
বিধানসভা নির্বাচনের কয়েকমাস আগে ভোটার তালিকার বিশেষ ও নিবিড় সংশোধন বা SIR প্রক্রিয়া শুরু হতেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার তালিকায় নাম থাকার অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। এমনকি সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে পালানোর চেষ্টার অভিযোগে একাধিক এলাকা থেকে গ্রেফতার হয়েছে প্রায় শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিক। আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাঠি এবং ঝাড়ু হাতে রাস্তায় শতশত মানুষের বিক্ষোভ প্রদর্শনের একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, অবৈধ বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গা অভিবাসীরা পশ্চিমবঙ্গে SIR-এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে। উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “SIR..কেনো দরকার বুজেছেন তো ⁉️ কারবলিক এসিড গর্তে পড়তেই ফোনা তুলে কালসাপ বেরিয়েছে,এরাই বেগমের বাং+আলি ভোটার যারা আমাদের দেশে থাকবে খাবে আর আমাদের কাটবে আমাদের মন্দির ভাঙবে,,,এরা সেই কালসাপ।” (সব বানান অপরিবর্তিত)
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটি পশ্চিমবঙ্গের তো নয়ই এমকি ভারতেরও নয়। বরং এটি বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার ঘটনা এবং এতে স্থানীয়দের উপজেলায় সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে দেখা যাচ্ছে।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল ভিডিও এবং দাবির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম সংগ্রহ করে সেগুলি গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর এই একই ক্লিপ ‘বিপ্লব বিপ্লব’ নামক এক ফেসবুক ব্যবহারকারীর প্রোফাইলে পাওয়া যায়। বিপ্লবের প্রোফাইল অনুযায়ী তিনি বাংলাদেশের ফরিদপুরের বাসিন্দা। ভিডিওটি শেয়ার করে তিনি ক্যাপশনে লিখেছেন, "আজকে আন্দোলনের ভিডিও চিত্র।"
এর থেকে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, ভিডিওটি পশ্চিমবঙ্গের SIR-র প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। কারণ নির্বাচন কমিশন গত ২৭ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গ-সহ অন্যান্য ১২টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভোটার তালিকার বিশেষ ও নিবিড় সংশোধনের কথা ঘোষণা করেছিল। অন্যদিকে ভাইরাল ভিডিওটি তারও প্রায় দেড় মাস আগে থেকে বিপ্লব নামক ওই ব্যক্তির প্রোফাইলে রয়েছে।
এরপর বিষয়টি সম্পর্কে জানতে ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেকের তরফে বিপ্লবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি নিশ্চিত করেন যে ভিডিওটি বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা এলাকায় তোলা। পাশাপাশি তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনের তরফে স্থানীয় নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্বিন্যাসের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভাঙ্গা উপজেলায় ধারাবাহিক বিক্ষোভ করে স্থানীয় বাসিন্দারা।
পরবর্তীতে এই সংক্রান্ত অনুসন্ধান চালালে প্রথম আলো, ঢাকা টুডে, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, দ্য ডেইলি স্টার এবং দ্য ঢাকা ট্রিবিউনের মতো একাধিক বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই সব প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সারা দেশে ৪৬টি নির্বাচনী এলাকার সীমানা পরিবর্তন বা পুনর্নির্ধারণ করে একটি গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি প্রকাশ করে। আর সেই নতুন বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর ৪ নম্বর আসন থেকে বাদ দিয়ে ফরিদপুর ২ নম্বর আসনের নগরকান্দায় যুক্ত করা হয়। আর এই সিদ্ধান্তের ফলে ভাঙ্গা-সহ বেশ কয়েকটি জেলায় বিক্ষোভ দেখা দেয়।
বিপ্লব আর জানান, “নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত স্থানীয়দের জীবিকাকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।” কারণ আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর ৪ নম্বর আসন থেকে বাদ দিয়ে ফরিদপুর ২ নম্বর আসনে অন্তর্ভুক্ত করার ফলে নিকটতম প্রশাসনিক কার্যালয়ের দূরত্ব এখন প্রায় ৪০ কিলোমিটার হয়ে গেছে। তবে আপাতত, আমরা আমাদের প্রতিবাদ স্থগিত রেখেছি। কারণ এই আসনের পুনর্বিন্যাসের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের হয়েছে।”
এর থেকে প্রমাণ হয় যে, ভিডিওটি ভারতের নয় এবং এর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের SIR প্রক্রিয়ার কোনও সম্পর্ক নেই।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, অবৈধ বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গা অভিবাসীরা পশ্চিমবঙ্গে SIR-এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে।
ভাইরাল ভিডিওটি পশ্চিমবঙ্গের তো নয়ই এমকি ভারতেরও নয়। বরং এটি বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার ঘটনা এবং এতে স্থানীয়দের উপজেলায় সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে দেখা যাচ্ছে।