা টিভির অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেল ২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বর যমুনা টিভির অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে “চিন্ময় দাসের মুক্তির দাবিতে মিছিলের প্রস্তুতিতে আটক আ.লীগের ৬ নেতাকর্মী” শিরোনামে একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ভাইরাল ভিডিওর দ্বিতীয় ক্লিপের সঙ্গে যমুনা টিভির ভিডিওর হুবহু মিল পাওয়া যায়। উভয় ভিডিওতে একই পুরুষ অ্যাঙ্করকে একই পোশাকে দেখা যাচ্ছে। 

এখানে উপস্থাপককে বলতে শোনা যাচ্ছে, “চট্টগ্রামে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তি দাবিতে মিছিলের প্রস্তুতিকালে আওয়ামী লীগের ৬ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে নগরীর পাহাড়তলীর সরাইপাড়া এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। পুলিশ জানায়, এদের সবাই মীরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।…” এক্ষেত্রেও উভয় ভিডিও পাশাপাশি রেখে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে যমুনা টিভির ভিডিওটি প্রযুক্তির সাহায্যে এডিট করে সেখানে উপস্থাপকের বলা কথা বদলে দেওয়া হয়েছে।

এর থেকে প্রমাণ হয় যে সোশ্যাল মিডিয়ায় চট্টগ্রাম আদালত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে দাবি করে যমুনা টিভির সম্পাদিত ভিডিও ভাইরাল করা হচ্ছে।

Fact Check

Claim

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছে চট্টগ্রাম আদালত।

Conclusion

বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম যমুনা টিভির ভিন্ন খবরের ভিডিও এডিট করে ভাইরাল নিউজ ক্লিপ দুটি বানানো হয়েছে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ফাঁসির আদেশ নয় বরং আগামী ২ জানুয়ারি তাঁর মামলার পরবর্তী শুনানির নির্দেশ দিয়েছে চট্টগ্রাম আদালত।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  1. কাক: অর্ধসত্য
  2. একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  3. অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Do you think a messenge is a fake ?
To know the truth, send that to our Number73 7000 7000 you can email on factcheck@intoday.com
Read more!
Advertisement
Advertisement