Advertisement

স্কুলে শিক্ষাদান নিয়ে ভারতীয় সংবিধানের অপব্যাখ্যা ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়

কীভাবে গুরুকূল শেষ হল ভারতে! এই নিয়ে এবার ভারতীয় সংবিধানেরও অপব্যাখ্যা ছড়াল নেট মাধ্যমে।

ভারতীয় সংবিধান নিয়েও বিভ্রান্তিকর দাবি ছড়াল সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভারতীয় সংবিধান নিয়েও বিভ্রান্তিকর দাবি ছড়াল সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ঋদ্ধীশ দত্ত
  • কলকাতা,
  • 02 Jan 2022,
  • अपडेटेड 9:37 PM IST

প্রাচীন ভারতে শিক্ষাদানের মাধ্যম গুরুকূল নিয়ে এবার একটি পোস্টকার্ড সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দাবি করা হচ্ছে, ভারতীয় সংবিধানের তিনটি অনুচ্ছেদে লেখা রয়েছে যে হিন্দি স্কুলে বেদ-উপনিষদ, রামায়ণ বা মহাভারত ইত্যাদি পড়ানো যায় না। 

পোস্টকার্ডে একটি গুরুকূলের ছবি দিয়ে হিন্দিতে তার উপরে লেখা হয়েছে, "কী ভাবে শেষ হয়ে গেল আমাদের গুরুকূল? সংবিধানের ২৮, ২৯, ৩০ নম্বর অনুচ্ছেদে স্পষ্ট লেখা রয়েছে যে মুসলিমদের মাদ্রাসা এবং খৃষ্টানদের কনভেন্ট স্কুলে কোরান এবং বাইবেল পড়ানো যাবে। কিন্তু কোনও হিন্দি স্কুলে বেদ, গীতা বা রামায়ণ, পুরাণ ইত্যাদি পড়ানো যাবে না।" 

এই একই প্রসঙ্গ টেনে আরেক ব্যবহারকারী হিন্দিতে ফেসবুকে লিখেছেন, "সংবিধানের ৩০ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল করার সময় এসে গিয়েছে যাতে ভারতে গীতা, রামায়ণ এবং সনাতন ধর্মের সংস্কৃতির শিক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়।"

আরও পড়ুন

ভাইরাল এই পোস্টের আর্কাইভ এখানেএখানে দেখা যাবে। 
 
ইন্ডিয়া-টুডের অ্যান্টি-ফেক নিউজ ওয়ার রুম (আফয়া) তদন্ত করে দেখেছে যে এই দাবিটি আসলে ভুয়ো। কারণ, সংবিধানের ২৮, ২৯, ৩০ নম্বর অনুচ্ছেদে শিক্ষা সংক্রান্ত নিয়ম ও বিধির কথা লেখা হলেও কোন গ্রন্থ পড়ানো যাবে, বা কোন গ্রন্থ পড়ানো যাবে না, এমন কোনও উল্লেখ সেখানে নেই। 

আফয়া তদন্ত

এই দাবির আদৌ সত্যতা রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে সবার প্রথম আমরা কি-ওয়ার্ড সার্চ করি। তখন আমাদের সামনে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের একটি প্রতিবেদন উঠে আসে। সেই খবরে মূলত সংবিধানের ৩০ নম্বর অনুচ্ছেদের বিষয়ে খুঁটিনাটি তথ্য প্রকাশ পেয়েছিল। যদিও এমন কথা কোথাও লেখা ছিল না যে কোন ধর্মের গ্রন্থ কোথায় পড়া যাবে ও কোথায় যাবে না। 

তাই এই বিষয়ে নিখুঁত তথ্য পেতে আমরা ভারতীয় সংবিধানে এই অনুচ্ছেদগুলির বিষয়ে কী লেখা রয়েছে তা খতিয়ে দেখি। সংবিধানে লেখা আসল তথ্যের খোঁজ আমরা পাই কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রকের আইনি বিভাগের ওয়েবসাইটে। সংবিধানের ২৯ নম্বর পাতায় এই তিনটি অনুচ্ছেদের বিষয়ে যা লেখা রয়েছে, তাতেই কার্যত স্পষ্ট হয়ে যায় এমন কোনও নিয়ম যে নেই। 

Advertisement

কী রয়েছে ২৮ নম্বর অনুচ্ছেদে? 

প্রথমত, সংবিধানের ২৮ নম্বর অনুচ্ছেদ রয়েছে ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারের আওতায়। এই অনুচ্ছেদ মূলত কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষাদান বা ধর্মীয় উপাসনায় উপস্থিতি সম্পর্কিত।  এই অনুচ্ছেদের তিনটি প্রাবধান রয়েছে। বলা হয়েছে, (১) সম্পূর্ণভাবে সরকার দ্বারা পোষিত কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনও ধর্মীয় শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা যাবে না। (২) যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি সরকার দ্বারা পরিচালিত হলেও অন্য কোনও সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান দ্বারা তৈরি, সেগুলির ক্ষেত্রে প্রথম প্রাবধানটি কার্যকর হবে না। (৩) সরকারি স্বীকৃতি বা সাহায্যপ্রাপ্ত কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যে ধর্মীয় শিক্ষাদান হয়, বা যে ধর্মীয় উপাসনা হয়, তাতে কারোর উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা যাবে না। কেউ নিজ সম্মতিতে থাকতে পারেন, যদি এ ক্ষেত্রে কোনও নাবালক বা নাবালিকা হয়, তবে তাদের অভিভাবকদের সম্মতি প্রয়োজন। 

অনুচ্ছেদ নম্বর ২৯

এ বার চলে যাক সংবিধানের ২৯ নম্বর অনুচ্ছেদে। শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক অধিকারের বিভাগে থাকা ২৯ নম্বর অনুচ্ছেদটি হল সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সংরক্ষণ নিয়ে। এ ক্ষেত্রেও দুটি প্রাবধান রয়েছে। প্রথমটিতে বলা হয়েছে, ভারতের যে কোনও অংশে বসবাসকারী যে কোনও ব্যক্তির অধিকার রয়েছে তাদের নিজস্ব ভাষা, লিপি বা সংস্কৃতি সংরক্ষণ করার। দ্বিতীয় প্রাবধান বলছে, সরকার পরিচালিত বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কারোর ধর্ম, ভাষা বা জাতির ভিত্তিতে ভর্তি নিতে অস্বীকার করা যাবে না। 

সংবিধানের ৩০ নম্বর অনুচ্ছেদ

আলোচ্য প্রসঙ্গের শেষ অনুচ্ছেদ, অর্থাৎ সংবিধানের ৩০ নম্বর অনুচ্ছেদেও মোট তিনটি প্রাবধান রয়েছে। (১) প্রথমটি বলা হয়েছে, ধর্ম বা ভাষার ভিত্তিতে যে কোনও সংখ্যালঘুর অধিকার রয়েছে নিজের পছন্দ অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করার। (১এ) এই ধরনের কোনও প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি যদি কোনও কারণে অধিগ্রহণের প্রয়োজন হয়, তবে সরকারকে সেই পরিমাণ অর্থ নিশ্চিত করতে হবে যাতে এই অনুচ্ছেদের প্রথম অধিকার লঙ্ঘিত না হয়। (২) তৃতীয়ত, সরকার আর্থিক সহায়তার সময় যেন কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধর্মীয় বা ভাষাগত কারণে সেই প্রতিষ্ঠানের প্রতি বৈষম্য না হয়। 

সুতরাং, এই বিষয়টি কার্যত দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে সোশ্যাল মিডিয়ায় সংবিধানের এই তিন অনুচ্ছেদ নিয়ে যে দাবি করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভুয়ো। 

Fact Check

Claim

সংবিধানের ২৮, ২৯ এবং ৩০ নম্বর অনুচ্ছেদে লেখা রয়েছে যে মাদ্রাসা ও কনভেন্ট স্কুলে কোরান ও বাইবেল পড়া যাবে। কিন্তু হিন্দি স্কুলে বেদ, গীতা বা রামায়ণ পড়া যাবে না।

Conclusion

সংবিধানের এই তিনটি অনুচ্ছেদে ধর্মীয় ভিত্তিতে কোনও গ্রন্থ, বেদ বা উপনিষদের উল্লেখ পর্যন্ত করা হয়নি। ২৮ নম্বর অনুচ্ছেদ কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে (যদি তা সম্পূর্ণভাবে সরকার দ্বারা পোষিত না হয়) যে কোনও ধর্মীয় রীতি বা গ্রন্থ পাঠের অধিকার দেয়। ২৯ নম্বর অনুচ্ছেদ সংখ্যালঘু সমাজের স্বার্থ রক্ষার কথা বলে। এবং ৩০ নম্বর অনুচ্ছেদ যে কোনও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে তাদের ইচ্ছামতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের সুযোগ দেয়।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  1. কাক: অর্ধসত্য
  2. একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  3. অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Do you think a messenge is a fake ?
To know the truth, send that to our Number73 7000 7000 you can email on factcheck@intoday.com
Read more!
Advertisement
Advertisement