গত বুধবার দ্বিতীয়বার আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রতিপক্ষ উপ-রাষ্ট্রপতি তথা ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে হারিয়ে ফের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তন করতে চলেছেন এই রিপাবলিকান নেতা। আর ট্রাম্প রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পরেই শেখ হাসিনাকে ‘প্রধানমন্ত্রী’ উল্লেখ করে একটি বিবৃতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের তরফে ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে।
আর এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ট্রাম্পের করা একটি তথাকথিত মন্ত্বব্য। সেখানে দাবি করা হচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প পিডিবি নামক একটি পডকাস্টে এসে জানিয়েছেন, তিনি এখনও পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মনে করেন।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী পিডিবি পডকাস্টে ট্রাম্পের সাক্ষাৎকারের একটি স্ক্রিনশট শেয়ার করে লিখেছেন, “আমি মনে করি শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীঃ পিবিডি ব্রডকাস্টকে দেওয়া এক স্বাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প। এসময় তিনি বাংলাদেশের অবৈধ দখলদার সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন- যারা বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন, তারা আমাকে পদত্যাগ পত্রটি দেখান। ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বাক্ষাৎকারে আরও বলেন, বাংলাদেশ-পাকিস্তানে কি হচ্ছে আমি সব জানি। এখানে সন্ত্রাসবাদে চাষাবাদ হচ্ছে।” (সব বানান অপরিবর্তিত।) একই দাবি-সহ আরও পোস্ট দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল দাবিটি মিথ্যে ও বিভ্রান্তিকর। চলতি বছরের ১৭ অক্টোবর পিবিডি পডকাস্টকে দেওয়া স্বাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনাকে নিয়ে কোনও মন্তব্যই করেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
প্রথমত, ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করার পর কিংবা নির্বাচন চলাকালীন শেখ হাসিনাকে এখনও বাংলাদেশের প্রাধানমন্ত্রী বলে দাবি করে থাকলে সেই সংক্রান্ত খবর অবশ্যই বাংলাদেশি তথা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হবে। তাই ভাইরাল দাবির সত্যতা জানতে আমরা এই সংক্রান্ত একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করি। কিন্তু সেই সার্চে এমন কোনও নির্ভরযোগ্য তথ্য বা প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি যা থেকে এই দাবির সত্যতা প্রমাণ হয়।
তবে আমরা আমাদের সার্চে গত ৩১ অক্টোবর ডোনাল্ড ট্রাম্পের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে একটি পোস্ট খুঁজে পাই। যেখানে তিনি, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপরে হওয়া অত্যাচার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি লেখেন ‘‘অশান্ত বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিস্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘু, যারা দুষ্কৃতীদের হাতে প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছেন। লুঠপাট চলছে। এর তীব্র নিন্দা করছি। কিন্তু বাইডেন ও কমলা আমেরিকা তথা গোটা বিশ্বে হিন্দুদের উপেক্ষা করেছেন।” কিন্তু সেই পোস্টের কোথাও তিনি শেখ হাসিনা কিংবা বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসকে নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।
যেহেতু ভাইরাল পোস্টে দাবি করা হয়েছে যে ডোনাল্ড ট্রাম্প পিডিবি পডকাস্টে এসে শেখ হাসিনাকে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তাই পরবর্তী সার্চে আমরা পিডিবি পডকাস্টকে দেওয়া ট্রাম্পের সেই স্বাক্ষাৎকারটি খুঁজে বার করি। তখন আমরা গত ১৭ অক্টোবর পিডিবি পডকাস্টের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ট্রাম্পের ১ ঘন্টা ২৬ মিনিটের সেই স্বাক্ষাৎকারটি খুঁজে পাই। এরপর আমরা পুরো স্বাক্ষাৎকারটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করি।
সেখানে চ্যানেলের মালিক প্যাট্রিক বেট-ডেভিডের সঙ্গে কথোপকথনে ট্রাম্পকে কমলা হ্যারিস, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার আমলে আমেরিকার অর্থনীতি, নির্বাচনে কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটের গুরুত্ব, সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ইরানের ওপর জারি নিষেধাজ্ঞা ও আমেরিকার বিদেশ নীতি-সহ একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যায়। কিন্তু ১ ঘন্টা ২৬ মিনিটের সেই স্বাক্ষাৎকারের ট্রাম্পকে কোথাও বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি কিংবা শেখ হাসিনাকে নিয়ে কোনও মন্তব্যই করেতে দেখা যায়নি। পাশাপাশি পিডিবি পডকাস্টকে দেওয়া ট্রাম্পের সেই স্বাক্ষাৎকারটি একাধিক আমেরিকান সংবাদমাধ্যমও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানেও বাংলাদেশ কিংবা হাসিনার কথা উল্লেখ করা হয়নি। সেই প্রতিবেদনগুলি এখানে ও এখানে দেখা যাবে।
এরপর এ বিষয়ে বিস্তারিত জনতে আমরা ইন্ডিয়া টুডের আমেরিকার প্রতিনিধি রোহিত শর্মার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান, পিবিডি পডকাস্টকে দেওয়া স্বাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনাকে নিয়ে কোনও মন্তব্যই করেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্প বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হওয়া অত্যাচার ছাড়া বাংলাদেশ নিয়েও কোনও মন্তব্য করেননি।
এর থেকে প্রমাণ হয় শেখ হাসিনাকে বর্তমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দাবি করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের যে মন্তব্যটি ভাইরাল করা হচ্ছে সেটি ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর।
পিডিবি পডকাস্টকে দেওয়া স্বাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি মনে করেন এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভাইরাল দাবিটি মিথ্যে ও বিভ্রান্তিকর। চলতি বছরের ১৭ অক্টোবর পিবিডি পডকাস্টকে দেওয়া স্বাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনাকে নিয়ে কোনও মন্তব্যই করেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প।