Advertisement

ফ্যাক্ট চেক: হোলির দিন কি উত্তর প্রদেশে জুম্মার নমাজে ‘নিষেধাজ্ঞা’ জারি করেছেন যোগী আদিত্যনাথ?

আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ আগামী শুক্রবার হোলি উপলক্ষ্যে তাঁর রাজ্যে জুম্মার নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে সরকারিভাবে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করেননি। তবে মুসলিম সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে তিনি যে ধরনের বার্তা দিয়েছিলেন তা বিভ্রান্তিকর দাবিতে ছড়িয়ে পড়েছে।

সুরাজউদ্দিন মণ্ডল
  • কলকাতা,
  • 12 Mar 2025,
  • अपडेटेड 4:56 PM IST

সম্প্রতি উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের ছবি-সহ একটি পোস্ট বেশ ভাইরাল হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যেখানে দাবি করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের ১৪ মার্চ জুম্মার নমাজ এবং হোলি একই দিনে পড়ায় ওই দিন মুসলিমদের জুম্মার নমাজ পড়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।

উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী যোগী আদিত্যনাথের ছবি শেয়ার করে সেটির উপরে লিখেছেন, “হোলির দিন জুম্মার নামাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ যোগির।” পাশাপাশি ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, “আগামী শুক্রবার দোল এবং সাথে জুম্মার নামাজ.. অপদার্থ যোগী, তাই নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে ঘোষণা করেছে যে দোল বছরে যেহেতু একবার আসে তাই আগামী শুক্রবার শুধু ইউপিতে দোল পালন হবে কিন্তু জুম্মার নামাজ পালন করা যাবে না কারণ জুম্মার নামাজ প্রতি শুক্রবার‌ই পালিত হয় তাই মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে জুম্মার নামাজ স্থগিত রাখতে বলেছে…” (সব বানান অপরিবর্তিত)

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ আগামী শুক্রবার হোলি উপলক্ষে রাজ্যে জুম্মার নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে সরকারিভাবে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করেননি। মুসলিম সম্প্রদায়ের উদ্দেশে দেওয়া তাঁর বার্তা বিভ্রান্তিকর দাবিতে ছড়িয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন

বিতর্কের সূত্রপাত

মোগল সম্রাট বাবরের আমলে হরিহর মন্দির ভেঙে উত্তর প্রদেশেরে সম্ভল এলাকায় শাহি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল বলে দীর্ঘদিন যাবৎ দাবি করে আসছেন স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরা। আদালতের নির্দেশে গত বছরের ২৪ নভেম্বর এই মসজিদটি সমীক্ষার সময় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তাতে পাঁচ জন মুসলিম যুবকের মৃত্যু হয়েছিল। পুলিশের গুলিতেই এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল বলে অভিযোগ। এই ঘটনার পর থেকে সম্ভল এখনও থমথমে। 

আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে এলাকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। যেহেতু ২০২৫ সালের ১৪ মার্চ জুম্মার নমাজ এবং হোলি একই দিনে পড়েছে। তাই ওই দিন জুম্মার নমাজ ও হোলিকে কেন্দ্র করে যাতে কোনও রকম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যাতে নষ্ট না হয় তা নিশ্চিত করতে গত ৬ মার্চ সম্ভলের কোতোয়ালি থানায় শান্তি কমিটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। 

Advertisement

সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সম্ভলের সার্কেল অফিসার অনুজ কুমার চৌধুরী। সেখানে জুম্মার নমাজ এবং হোলি একই দিনে পড়া সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমার স্পষ্ট কথা এটাই- জুম্মার নমাজ বছরের ৫২ বার হয়, কিন্তু হোলি বছরে একবারই আসে। মুসলিম সম্প্রদায়ের কারোর যদি মনে হয় হোলির রং লাগলে তাদের ধর্মভ্রষ্ট হয়ে যাবে বা তাদের অন্য কোনও আপত্তি থাকে, তাহলে আপনারা সেদিন ঘরেই থাকুন। আর যদি কেউ ঘর থেকে বের হন, তবে এতটা বড় হৃদয় রাখবেন, সব মানুষ তো সমান। আর রং তো রং-ই।” 

যোগী আসলে কী বলেছেন?

