দেশের ইতিহাসে যে যে বড় বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে সম্প্রতি কেরলের ভূমিধসের ঘটনা অন্যতম। প্রবল বৃষ্টির জেরে ভূমিধস নামে, ও মাটির নীচে চাপা পড়ে বহু মানুষের মৃত্যু হয়। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, মৃতের সংখ্যা ৩৬০ ছাড়িয়েছে।
এই আবহে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট বেশ ভাইরাল হতে শুরু করেছে। এই পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, এই ভূমিধসে নাকি মল্লপুরম নামের একটি গ্রাম পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। ঘটনাচক্রে, বছর চারেক আগে নাকি ওই গ্রামেই এক গর্ভবতী হাতিকে আনারসে বোমা বেঁধে খাওয়ানো হয়েছিল যার পর হাতিটি মারা যায়।
অনেকেই ফেসবুক একটি আর্ট ওয়ার্ক সহ এই দাবি পোস্ট করেছেন। পোস্টে লেখা হয়েছে, "মনে পড়ে? কেরলে সেই হাতির কথা! গর্ভবতী সেই হাতিকে আনারসে বম ঢুকিয়ে খাইয়েছিল গ্রামের কিছু লোক🥲🥲।। সেই গ্রামের নাম "মল্লপূরম্", এবার ভূস্খলনে সেই গ্রাম সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেল। প্রকৃতির দণ্ড, ন্যায়, চক্র যা ইচ্ছা যেভাবে ইচ্ছা বুঝে নেন। আপনার সামনেই ।। ভগবান আমার অপরাধ-পাপ ক্ষমা করুক। শাস্তি তো পাচ্ছি, পাবই।। ধর্মের জন্যও যদি কখনো হিংসা করতে হয় তারও ফল ভোগ করতে হয়, আর অধর্মে!!"
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে কেরলে সাম্প্রতিক ভূমিধস ও ওই উল্লেখিত ঘটনার স্থান সম্পূর্ণ আলাদা। বিভ্রান্তি ছড়াতে এই পোস্ট করা হয়েছে।
কীভাবে জানা গেল সত্যি
সবার প্রথম আমরা কীওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে খুঁজে বের করার চেষ্টা করি যে বছরখানেক আগে কেরলে ওই ঘটনা ঠিক কোথায় ঘটেছিল।
তখন আমরা ৩ জুন, ২০২০ সালে প্রকাশিত এনডিটিভির একটি রিপোর্ট দেখতে পাই। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ঘটনাটি কেরলের পালাক্কাড জেলার। যেখানে একটি হাতি খাদ্যের সন্ধানে নানা জায়গায় ঘুরছিল যখন কিছু লোক তাকে বাজি-পটকা বাঁধা একটি আনাসর খাইয়ে দেয়। সে মানুষকে ভরসা করেই সেটা খেয়ে ফেলে যার পরিণতি হয় ভয়ংকর।
বাজি পটকার বারুদের জেরে বিষক্রিয়া হয় এবং হাতিটি যন্ত্রণা লাঘব করতে ৩-৪ দিন একটি জলাশয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অনেকে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত সে মারা যায়। লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে, এই খবরে মল্লপূরম নামের কোনও গ্রামের কথা উল্লেখ করা হয়নি। এ বাদেও টাইমস অফ ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু, ইকনমিক টাইমস ইত্যাদি সংস্থার প্রতিবেদনেও কোথাও মল্লপূরমের কোনও নামই উল্লেখ করা হয়নি।
মল্লপূরম গুজবের সূত্রপাত কীভাবে?
কীওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমেই আমরা ইন্ডিয়া ডট কমের একটি ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদন খুঁজে পাই যা ২০২০ সালের ৪ জুন প্রকাশ পেয়েছিল। সেখানে লেখা হয়, বিজেপি সাংসদ মানেকা গান্ধী গোটা ঘটনাটিকে একটি সাম্প্রতিক রং দিতে চেয়ে দাবি করেন যে এটি মালাপ্পুরমের ঘটনা। কারণে সেখানে মুসলিম জনসংখ্যা বেশি। প্রতিবেদনে স্পষ্ট লেখা হয় যে ঘটনাটি মালাপ্পুরমের নয়, বরং পালাক্কাডের।
সাম্প্রতিক ভূমিধসে কি পালাক্কাডে ক্ষতি হয়েছে?
এই বিষয়ে জানতে আমরা কীওয়ার্ড সার্চ করি। যদি ভূমিধসের জেরে কোনও ক্ষতি সেখানে হয়ে থাকত তবে অবশ্যই সেটা নিয়ে খবর প্রকাশ পাবে। কিন্তু এমন কোনও খবর আমাদের নজরে পড়েনি যা থেকে অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যায় যে পালাক্কাড সুরক্ষিত রয়েছে।
যেহেতু কেরলের এই সাম্প্রতিক ভূমিধস ওয়ানাডে হয়েছে, তাই গুগল ম্যাপের সাহায্য নিয়ে আমরা খোঁজার চেষ্টা করি যে ওয়ানাড ও পালাক্কাডের মধ্যে দূরত্ব কতটা। ম্যাপের তথ্য অনুযায়ী, দুই স্থানের মধ্যে প্রায় ১৮০ কিলোমিটার দূরত্ব রয়েছে।
সেই সঙ্গে আমরা ইন্ডিয়া টুডের পালক্কাডের স্থানীয় প্রতিনিধির সঙ্গেও যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান যে সেখানে ভূমিধসের কোনও আঁচ পড়েনি।
অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে, এই মনগড়া আজগুবি গল্প কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।
বছর কয়েক আগে কেরলে মল্লপূরম নামে একটি গ্রামে একটি গর্ভবতী হাতিকে আনারসের সঙ্গে বোমা বেঁধে খাইয়ে মেরে ফেলা হয়। সাম্প্রতিক ভূমিধসে সেই গ্রামটি পুরোপুরি ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে।
গর্ভবতী হাতির সঙ্গে এই নৃশংস ঘটনাটি কেরলের পালাক্কাড-এ ঘটেছিল। সম্প্রতি ভূমিধস এসেছে ওয়ানডে। দুটি জায়গার মধ্যে দূরত্ব ১৮০ কিলোমিটার। ভূমিধসে পালাক্কাডের কোনও ক্ষতি হয়নি।