Advertisement

ফ্যাক্ট চেক: গঙ্গার উৎপত্তিস্থল নয়, হিমবাহ ফেটে জলের স্রোত বেরিয়ে আসার ভিডিওটি কোথাকার?

আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভিডিওটির সঙ্গে গঙ্গার উৎপত্তিস্থল বা কৈলাস পর্বের কোনও সম্পর্ক নেই। এটি উত্তর মেরুর একটি ছোট দ্বীপের দৃশ্য।

ঋদ্ধীশ দত্ত
  • কলকাতা,
  • 10 Jul 2025,
  • अपडेटेड 9:57 AM IST

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় পবিত্র গঙ্গা নদীর উৎপত্তিস্থল দাবি করে একটি সুবিশাল হিমবাহ থেকে জলের স্রোত বেরিয়ে আসার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। কোনও হেলিকপ্টার থেকে তোলা এই ভিডিওতে বরফে ঢাকা একটি পাহাড়ের ধারে একটি ফাটল থেকে বিপুল স্রোতে জল বেরিয়ে আসছে। 

ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "পবিত্র গঙ্গা নদীর উৎপত্তিস্থল।" প্রতিবেদনটি লেখার সময় পর্যন্ত প্রায় চার হাজার মানুষ ভিডিওটি শেয়ার করেছেন ও এক কোটি মানুষ ভিডিওটি দেখে ফেলেছেন। 

একই ভিডিওটি গত জানুয়ারি মাসে 'কৈলাস পর্বত থেকে পবিত্র নদীর উৎপত্তি হচ্ছে' দাবি করে হিন্দিতে ক্যাপশন লিখে শেয়ার করা হয়েছিল। 

আরও পড়ুন

আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভিডিওটির সঙ্গে গঙ্গার উৎপত্তিস্থল বা কৈলাস পর্বের কোনও সম্পর্ক নেই। এটি উত্তর মেরুর একটি ছোট দ্বীপের দৃশ্য।

সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে 

গঙ্গা নদীর উৎসস্থল যে হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ অঞ্চল, সেই বিষয়ে আমরা সকলেই অবগত। এই নদীর উৎসস্থল ঠিক কেমন দেখতে, সেই বিষয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করা হলে একাধিক ভিডিও ইউটিউবে পাওয়া যাবে। তবে ২০১০ সালে বিবিসি স্টুডিও-র ইউটিউব চ্যানেলে গঙ্গার উৎপত্তিস্থলের একটি ভিডিও দেখা যাবে। 

বলাই বাহুল্য, এই ভিডিও-র সঙ্গে ভাইরাল ভিডিও-র ভৌগলিক অবস্থানের কোনও মিল ছিল না। যা থেকে পরিষ্কার হয়ে যায় যে ভাইরাল ভিডিওটি কোনওভাবেই গঙ্গার উৎপত্তিস্থলের নয়, বরং অন্য কোনও অঞ্চলের। 

ভাইরাল ভিডিওটির উৎস জানতে এরপর ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে খোঁজা হয়। তখন ওই একই ভিডিও একাধিক ইনস্টাগ্রাম পোস্টে পাওয়া যায়। সেই পোস্টগুলি ২০২৪ সালের জানুয়ারিফেব্রুয়ারি মাসে শেয়ার করা হয়েছিল। যদিও ভিডিওটি কোথাকার সেই সম্পর্কে কিছু লেখা হয়নি। তবে কী কারণে হিমবাহ এই ধরনের ফাটল দেখা দেয় সেই বিষয়ে ক্যাপশনে নানা সম্ভাবনার কথা আলোচনা করা হয়েছিল। 

Advertisement

এই তথ্যগুলিকে কাজে লাগিয়ে এই সম্পর্কে কিওয়ার্ড সার্চ করা হলে ড্যারেল ম্যাকিন নামের এক ব্যক্তির ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে ওই একই ভিডিও পাওয়া যায়। তিনিই সবার প্রথম এই ভিডিওটি ২০২৩ সালের ৩০ অগস্ট নিজের ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছিলেন। 


ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে তিনি লিখেছিলেন, "জল এবং বরফের এই অবিশ্বাস্য শক্তি কাছে থেকে ধারণ দক্ষতা যদি আমার থাকত...! নদীগুলি উপরে তৈরি হয়, তারপর 'ভ্যাসিকেল'-এর মধ্য দিয়ে হিমবাহের অনেক গভীরে পড়ে, যেখানে বরফের নিচে কয়েক কিলোমিটার ভ্রমণ করে এবং তীব্র চাপের পরে কখনও কখনও বিশাল ঝর্ণা হিসাবে দেখা দেয়। এই জলধারাটি প্রায় ২০ ফুট উঁচু, এবং প্রায় ২০০ ফুট নীচে  টার্মিনাল মোরেইন পর্যন্ত প্রবাহিত হয়।" 

এই জায়গাটি সম্পর্কে ড্যারেল ম্যাকিন কোনও তথ্য দিয়েছেন কিনা জানতে এরপর তাঁর কমেন্ট সেকশন খতিয়ে দেখা হয়। সেখানে এক ব্যক্তি ভিডিওটি সম্পর্কে জানতে চান। তখন ড্যারেল বলেন, এটা একটি বৃহৎ হিমবাহের ভিত যা কানাডিয়ান আর্কটিকের বাইলট দ্বীপে ২০০০ মিটার উঁচু পাহাড়ের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে প্রবাহিত হয়। হিমবাহটি ২০ কিলোমিটার লম্বা, প্রায় ৫ কিলোমিটার চওড়া এবং এর পাদদেশ প্রায় ২০০ মিটার পুরু। তুষারপাত প্রতি বছর হিমবাহটিকে পুনরুজ্জীবিত করে। ফলে হিমবাহের বরফ ধীরে ধীরে সমুদ্রের দিকে নেমে আসে।"

তিনি আরও লেখেন, "গ্রীষ্মকালে হিমবাহে প্রচুর পরিমাণে জল গলে যায় যা হিমবাহের উপরে জলের পথ তৈরি করে এবং তারপর এই জল হিমবাহে প্রবেশ করে। এর ফলে হিমবাহের ভেতরে নদীগুলি ফুলেফেঁপে উঠতে থাকে। সেই সঙ্গে নদীগুলি হিমবাহের নীচে পলি সংগ্রহ করে এবং প্রচণ্ড চাপ তৈরি করে যা এই বিশাল ঝর্ণা হিসাবে বেরিয়ে আসে।" 

এটুকু লিখে এরপর ড্যারেল ম্যাকিন বাইলট দ্বীপের ওই এলাকার গুগল ম্যাপের লিঙ্কও সঙ্গে দিয়ে দেন। সেই লিঙ্ক অনুসরণ করে দেখা যায়, ওই বাইলট দ্বীপ এবং হিমবাহ থেকে বেরিয়ে আসা স্রোত, উত্তর মেরুর কাছাকাছি অবস্থিত। এই এলাকাকে কানাডিয়ান আর্কটিকও বলা হয়ে থাকে কারণ কানাডা এই দ্বীপের বেশ কাছে। নীচে গুগল ম্যাপের লোকেশনটি দেখা যাবে। 

তিনি এই ভিডিওটি কবে ধারণ করেছিলেন সেই বিষয়ে বিশদে জানতে আমরা ড্যারেলকে মেসেজ করেছি। তাঁর থেকে জবাব এলে রিপোর্টটি আপডেট করে দেওয়া হবে। 

অর্থাৎ, একটি সম্পূর্ণ অসম্পর্কিত ভিডিও ছড়িয়ে গঙ্গা নদীর উৎসস্থল বলে দাবি করা হচ্ছে, যা পুরোপুুরি মিথ্যা। 

Fact Check

Claim

ভিডিওতে গঙ্গা নদীর উৎপত্তিস্থল দেখা যাচ্ছে।

Conclusion

ভিডিওটি ২০২৩ সালের অগস্ট মাসে এক ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী পোস্ট করে লিখেছিলেন যে এটি উত্তর মেরুর কাছে কানাডিয়ান আর্কটিকের বাইলট নামের একটি দ্বীপের হিমবাহের দৃশ্য। 

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  1. কাক: অর্ধসত্য
  2. একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  3. অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Do you think a messenge is a fake ?
To know the truth, send that to our Number73 7000 7000 you can email on factcheck@intoday.com
Read more!
Advertisement
Advertisement