গত ৮ মার্চ ‘ইন্ডিয়া টুডে কনক্লেভ ২০২৫’-এ হোলি ও জুম্মার নমাজ নিয়ে অনুজ কুমার চৌধুরীর করা মন্তব্য প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে প্রশ্ন করা হয়। সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, “হোলির মতো পার্বণের সময় পরস্পর পরস্পরের চিন্তা ভাবনাকে সম্মান জানানো হবে এটাই কাম্য। জুম্মার নামাজ প্রত্যেক শুক্রবারেই হয়। হোলি বছরে একবার হয়। এটাই ভালোভাবে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছিল। আমি তাঁদের ধন্যবাদ জানাতে চাই যারা ১৪ মার্চ দুপুর দুটো পর্যন্ত হোলি পালনের পর জুম্মার নমাজ পড়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। অনেক মুসলিম ধর্মগুরুরাও আগে থেকেই একই ধরনের আহ্বান করেছেন। জুম্মার নমাজ একদিন স্থগিত হতে পারে, পড়তেই হবে এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু কেউ যদি একান্তই পড়তে চান, নিজের বাড়িতে পড়ুন। মসজিদেই যেতে হবে এমন কোনও কথা নেই। আর যদি যেতেই চান তাহলে রং নিয়ে বাদবিচার করবেন না। আর যদি রঙের ক্ষেত্রে কারোর তীব্র আপত্তি থাকে, সে ক্ষেত্রে কী করণীয় সেই বিষয়টিই পুলিশ আধিকারিক বুঝিয়েছেন।”

এরপর যোগী হাসি মুখে আরও বলেন, “ আর ওই পুলিশ আধিকারিক একজন কুস্তিগীর ছিলেন। অর্জুন পুরস্কার পেয়েছেন, অলিম্পিকে অংশ নিয়েছেন। তাই তিনিও সেই কুস্তিগীরের কায়দায় কথাটা বলেছেন, তাই হয়তো অনেকের খারাপ লেগেছে। তবে যেটা বাস্তব সেটা স্বীকার করে নেওয়ায় উচিত।”

সরকার কি এমন কোনও নির্দেশ দিয়েছে?

জুম্মার নমাজ পড়ার ক্ষেত্রে সরকারিভাবে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে কিনা, সেই সংক্রান্ত তথ্য জানতে উত্তর প্রদেশ সরকারের তথ্য ও জনসংযোগ দফতরের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান চালানো হয়। কিন্তু সেখানে এমন কোনও তথ্য বা প্রেস বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরপর বিষয়টি সম্পর্কে জানতে আমরা উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের প্রেস উপদেষ্টা মৃত্যুঞ্জয় কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, “উত্তর প্রদেশ সরকারের তরফে আগামী ১৪ মার্চ হোলির দিন জুম্মার নমাজ পড়ার ক্ষেত্রে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই সংক্রান্ত যে দাবি করা হচ্ছে তা সঠিক নয়।”

সবমিলিয়ে আমাদের অনুসন্ধান থেকে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হচ্ছে। প্রথমত, সরকারিভাবে জুম্মার নমাজ পড়ার ক্ষেত্রে কোনও সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি হয়নি। তা বাড়িতে পড়া যেতে পারে। ফলে যে দাবি সোশ্যাল মিডিয়ায় করা হয়েছে তা সঠিক নয়। দ্বিতীয়ত, এ কথা সত্যি যে, হোলির কারণে প্রশাসন জুম্মার নমাজের সময় দুপুর ২টোর পর পিছিয়ে আনার আহ্বান করেছে। যোগীর দাবি অনুযায়ী, এ আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন মুসলিম ধর্মগুরুদের বড় অংশও। তৃতীয়ত, এমনটা নয় যে জুম্মার নমাজ সময়মতো মসজিদে গিয়ে পড়া যাবে না, তবে সে ক্ষেত্রে হোলির রং নিয়ে বাদবিচার থেকে বিরত থাকতে হবে। 

Fact Check

Claim

উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ আগামী শুক্রবার হোলি উপলক্ষে রাজ্যে জুম্মার নমাজ পড়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।

Conclusion

উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ হোলি উপলক্ষ্যে তাঁর রাজ্যে জুম্মার নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে সরকারিভাবে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করেননি। তবে একই দিনে হোলি পালন হওয়ার কারণে জুম্মার নমাজের সময় পিছিয়ে দুপুর ২টোর পর করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে মুসলিম সম্প্রদায়ের উদ্দেশে দেওয়া তাঁর বার্তাও বিভ্রান্তিকর দাবিতে ছড়িয়ে পড়েছে।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  1. কাক: অর্ধসত্য
  2. একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  3. অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Do you think a messenge is a fake ?
To know the truth, send that to our Number73 7000 7000 you can email on factcheck@intoday.com
Read more!
Advertisement
Advertisement