ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে মুর্শিদাবাদের রক্তক্ষয়ী প্রতিবাদের মাসুল হিসাবে ঝরে গিয়েছে তিনটি প্রাণ। স্বাভাবিক ছন্দ ফিরলেও চাপা উত্তেজনা এখনও বিরাজমান। এই পরিস্থিতিতে একটি হাড় হিম করা ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করে তা মুর্শিদাবাদের ঘটনা বলে দাবি করা হচ্ছে।
ভিডিওতে কয়েকশো উন্মত্ত জনতাকে একটি স্থানে এক যুবকে মাটি ফেলে নির্মমভাবে মারধর করতে দেখা যাচ্ছে (ভিডিও-র দৃশ্য আপনাদের বিচলিত করতে পারে)। ভিডিওটি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, এই ঘটনা মুর্শিদাবাদের। এবং হিন্দুদের সঙ্গে এই অত্যাচার করা হচ্ছে।
এই ভিডিওটি পোস্ট করে এর ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "যেসব হিন্দুরা এখনো ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে জেগে আছো এই ভিডিওটী শুধু তাদের জন্য। ভাববেন না এটা বাংলাদেশের ঘটনা এটা পশ্চিমবঙ্গে মুশিদাবাদের ঘটনা। ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখুন এবং সকলের কাছে পৌঁছে দিন অনুরোধ করছি।"
সেই সঙ্গে ভিডিওটির ওপর লেখা হয়েছে, "মুসলিমরা পৃথিবীর ক্যান্সার এরা কত হিংস্র হতে পারে এই ভিডিওটা তার প্রমান এদের বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর হিন্দুরা এই ভিডিও দেখার পরে তোমরা যদি ঘুমিয়ে থাকো তোমাদের ছেলেমেয়েদের নেকড়ের মতন ছিড়ে ছিড়ে খাবে।"
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভাইরাল ভিডিওটি মুর্শিদাবাদের নয় বরং বাংলাদেশেরই। গত মার্চ মাসে ঢাকা শহরে এক ধর্ষণে অভিযুক্তকে মারধরের ভিডিও এটি।
যেভাবে জানা গেল সত্যি
ভাইরাল ভিডিও থেকে স্ক্রিনশন নিয়ে তা রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে খোঁজা হলে ওই একই ভিডিও-র অংশ আমরা দেখতে পাই বাংলাদেশি সংবাদ মাধ্যম একুশে টিভি-র ইউটিউব চ্যানেলের একটি প্রতিবেদনে। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা হয়, "খিলক্ষেত ধর্ষণের অভিযোগে তরুণকে পিটিয়ে আহত: পুলিশ গাড়িতে হামলা।"
গত ১৯ মার্চ প্রকাশ পাওয়া এই ভিডিও থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে যায় যে এই ঘটনার সঙ্গে মুর্শিদাবাদে হিংসার কোনও সম্পর্ক থাকা সম্ভব না। কারণ মুর্শিদাবাদের হিংসা ১০ এপ্রিলের পর ছড়ায়।
এরপর আমরা ভাইরাল ভিডিওটির একটি কিফ্রেমের সঙ্গে একুশে টেলিভিশনের ভিডিও রিপোর্টের একটি কিফ্রেমের তুলনা করি। যা থেকে পরিষ্কার হয়ে যায় যে দুটি ভিডিও একই ঘটনার।
বাংলাদেশের উক্ত খিলক্ষেতের ঘটনার বিষয়ে সার্চ করে ১৯ মার্চের প্রথম আলোর একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ধর্ষণে অভিযুক্ত এক কিশোরকে ধরে বিক্ষুদ্ধ স্থানীয়রা পেটান। এমনকি সেই কিশোরকে থানায় নিতে গেলে পুলিশের উপরও হামলা চালানো হয়। ঘটনায় আঘাত পান থানার ওসি আশিকুর রহমান। ধর্ষণে অভিযুক্ত ও থানার ওসি উভয়কেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে বাংলাদেশের একটি ঘটনাকে মুর্শিদাবাদের দাবি করে ভুয়ো সাম্প্রদায়িক দাবিতে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে মুর্শিদাবাদে কীভাবে মুসলিমদের দ্বারা হিন্দুদের মারধর করা হচ্ছে।
ভাইরাল ভিডিওটি বাংলাদেশের ঢাকা শহরের খিলক্ষেত এলাকার যেখানে গত মার্চ মাসে ধর্ষণে অভিযুক্তকে গণপিটুনি দেওয়া হচ্ছিল।