Advertisement

ফ্যাক্ট চেক: ‘AK-47’ হাতে মালদায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে ‘জঙ্গি’? না, ভিডিওর আসল রহস্য জানুন

মালদা পুলিশের তরফে ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেককে জানানো হয়েছে যে, ভাইরাল ভিডিওর ব্যক্তিটি কোনও জঙ্গি নয় বরং তিনি পেশায় একজন ইলেকট্রিশিয়ান। মালদার ইংরেজ বাজার থানার মিলকি এলাকার বাসিন্দা ওই ব্যক্তি তাঁর কাজের জন্য ব্যবহৃত ড্রিল মেশিন, হ্যামার, রড, স্ক্রু ড্রাইভার ও একটি কালো হোল্ডার নিয়ে যাচ্ছিলেন।

সুরাজউদ্দিন মণ্ডল
  • কলকাতা,
  • 27 Apr 2025,
  • अपडेटेड 6:49 PM IST

কিছুদিন আগে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষের জেরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল মালদার মোথাবাড়ি এলাকা। অন্যদিকে গত মঙ্গলবার কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসারন ভ্যালিতে নৃশংস জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ২৬ জন। আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে একটি সিসিটিভি ফুটেজ। পিছন থেকে রেকর্ড হওয়া সেই ফুটেজে এক ব্যক্তিকে দুই হাতে কিছু নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’ নামক বাংলাদেশ ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনের এক সন্ত্রাসবাদী পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার মিলকি এলাকায় একে-৪৭ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। 

উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী নিজের ওয়ালে লিখেছেন, “এটি সিসিটিভি ভিডিওতে ধারণ করা হয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে যে, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (একটি বাংলাদেশি মুসলিম সন্ত্রাসী গোষ্ঠী) নামের এক সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী পশ্চিমবাংলার মালদার #মিলকি অঞ্চলের কাছে একে-৪৭ নিয়ে এলোমেলোভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে।” এই একই ভিডিও শেয়ার করে অন্য একজন লিখেছেন, “বর্তমান মালদা মিল্কি ফাটাক পাড়াতে মৌলবাদী জঙ্গির চলাচল লক্ষ্য করা গেছে।” (সব বানান অপরিবর্তিত)

মালদা পুলিশের তরফে ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেককে জানানো হয়েছে যে, ভাইরাল ভিডিওর ব্যক্তিটি কোনও জঙ্গি নয় বরং তিনি পেশায় একজন ইলেকট্রিশিয়ান। মালদার ইংরেজ বাজার থানার মিলকি এলাকার বাসিন্দা ওই ব্যক্তি তাঁর কাজের জন্য ব্যবহৃত ড্রিল মেশিন, হ্যামার, রড, স্ক্রু ড্রাইভার ও একটি কালো হোল্ডার নিয়ে যাচ্ছিলেন।

আরও পড়ুন

সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে

পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর উত্তপ্ত গোটা দেশ। আর এই আবহে যদি মালদাতে কোনও জঙ্গিকে প্রকাশ্যে একে-৪৭ বা অন্য কোনও অস্ত্র নিয়ে ঘুরতে দেখা যায় তাহলে সেই সংক্রান্ত খবর অবশ্যই রাজ্য তথা দেশেরে প্রথম শ্রেণির সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হতো। কিন্তু আমরা আমাদের অনুসন্ধানে এমন কোনও তথ্য বা প্রতিবেদন খুঁজে পাইনি যা থেকে এর সত্যতা প্রমাণ হয়। যা থেকে অনুমান করা যায় যে, ভিডিওটির পিছনে অন্য কোনও রহস্য থাকলেও থাকতে পারে।

Advertisement

তাই এরপর ভাইরাল দাবি ও ভিডিওর সত্যতা জানতে একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করলে ২০২৫ সালের ২৬ এপ্রিল মালদা জেলা পুলিশের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এই সংক্রান্ত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। যেখানে মালদা জেলা পুলিশের তরফে ভাইরাল ভিডিওটিকে ‘ফেক নিউজ’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ভিডিওটি সম্পর্কে সেখানে লেখা হয়েছে, “সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কিছু ব্যক্তি ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন যে, ইংলিশবাজার থানার অন্তর্গত মিলকি এলাকায় একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন এবং তাঁর হাতে একটি AK-47 রাইফেল ছিল। এই খবর পাওয়ার পর, মিলকি পুলিশ ফাঁড়ির অফিসাররা সাথে সাথে ঘটনাটি খতিয়ে দেখেন। তদন্তে দেখা যায়, ওই ব্যক্তি আসলে একজন ইলেকট্রিশিয়ান, যিনি তাঁর কাজের জন্য ব্যবহৃত ড্রিল মেশিন, হ্যামার, রড, স্ক্রু ড্রাইভার ও একটি কালো হোল্ডার নিয়ে যাচ্ছিলেন। ঘটনার ভিডিওটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কাটাছাঁট করে গুজব ছড়ানোর জন্য শেয়ার করা হয়েছে। এই ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা কথা ও গুজব মানুষের জীবনের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।” 

