ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে চলা সামরিক সংঘর্ষের আবহে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা ধরনের ভিডিও-র ঝড় উঠেছে। কিছু ভিডিও এমন রয়েছে যেখানে কাউকে কথা বলতে, ভয় পেয়ে পালাতে, বা কাকুতি-মিনতি করতে দেখা ও শোনা যাচ্ছে।
যেমন একটি ভিডিওতে মাইক্রোফোন হাতে ধ্বংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা রক্তাক্ত অবস্থায় এক সৈনিককে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। ইংরাজিতে ওই ব্যক্তি যা বলছেন, তার অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, "ইরান, দয়া করে এবার আক্রমণ করা বন্ধ করো। অর্ধেক ইজরায়েল শেষ হয়ে গিয়েছে। এই ধ্বংসযজ্ঞ শেষ করার আবেদন জানিয়ে আমরা আত্মসমর্পণ করছি।"
আরেকটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দাবি করা হচ্ছে যে, এখন ইজরায়লি মিডিয়ায় কাঁদছে। ভিডিওতে বিধ্বস্ত অবস্থায় থাকা এক ব্যক্তির সামনে মাইক্রোফোন হাতে এক সাংবাদিককে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। কথোপকথনের অনুবাদন এ রকম, "দয়া করে আমায় একা ছেড়ে দিন। আমাদের জন্য ইজরায়লই একমাত্র দেশ। স্যর, আপনি কী বলতে পারবেন এখানে কী হয়েছে?"
তৃতীয় ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে একজন মহিলাকে নিজের সেলফি ক্যামেরা অন করে দৌড়তে। তিনি যখন ছুটছেন, তখন পিছনে বোমা বিস্ফোরণ হচ্ছে এবং ওই মহিলাকে আর্তনাদ করতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,
"এখন কেমন লাগে? মজা লাগছে তাই না? মজার কি পেয়েছো? সামনের দিনগুলোতে ভয়াবহতা তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। ইজরায়েল নামক রষ্ট্র পৃথিবীর মানচিত্রে থাকবে না ইনশাআল্লাহ! Alhamdulillah. Thanks for Islamic State Of IRAN Government.
ইজরায়েলের এমন একটা দৃশ্য দেখার জন্য মহান আরশের মালিকের কাছে অনেক চেয়েছি। আজ সেই ২৭ বছরের অপেক্ষার ফল আলহামদুলিল্লাহ পেয়েছি। ইনশাআল্লাহ! সামনের দিনে আরো দেখতে পাবো ফিলিস্তিনের মা বোনদের ঘাতক ইজরায়েলের করুণ অবস্থা।"
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভাইরাল তিনটি ভিডিও-ই এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা নির্মিত। গুগলের নতুন প্রযুক্তি Veo 3 দ্বারা এগুলো তৈরি করা হয়েছে।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল ভিডিওগুলি থেকে স্ক্রিনশট সংগ্রহ করে সেগুলোকে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে খোঁজা হলে এমন কোনও নির্ভরযোগ্য তথ্য বা সূত্র পাওয়া যায়নি যা থেকে এই ঘটনাগুলি সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
ভিডিওগুলো ভালোভাবে লক্ষ্য করে হলে দেখা যাবে, প্রত্যেকটি ভিডিও-র ডান দিকে নীচের অংশে Veo শব্দটি একইভাবে লেখা রয়েছে, বা সহজ কথায় একই ধরনের একটি ওয়াটারমার্ক রয়েছে। এই Veo হলো গুগলের একটি পরিষেবা। এই পরিষেবার মাধ্যমে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে এমন ভিডিও তৈরি করা সম্ভব হয় যার সঙ্গে বাস্তবের ফারাক খুবই কম। উদাহরণস্বরূপ, গুগল Veo-র মাধ্যমে তৈরি একটি ভিডিও, যেখানে একটি ডাইনসোরকে ব্যাগপাইপ বাজাতে দেখা যাচ্ছে। সেই ভিডিও-র যে অংশে যেভাবে Veo-ওয়াটারমার্ক রয়েছে, ভাইরাল ভিডিওগুলোতেও একই ওয়াটারমার্ক লক্ষ্য করা যাবে।
উপরন্তু, আরও কিছু বিষয় দেখে বোঝা যায় ভিডিওগুলি ভুয়ো। যেমন, প্রথম ভিডিওতে বাংলাদেশ ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম সময় টেলিভিশনের একটি লোগো ব্যবহার করা হলেও সময় টেলিভিশনের ফেসবুক পেজে আদতে এই ভিডিও ব্যবহার করে কোনও খবর দেখা যায়নি। দ্বিতীয় ভিডিওতে সংবাদ মাধ্যমের কথা ওই ব্যক্তির কথোপকথনের কোনও সামঞ্জস্য নেই। ওই ব্যক্তির কন্ঠস্বর দু'বার দু'রকম শোনাচ্ছে। তিনি সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরা ও মহিলা সাংবাদিকের সঙ্গে বিধ্বস্ত অবস্থায় কথা বলছেন, আবার তিনি-ই 'স্যর' সম্বোধন করে জানতে চাইছেন সেখানে কী ঘটনা ঘটেছে।
Google Veo-কী, কীভাবে কাজ করে?
Google Veo হল এক ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ভিডিও জেনারেশন টুল, যা টেক্সট বা ছবি থেকে বাস্তবধর্মী ভিডিও তৈরি করে। প্রথম Veo মডেল আনা হয় ২০২৪ সালে, পরে ২০২৫ সালের মে মাসে Google ইভেন্টে Veo 3 উন্মোচন করা হয়। Veo 3 আগের তুলনায় অনেক উন্নত—এটি ১ মিনিট পর্যন্ত ১০৮০p মানের ভিডিও বানাতে পারে, সেই সঙ্গে অডিও যোগ করতে পারে এবং ক্যামেরা মুভমেন্ট, সিনেম্যাটিক শট ইত্যাদিও বোঝে। এআই দ্বারা তৈরি এই ভিডিওগুলি ক্ষেত্রবিশেষে এতটাই নিখুঁত হয় যে কোনও টুলে ধরা পড়ে না।
যদিও এই পরিষেবা ভারতে এখনও শুরু হয়নি। বর্তমানে শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই পরিষেবা বর্তমানে ব্যবহার করা যায়। যার জন্য মোটা টাকা সাব্সক্রিপশন দিতে হয় গ্রাহকদের।
অর্থাৎ সবমিলিয়ে বুঝতে বাকি থাকছে না যে Veo 3 দ্বারা তৈরি ভিডিওগুলিকে আসল ঘটনা ভেবে শেয়ার করা হচ্ছে যা বিভ্রান্তিকর।
এই ভিডিওগুলিতে দেখা যাচ্ছে ইরানের হামলায় বিধ্বস্ত ইজরায়লিরা কীভাবে কাকুতি-মিনতি করছে।
ভাইরাল ভিডিওগুলি গুগলের এআই নির্মাণকারী টুল Veo 3 দ্বারা তৈরি। এগুলো আসল ঘটনার দৃশ্য নয়।