Advertisement

ফ্যাক্ট চেক: অযোধ্যায় নিম্নবর্ণের কিশোরীকে অপহরণ রাম সেনাদের? ভাইরাল ভিডিওর সত্যতা জানুন

সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ধর্ষণ করার লক্ষ্যে উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় নিম্নবর্ণের এক কিশোরীকে প্রকাশ্যে অপহরণ করছে রাম সেনার সদস্যরা।

সুরাজউদ্দিন মণ্ডল
  • কলকাতা,
  • 24 Nov 2024,
  • अपडेटेड 3:27 PM IST

ভারতে দলিত বা নিচু জাতের মানুষদের সঙ্গে বৈষম্যের ঘটনা নতুন নয়। তবে দলিত মানুষটি যদি মহিলা হয়ে থাকেন সে ক্ষেত্রে অনেক সময় কেবলমাত্র তার সামাজিক পরিচয়ের কারণে ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির মত অপরাধের শিকারও হতে হয়। গত কয়েকদিন আগে এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের বান্দায়। যেখানে একজন দলিত মহিলাকে ধর্ষণের পর খুন করে তাঁর দেহ কেটে টুকরো টুকরো করে দুষ্কৃতীরা।

আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এই সংক্রান্ত একটি ভিডিও। যেখানে কয়েকজনকে অটো থেকে একজন মহিলাকে জোরপূর্বকভাবে নামিয়ে একটি স্করপিও গাড়িতে তুলে নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ধর্ষণ করার লক্ষ্যে উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় নিম্নবর্ণের এক কিশোরীকে প্রকাশ্যে অপহরণ করেছে রাম সেনার সদস্যরা।

উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “রাম সৈনিকরা যোগীর উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় নিম্নবর্ণের এক কিশোরীকে প্রকাশ্যে অপহরণ করে রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতেছে। না জানি এই অভাগার কপালে কি হবে।” এই একই ভিডিও শেয়ার করে অপর এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “দেখ ভাই দেখ তোদের মত কত নম শূদ্র হিন্দু মেয়েদেরকে হিন্দুরাই জোর করে ধর্ষণ করে শুধু নমঃশূদ্র হিন্দু হওয়ার কারণে আজকে তাদের এই দুর্দশা এই হল ভারতের উত্তর প্রদেশ।” (সব বানান অপরিবর্তিত।) 

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে উত্তরপ্রদেশ, রাম সৈনিক কিংবা ধর্ষণের কোনও সম্পর্ক নেই। আসলে ভিডিওটি পরিবারের অমতে অন্য কাস্টের ছেলের সঙ্গে বিয়ে করাই গত শুক্রবার রাজস্থানের বালোত্রা জেলায় মেয়েটির বাবার বাড়ির সদস্যদের তাকে তুলে নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে।

Advertisement

কীভাবে জানা গেল সত্য?

ভাইরাল ভিডিও ও দাবির সত্যতা জানতে সেটির কি-ফ্রেম নিয়ে গুগুলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে চলতি বছরের ২২ নভেম্বর একটি এক্স হ্যান্ডেলে এই একই ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটি শেয়ার করে সেখানে রাজস্থান পুলিশ ও রাজস্থানের বালোত্রা জেলা পুলিশকে ট্যাগ করে তিনি লেখা হয়েছে, “প্রেম করে বিয় করার জন্য মঞ্জুকে অপহরণ করা হয়েছে। কুলদীপ পুলিশের নিরাপত্তা চেয়েছিলেন।” 

ভিডিওটির কমেন্ট সেকশনে ওই এক্স ব্যবহারকারীর তরফে আরও একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “আমার নাম কুলদীপ, আমার স্ত্রীর নাম মঞ্জু। আমরা পালিয়ে বিয়ে করেছি। আজ যখন আমরা মন্দিরে পুজো দিতে যাচ্ছিলাম তখন আমার স্ত্রীর পরিবাবের সদস্যরা আমাদের উপর হামলা চালায় এবং আমার স্ত্রী মঞ্জুকে নিয়ে চলে গেছে।”     