পাশাপাশি, মালদা জেলা পুলিশের পোস্টে ভাইরাল ভিডিওর ব্যক্তির একটি ছবিও পোস্ট করা হয়েছে। যেখানে তাকে তার কাজের জন্য ব্যবহৃত হাঁতুড়ি ও রড-সহ অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে দাঁড়ি থাকতে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে মালদা জেলা পুলিশের ওই একই পোস্টে ভাইরাল ভিডিওটি নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগকারী যুবকের বয়ানও অপলোড করা হয়েছে। সেখানে অভিজিৎ ঘোষ নামক ওই অভিযোগকারী যুবকও ভাইরাল ভিডিওর ব্যক্তিকে জঙ্গি নয় বরং একজন ইলেকট্রিশিয়ান হিসাবে উল্লেখ করেছেন। এবং সে তাদের প্রতিবেশী বলেও জানিয়েছেন। 

এরপর বিষয়টি সম্পর্কে জানতে আমরা মালদা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সম্ভব জৈনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান, “ভাইরাল ভিডিওর ব্যক্তিটি কোনও জঙ্গি নয়। বরং তিনি পেশায় একজন ইলেকট্রিশিয়ান। তার বাড়ি মালদার ইংরেজ বাজার থানার মিলকি এলাকায়। গত ২৫ এপ্রিল রাতে তিনি তার কাজের জন্য ব্যবহৃত ড্রিল মেশিন, হ্যামার, রড, স্ক্রু ড্রাইভার ও একটি কালো হোল্ডার নিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই সময় স্থানীয় একটি দোকানের সিসিটিভিতে তার ভিডিও ধরা পড়ে। পরবর্তীতে দোকানের মালিক ও তার বন্ধু অভিজিৎ ঘোষ ভিডিওটি দেখার পরে তাদের সন্দেহ তৈরি হয় এবং তারা মিলকি পাড়া ফাঁড়িতে যোগাযোগ করে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনার তদন্ত করে ভাইরাল ভিডিওটির প্রকৃত সত্য উন্মোচন করে।”

এরপর আমরা এই ঘটনার অভিযোগকারী অভিজিৎ ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনিও আমাদের এই একই তথ্য প্রদান করে  জানান, “একটি ভুল বোঝাবুঝির কারণে এই সমস্যাটা হয়েছে এবং ভিডিওটি মিথ্যে দাবি-সহ ছড়িয়ে পড়েছে। আসলে রাতের সিসিটিভি ফুটেজটি অস্পষ্ট ছিল। আর তাই প্রথমিকভাবে ভিডিওটি দেখার পর আমাদের মনে হয়েছিল কেউ বন্দুক নিয়ে আমাদের এলাকায় অশান্তি পাকানোর জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেই কারণেই আমরা সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করি। পুলিশের তদন্তের পর সত্যিটা সামনে চলে আসে। তখন আমরা নিশ্চিত হই যে ভাইরাল ভিডিওর ওই ব্যক্তিটি কোনও জঙ্গি নয় বরং সে আমাদেরই প্রতিবেশী এবং পেশায় একজন ইলেকট্রিশিয়ান। পাশাপাশি তার হাতে থাকা যে বস্তুটিকে আমরা অস্ত্র বা বন্দুক ভাবছিলাম সেটি আসলে তার কাজের জন্য ব্যবহৃত একটি ড্রিল মেশিন।”

এর থেকে প্রমাণ হয় যে, মালদার মিলকি এলাকার একজন ইলেকট্রিশিয়ানের ভিডিও শেয়ার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকরমূলক পোস্ট ছড়ানো হচ্ছে।

Fact Check

Claim

ভিডিওতে ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’ নামক বাংলাদেশ ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনের এক সন্ত্রাসবাদী মালদার মিলকি এলাকায় একে-৪৭ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

Conclusion

মালদা জেলা পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভাইরাল ভিডিওর ব্যক্তিটি কোনও জঙ্গি নয় বরং তিনি পেশায় একজন ইলেকট্রিশিয়ান। মালদার ইংরেজ বাজার থানার মিলকি এলাকার বাসিন্দা ওই ব্যক্তি তাঁর কাজের জন্য ব্যবহৃত ড্রিল মেশিন, হ্যামার, রড, স্ক্রু ড্রাইভার ও একটি কালো হোল্ডার নিয়ে যাচ্ছিলেন।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  1. কাক: অর্ধসত্য
  2. একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  3. অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Do you think a messenge is a fake ?
To know the truth, send that to our Number73 7000 7000 you can email on factcheck@intoday.com
Read more!
Advertisement
Advertisement