নির্বাচন শেষ। দোসরা মে ফল ঘোষণা। আর, এই মধ্যবর্তী সময়তে জোরকদমে চলছে হিসেব-নিকেশ - আগামী পাঁচ বছরের জন্য পশ্চিমবঙ্গ শাসনের দায়িত্ব কোন রাজনৈতিক দলের কাঁধে থাকবে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বুথ ফেরত সমীক্ষার বিশ্লেষণ শুরু হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়াতেও লোকজন বিভিন্ন ধরণের দাবি তুলে ধরছে।
এবার, সেই বুথ ফেরত সমীক্ষা সংক্রান্ত একটি দাবি ভাইরাল হলো সোশ্যাল মিডিয়াতে।
'আমরা কমিউনিস্ট' নামের একটি ফেসবুক পেজে সিপিএম-এর মুখপত্র 'গণশক্তি'-তে প্রকাশিত একটি স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়েছে।
এই স্ক্রিনশটে, ‘গণশক্তি’-র বুথ ফেরত সমীক্ষার একটি গ্রাফ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, যেখানে বলা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে ১৭০টি আসন পেতে চলেছে বামফ্রন্ট-কংগ্রেস-আইএসএফ সম্মিলিত সংযুক্ত মোর্চা। এই সমীক্ষা অনুযায়ী, বিজেপি ও তৃণমূল যথাক্রমে ৮৫টি ও ৭৫টি আসন পাবে। এবং, অন্যান্য দল ও নির্দলীয় প্রার্থীরা চারটি আসনে জয়লাভ করবে।
এই পোস্টের সঙ্গে লেখা হয়েছে,"আজকে বিজেমুলের রাতের ঘুম উড়ে যাবে।"
এই স্ক্রিনশট ব্যবহার করা পোস্টগুলোর আর্কাইভ দেখতে পাবেন এখানে ও এখানে।
ইন্ডিয়া টুডের অ্যান্টি-ফেক নিউজ ওয়ার রুম (আফয়া) অনুসন্ধান করে দেখেছে এই পোস্টের দাবি বিভ্রান্তিকর।
তদন্তে নেমে, আমরা প্রথমে গণশক্তি-র ওয়েবসাইটে বুথ ফেরত সমীক্ষা সংক্রান্ত খবর ও তার সঙ্গে প্রকাশিত এই গ্রাফিক্সটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। আইনানুযায়ী, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে, শুধুমাত্র শেষ পর্যায়ের নির্বাচন সমাপ্ত হলে বুথ ফেরত সমীক্ষা প্রকাশ করা যাবে। পশ্চিমবঙ্গে, ২৯শে এপ্রিল শেষ পর্যায়ের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিকে, ফেসবুকে এই বুথ ফেরত সমীক্ষার গ্রাফিক্সের ছবিটিও ২৯শে এপ্রিল পোস্ট করা হয়েছে।
তদন্তে দেখা যাচ্ছে, গণশক্তি-র দুটি ওয়েবসাইট রয়েছে। যে দু'টির লিঙ্ক আপনারা দেখতে পাবেন এখানে ও এখানে। এই দুটি ওয়েবসাইটেই, গণশক্তি সংবাদপত্রের ই-পেপার সংস্করণ আপলোড করা হয়ে থাকে।
সে ক্ষেত্রে, আইনানুযায়ী ২৯শে এপ্রিল সকালের কাগজে গণশক্তি বুথ ফেরত সমীক্ষা প্রকাশ করতে পারে না। আবার, এই বুথ ফেরত সমীক্ষা যদি ৩০শে এপ্রিল প্রকাশ করা হয় তাহলে ২৯শে এপ্রিল সেই সমীক্ষার গ্রাফিক্স সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার কথা নয়। এখানেই আমাদের খটকা লাগে।
এর পর, আমরা ২৯, ৩০ ও পয়লা এপ্রিলে গণশক্তি-তে প্রকাশিত খবরগুলো স্ক্যান করতে থাকি। দেখা যায়, পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, তামিলনাড়ু ও অসম বিধানসভা নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে ৩০শে এপ্রিল একটি প্রতিবেদন গণশক্তি-তে। প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রতিবেদনে মূলত অন্যান্য সংবাদমাধ্যমগুলোর এক্সিট পোল নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
প্রতিবেদন-টির শিরোনাম: "বুথ ফেরত সমীক্ষায় কেরলে ফিরছে বাম। পশ্চিমবঙ্গ অনিশ্চিত"
একটি সংবাদপত্র এক জায়গায় বামফ্রন্টের জয় অনিশ্চিত লিখবে আবার অন্য প্রতিবেদনে এক্সিট পোলের সমীক্ষা ঘোষণা করে লিখবে মোর্চা ১৭০টি আসন পাবে, এটা একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।
বিষয়টিকে আরও নিশ্চিত করতে আমরা গণশক্তি-র সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অজয় দাসগুপ্তর সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি নিশ্চিত করেন যে এই ধরণের কোনও সমীক্ষা গণশক্তি করেনি। তাঁর বক্তব্য, "নীতি অনুযায়ী আমরা এই ধরণের সমীক্ষা করতে পারিনা। দলীয় মুখপত্র হিসেবে আমরা শুধু পার্টির সমীক্ষা প্রকাশ করতে পারি। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কিত সমীক্ষা একান্তই পার্টির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে। তা সর্বসাধারণের কাছে প্রকাশ করার জন্য নয়।"
সুতরাং, এই পোস্টের দাবি যে বিভ্রান্তিমূলক তা বলা যেতেই পারে।
গণশক্তি পত্রিকায় প্রকাশিত একটি বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলাফলের গ্রাফিক্স পোস্ট করা হয়েছে। গ্রাফিক্সে দেখা যাচ্ছে, সমীক্ষা অনুযায়ী ১৭০টি আসনে জয়লাভ করতে চলেছে সংযুক্ত মোর্চা।
এই ধরণের কোনও সমীক্ষা এই পত্রিকার তরফ থেকে করা হয়নি। এই সংবাদপত্রে এই সংক্রান্ত একটি মাত্র সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের বুথ ফেরত সমীক্ষা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনটির শিরোনাম, ""বুথ ফেরত সমীক্ষায় কেরলে ফিরছে বাম... পশ্চিমবঙ্গ অনিশ্চিত"