এরপর উক্ত সূত্র ধরে পরবর্তী সার্চ করলে আমরা চলতি বছরের ২৩ নভেম্বর ভাইরাল ভিডিওর একটি স্ক্রিনশট-সহ এবিপি লাইভের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজস্থানের সিওয়ানার বাসিন্দা মঞ্জু পরিবারে অমতে বালোত্রার বাসিন্দা কুলদীপ নামক এক যুবকের সঙ্গে গত ১১ নভেম্বর প্রেম করে বিয়ে করেন। এরপর গত ২২ নভেম্বর সন্ধ্যায় স্বামী ও তার পরিবারের সঙ্গে পুজো দিতে যাচ্ছিল মঞ্জু। সেই সময় পাচপদ্রা রোডে মঞ্জুর বাবার বাড়ির সদস্যরা তার স্বামী ও স্বামীর পরিবারের উপর হামলা চালিয়ে মঞ্জুকে নিয়ে পালিয়ে যায়। 

এরপর পরবর্তী সার্চে গত ২৩ নভেম্বর বালোত্রা জেলা পুলিশের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে এই সংক্রান্ত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। সেখানে বাল্ট্রার এসপি জানিয়েছেন, পরিবারের অমতে অন্য কাস্টের ছেলের সঙ্গে বিয়ে করাই মেয়ের বাড়ির বিক্ষুব্ধ সদস্যরা মেয়েটিকে অপহরণ করে। তবে মেয়ে ও ছেলেটির ব্যক্তি স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষার্থে পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে মেয়েটিকে নিরাপদে উদ্ধার করে। পাশাপাশি এই অপহরণের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মেয়েটির বাবা-মা, ভাই ও কাকা-সহ মোট ৯ জন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, পুলিশের তরফে গ্রেপ্তার হওয়া ৯ জনরে একটি ছবি ও ভিডিও-ও সেখানে পোস্ট করা হয়েছে।

এরপর এবিষয়ে বিস্তারিত জনাতে আমরা এই ঘটনার অন্যতম তদন্তকারী অফিসার তথা বালোত্রা থানার SHO ওম প্রকাশ বিষ্ণোইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান, “ভাইরাল ভিডিওতে যে মহিলাকে অপহরণ করা হয়েছে, তার সঙ্গে উত্তর প্রদেশ, রাম সেনা কিংবা ধর্ষণের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং পরিবারের অমতে বিয়ে করাই ওই মহিলাকে তার বাবার বাড়ির সদস্যদের তরফে অপহরণ করা হয়েছিল। মহিলার পুরো নাম মঞ্জু মালি এবং যে ছেলেটিকে সে বিয়ে করেছে তার নাম কুলদীপ সোনি। এরা দুজনেই রাজস্থানের বালোত্রা জেলার বাসিন্দা। তবে এদের দুজনের কাস্ট আলাদা হলেও এরা কেউই দলিত বা নিম্নবর্ণের সদস্য নয়। মালি এবং সোনি উভয় পদবীই ওবিসি তালিকাভুক্ত।”

এর থেকে প্রমাণ হয় যে রাজস্থানের বালোত্রার ভিডিও উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যার দাবি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করা হচ্ছে।

ফ্যাক্ট চেক

দাবি

ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে ধর্ষণ করার লক্ষ্যে উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় নিম্নবর্ণের এক কিশোরীকে প্রকাশ্যে অপহরণ করছে রাম সেনার সদস্যরা।

ফলাফল

ভিডিওটিতে পরিবারের অমতে অন্য কাস্টের ছেলের সঙ্গে বিয়ে করাই রাজস্থানের বালোত্রা জেলায় মেয়েটিকে তার বাবার বাড়ির সদস্যদের দ্বারা তুলে নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  1. কাক: অর্ধসত্য
  2. একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  3. অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদের नंबर 73 7000 7000উপর পাঠান.
আপনি আমাদের factcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement