সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে। যেখানে একজন বৃদ্ধাকে একটি কুয়োর ভিতরে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করতে দেখা যাচ্ছে এক যুবককে। অন্যদিকে বৃদ্ধা মানুষটিকে ভয়ে আর্তনাদ করতে শোনা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, একজন অকৃতজ্ঞ সন্তান তার নিজের মাকে কুয়োয় ফেলে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “ছেলে মা'কে কুয়ার বিতরে ফালানোর চেষ্টা। কতটা খারাপ হলে এমন কাজ করতে পারে নিজের মায়ের সাথে।” (সব বানান অপরিবর্তিত) ভিডিওর কমেন্ট সেকশনে অনকেই ঘটনাটিকে সত্যি হিসাবে ধরে নিয়ে ছেলেটির উপযুক্ত শাস্তির দাবিও করেছেন।
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটি আসল নয় বরং সেটি ইউটিউব বা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিউজ পাওয়ার আশায় তৈরি করা একটি স্ক্রিপ্টেড ভিডিও। পাশাপাশি ভিডিওটিতে বৃদ্ধার সঙ্গে যে যুবককে দেখা যাচ্ছে সে সম্পর্কে ওই বৃদ্ধার নাতি এবং তাদের ওই চ্যানেলের অন্যান্য ভিডিওতেও দেখা গেছে।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
ভাইরাল দাবি ও ভিডিওর সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক স্ক্রিনশট নিয়ে সেগুলিকে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করেলে ২০২৫ সালের ৫ মার্চ ‘Ahosan Comedy Club’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে এই একই ভিডিও পাওয়া যায়। সেখানে ভিডিওটি পোস্ট করে লেখা হয়েছে, “ছেলেটি এক বৃদ্ধ মাকে গর্তে ফেলে দিচ্ছে.! হাইরে দুনিয়া” ওই একই চ্যানেলে গত ১১ এবং ১২ মার্চ এই একই ভিডিও ভিন্ন শিরোনাম-সহ আরও দুবার শেয়ার করা হয়েছে।
এরপর আমরা ইউটিউব চ্যানেলটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে এই একই বৃদ্ধা ও যুবকটিকে আরও একাধিক ভিডিওতে দেখতে পাই। যেমন গত ১০ মার্চের একটি ভিডিওতে যুবকটিকে দা দিয়ে ওই বৃদ্ধার গলা কাটার চেষ্টা করতে দেখা যায়। ১০ মার্চের অন্য একটি ভিডিওতে যুবকটিকে বৃদ্ধাকে ফাঁসি দেওয়ার ও ১১ মার্চের একটি ভিডিওতে বৃদ্ধাকে বালিশ চাপা দিয়ে মারার চেষ্টা করতে দেখা যাচ্ছে। যেহেতু ওই একই যুবক এবং বৃদ্ধাকে বিভিন্ন ভিডিওতে ভিন্নভাবে দেখা গেছে তাই এটা অনুমান করা যায় যে ভিডিওটি স্ক্রিপ্টেড হলেও হতে পারে।
তবে গত ১১ মার্চ ‘Ahosan Comedy Club’ নামক ওই ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা অন্য একটি ভিডিও থেকে ভাইরাল ভিডিও-সহ উপরে উল্লেখিত বাকি ভিডিওগুলিও যে স্ক্রিপ্টেড তা নিশ্চিত হয়ে যায়। কারণ সেখানে ভাইরাল ভিডিওর যুবকটিকে ওই বৃদ্ধা মহিলাকে পাশে নিয়ে জানায় যে বৃদ্ধা সম্পর্কে তার নানি (দিদা)। এবং তারা একসঙ্গে অভিনয় করে এই ধরনের ভিডিও বানান।
এর থেকে পরিস্কার হয়ে যায় যে ইউটিউব বা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিউজ পাওয়ার আশায় তৈরি করা স্ক্রিপ্টেড ভিডিও বিভ্রান্তিকর দাবি-সহ ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওতে একজন অকৃতজ্ঞ সন্তান তার নিজের কুয়োয় ফেলে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে।
ভাইরাল ভিডিওটি আসল নয় বরং সেটি ইউটিউব বা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিউজ পাওয়ার আশায় তৈরি করা স্ক্রিপ্টেড ভিডিও।