
সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে যে, পশ্চিমবঙ্গের এক মাছ বিক্রেতা এবং অন্যান্য মাংসের দোকানদারকে একদল দুষ্কৃতী হুমকি দিয়েছে এবং বলপূর্বক তাদের দোকান বন্ধ করতে বাধ্য করেছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, গেরুয়া উত্তরীয় গলায় থাকা হিন্দিভাষী এক যুবক জোর করে ফুটপাথে বসা এক মাছ ব্যবসায়ীর দোকান বন্ধ করে দিচ্ছে। এবং এরপর মাংসের দোকানে গিয়ে হুমকি দিয়ে তাদের দোকান বন্ধ করতে বলছে। ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "একদল গুন্ডা বাংলার একটি বাজারে ঢুকে স্থানীয় বেশ কয়েকটি মাছের দোকান ভাঙচুর করেছে। তাহলে এখন তারা বাঙালিদেরও মাছ খাওয়া বন্ধ করতে চায়? #votefortmc"
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে এই ঘটনাটি পশ্চিমবঙ্গের নয়, বরং গত ২৭ নভেম্বর ঘটনাটি দিল্লির গোকুলপুরীতে ঘটেছিল।
সত্য উন্মোচন
ভাইরাল ভিডিওটির কিফ্রেমস গুগলের রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে খোঁজা হলে এই একই ভিডিওর বড় ভার্সন একটি ইন্সটাগ্রাম হ্যান্ডেলে পাওয়া যায়। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা ছিল, "হিন্দু জাতীয়তাবাদ সমর্থকেরা মাছ ও মাংস বিক্রেতাদের উচ্ছেদ করে এবং তাদের দোকান বন্ধ করে দেয় কারণ ওই এলাকার কাছেই একটি মন্দিরের উপস্থিতি ছিল।" ক্যাপশন অনুযায়ী, ঘটনাটি দিল্লীর গোকুলপুরী এলাকায় গত ২৭ নভেম্বর ঘটেছিল।
ভিডিওটি খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বিভিন্ন দোকানের শাটারে এবং দেওয়ালে হিন্দিতে গোকুলপুরী কথাটি লেখা ছিল। যা ইঙ্গিত করে যে জায়গাটি দিল্লির গোকুলপুরী এবং বাংলার কোথাও নয়।
এই ভিডিওর কমেন্টের অংশে দেখা যায় অনেকেই রাহুল পাচ্যৌরি নামে এক ব্যক্তির ইন্সটাগ্রাম হ্যান্ডেল মেনশন করেছেন, যাকে এই হামলার মূল হোতা বলে দাবি করা হয়েছে।
রাহুল পাচ্যৌরি নামের এই ব্যক্তির ইন্সটাগ্রাম হ্যান্ডেল খুঁজে দেখা যায় যে সেখানে গত ২৮ নভেম্বর ভাইরাল ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে। ক্যাপশনে লেখা হয়, “গোকুলপুরী এলাকা থেকে খবর আসছিল যে পুলিশের আগাম সতর্কতা সত্ত্বেও হিন্দু ও মুসলিম ব্যবসায়ীরা মন্দিরের ৩০ মিটারের মধ্যে মাংসের ব্যবসা করছেন। হিন্দু যুবকরা একত্রিত হয়ে মাংস ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে জানিয়েছে যে ভবিষ্যতে যদি তারা এই ব্যবসা করতে চান, তবে তা মন্দির থেকে দূরে করুন। যদি কাউকে মন্দিরের আশেপাশে ব্যবসা করতে দেখা যায়, তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
একই দিনে এই অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করা অন্য একটি ভিডিওতে ক্যাপশনে লেখা ছিল, “গোকুলপুরীতে মাংসের ব্যবসা চলছিল। আজ খোলাখুলিভাবে সতর্ক করা হয়েছে যে খুব শীঘ্রই মন্দিরের সামনে থেকে মাংসের ব্যবসা সরিয়ে নিতে হবে। অন্যথায় পুলিশের পক্ষ থেকে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ভিডিওটিতে রাহুল পাচ্যৌরি দাবি করেন যে তারা একটি নির্দিষ্ট নিয়ম কার্যকর করছেন। সেই নিয়ম হলো, মাংস বিক্রেতাদের যে কোনও হিন্দু ধর্মীয় স্থান থেকে কমপক্ষে ৫০০ মিটার দূরে ব্যবসা করতে হবে। এই নির্দেশ না মানলে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাছ বিক্রেতাকে হুমকি দেওয়ার ভাইরাল ভিডিওতে থাকা এক ব্যক্তিকে এই ভিডিওতে রাহুলের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। আমরা তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাই, যেখানে তার নাম আকাশ পাণ্ডাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমরা সরাসরি রাহুল পাচ্যৌরির সঙ্গে যোগাযোগ করি। আজতক ফ্যাক্ট চেক টিমকে রাহুল বলেন যে, ঘটনাটি গত ২৭ নভেম্বর, বিকেল ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে গোকুলপুরী এলাকায় ঘটে। রাহুলের দাবি, তাকে অন্যায়ভাবে দোষারোপ করা হয় এই বলে যে তিনি মুসলিম বিক্রেতাদের আক্রমণ করেছিলেন। রাহুলের বক্তব্য, মুসলমানদের প্রতি তার কোনও বিদ্ধেষ নেই। তার একমাত্র উদ্বেগের বিষয় হলো, কোনও মাংসের দোকান যেন মন্দিরের কাছাকাছি না বসে। রাহুল আরও বলেন যে প্রাথমিকভাবে পুলিশ তাকে ও তার সঙ্গীদের আটক করলেও পরে ছেড়ে দিয়েছে।
সেই সঙ্গে এমন কোনও খবরও পাওয়া যায়নি যেখানে বলা হয় পশ্চিমবঙ্গে মাছ ব্যবসায়ীদের উপর হামলার এমন কোনও ঘটনা ঘটেছে। সবমিলিয়ে বোঝাই যাচ্ছে যে ভিডিওটি বিভ্রান্তিকর দাবিতে শেয়ার করা হয়েছে।
(নয়া দিল্লি থেকে অর্জমা ভট্টাচার্যের রিপোর্ট)
এই ভিডিওটি পশ্চিমবঙ্গের যেখানে একদল দুষ্কৃতী মাছ ও মাংস ব্যবসায়ীদের হুমকি দিয়ে দোকান বন্ধ করাচ্ছে।
এই ভিডিওটি দিল্লির গোকুলপুরী এলাকার যেখানে গত ২৭ নভেম্বর কয়েকজন হিন্দুত্ববাদী মন্দিরের কাছে মাছ-মাংসের দোকান না রাখার দাবিতে তাদের হুমকি দেয়।