বাঙালি আর মাছের সম্পর্ক কতটা গভীর, তা নিয়ে আলাদা করে শব্দ খরচ করা নিরর্থক। মাছের পাশাপাশি চিংড়ির মতো প্রাণীকেও মাছ হিসেবেই আপন করে নিয়েছে বাঙালি। কিন্তু আপনি কি কখনও ১৫০ কেজি ওজনের গলদা চিংড়ির কথা শুনেছেন!
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় দৈত্যাকার একটি চিংড়ি মাছের ছবি বেশ ভাইরাল হয়েছে। ছবিতে কোনও সমুদ্রের ধারে এক নৌকার উপর এই বিশালাকার চিংড়ি মাছটি দেখা যাচ্ছে, যেটিকে ধরে তিন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এই চিংড়ি মাছটির ওজন ১৫০ কেজি বলে দাবি করা হচ্ছে।
অনেকেই এই ছবিটি শেয়ার করে একে বিশ্বের সবথেকে চিংড়ি মাছ বলে দাবি করেছেন।
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভাইরাল হওয়া ছবিটি আসল নয়, বরং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তৈরি।
কীভাবে জানা গেল সত্যি
ভাইরাল ছবিটির আসল উৎস খুঁজতে আমরা সবার প্রথম একে রিভার্স সার্চের মাধ্যমে খোঁজার চেষ্টা করি। তখন ওই একই ছবির অন্য একটি ভিডিয়ো সংস্করণ আমরা একাধিক ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে দেখতে পাই। এই ছবিটি যেখানে ভিডিয়ো আকারে আপলোড করা হয়েছিল, সেখানে আবার বৃষ্টি পড়তে দেখা যাচ্ছে। যদিও এই চিত্রটি স্থির অবস্থায় রয়েছে।
এই ইনস্টাগ্রাম পোস্টে থাকা ছবিটি লক্ষ্য করলে এখানে বেশ কিছু বড় অসঙ্গতি দেখা যাবে। প্রথমত, ছবিটিতে একেবারে বাঁ-দিকে যে ব্যক্তিকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, তার দুটি হাতই অস্বাভাবিক। ডান দিকের হাতে যেমন তিনটি আঙুল দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, তেমনই বাঁ-দিকের হাতে একটি আঙুল অদ্ভুতভাবে বেঁকে রয়েছে। এ ধরনের অসামঞ্জস্যপূর্ণ লক্ষণ সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্বারা তৈরি ছবিতেই লক্ষ্য করা যায়।
এমনকি, মাঝে যে ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে, তারও ডান হাত নীচের অংশটি ঝাপসা হয়ে কেমন মিলিয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, যে কোনও জলভাগের শেষ প্রান্ত এক সরলরেখায় হবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই ছবিতে জলভাগের বাঁ-দিকের সরলরেখাটি অদ্ভুতভাবে বেঁকে গিয়েছে।
এখানেই শেষ নয়। রয়েছে আরও বেশ কিছু অসঙ্গতি। কোনও চিংড়ি বড় আকৃতির গলদা চিংড়ির মুখের অগ্রভাগে দুটি শুঁড় থাকে। পিঠের মাঝামাঝি সোজা ও খাড়া কোনও শুঁড় দেখা যায় না। এ ক্ষেত্রে এই বিশালাকৃতির জন্তু, যাকে চিংড়ি বলে দাবি করা হচ্ছে, তার অগ্রভাবে মাত্র একটি শুঁড় দেখা যাচ্ছে। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া হয় যে দ্বিতীয় শুঁড়টি কাটা পড়ে গেছে, কিন্তু দ্বিতীয় শুঁড়ের উৎপত্তিস্থলও এখানে নেই।
যদি সত্যিই এমন দৈত্যাকার কোনও গলদা চিংড়ি পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাওয়া যেত, তবে তা নিয়ে খবর হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে এমন কোনও বিশ্বাসযোগ্য খবরও পাওয়া যায়নি।
এরপর আমরা খোঁজার চেষ্টা করি পৃথিবীর সবথেকে বড় গলদা চিংড়ি কোথায় এবং কবে পাওয়া গিয়েছিল। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস মারফৎ জানা যায়, পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ওজনের চিংড়ি বা লবস্টার পাওয়া গিয়েছিল ১৯৭৭ সালে, দক্ষিণ আমেরিকার পুয়ের্তো রিকোতে। এই চিংড়িটি ওজনে ছিল ২০.১৪ কেজি ও দৈর্ঘ্যে ছিল ১.০৬ মিটার।
আন্তর্জাতিক ফ্য়াক্ট-চেকিং সংস্থা স্নুপ্সও এই ছবিটির সত্যতা যাচাই করে একে ভুয়ো বলে জানিয়েছে।
সব শেষে এ কথা বলাই যায় যে, ভাইরাল হওয়া ছবিটি আসল কোনও চিংড়ির নয় বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্বারা তৈরি।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে এমন একটি দৈত্যাকার গলদা চিংড়ি ধরা পড়েছে যার ওজন ১৫০ কেজি।
এই ছবিটি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তৈরি।