চলতি বছরের আইপিএল চলে এসেছে তার অন্তিম পর্বে। রবিবারের জোড়া ম্যাচের পরই শুরু হবে প্লে অফ পর্ব। এখনও পর্যন্ত প্লে অফে কোয়ালিফাই করেছে গুজরাট, চেন্নাই এবং লখনউের দল। শেষ চারে আর কে জায়গা করে নিতে পারে, তার ফয়সালা হয়ে যাবে আজ রাতের মধ্যেই।
তবে ইতিমধ্যেই আইপিএল নিয়ে সোশ্য়াল মিডিয়ায় একটি পোস্ট ব্যাপকভাবে ভাইরাল হচ্ছে। বেশ কিছু টুইটার ব্যবহারকারী দুটি ছবির একটি কোলাজ শেয়ার করছেন। যেখানে একদিক বিরাট কোহলি এবং অপরদিকে মহেন্দ্র সিং ধোনিকে দেখা যাচ্ছে। দুটি ছবিই জিও সিনেমা লাইভ থেকে স্ক্রিনশট নেওয়া দেখে বোঝাই যাচ্ছে।
ছবিদুটি শেয়ার করে অনেকেই দাবি করছেন, হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ম্যাচের সময় কোহলি যখন সেঞ্চুরি করে আউট হন, জিও সিনেমার লাইভ দর্শকসংখ্য়া নাকি ৪.১ কোটি ছিল। যা ধোনির যে স্ক্রিনশট দেখা যাচ্ছে, তার তুলনায় প্রায় ৩ গুণেরও বেশি।
এই জোড়া ছবি শেয়ার করে তিরস্কারের ভঙ্গিতে লেখা হয়েছে, কোহলির ব্যাটিং দেখতে এই অ্যাপে ৪ কোটির বেশি মানুষ হাজির হয়েছিলেন। অন্যদিকে, ধোনির ব্য়াটিং দেখার সময় ১.৫ কোটি মানুষও ছিলেন না।
একই দাবি সহ অনেকেই এই পোস্ট টুইটারে শেয়ার করেছেন।
ইন্ডিয়া টুডে ফ্য়াক্ট চেক টিম তদন্ত করে দেখেছে যে, বিরাট কোহলির যে স্ক্রিনশটের সঙ্গে ধোনির তুলনা করা হচ্ছে, তা আসলে ভুয়ো বা সম্পাদিত। আসলে এমনটা ঘটেনি।
কী ভাবে জানা গেল সত্যি?
সবার প্রথম আমরা খোঁজার চেষ্টা করি যে, এই বছর আইপিএল-এ কোন ম্যাচ চলাকালীন সর্বাধিক কত দর্শক লাইভে হাজির ছিলেন। কিওয়ার্ড সার্চ করে আমরা বেশ কিছু সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাই যা গত ১৮ এপ্রিল প্রকাশ করা হয়েছিল।
উদাহরণস্বরূপ, বিজনেস টুডের একটি প্রতিবেদনে লেখা হয়, ১৭ এপ্রিল চেন্নাই সুপার কিংস ও রয়্যাল চ্য়ালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর মধ্যে ম্যাচের শেষ ওভারের সময় যখন ধোনি ব্যাট করতে আসেন, তখন লাইভ দর্শকসংখ্যা ২.৪ কোটি স্পর্শ করে গিয়েছিল। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই রেকর্ড আগে কখনও হয়নি। এই ম্যাচের আগে আইপিএল চলাকালীন অনলাইনে সর্বাধিক দর্শকসংখ্যা ডিজনি-হটস্টারের প্লাটফর্মে দেখা গিয়েছিল ২০১৯ সালের ফাইনাল ম্যাচের দরুন। সেই সময় লাইভ ভিউয়ারশিপ ছুঁয়েছিল ১.৮৬ কোটি।
এ বাদে এমন কোনও খবর আমাদের চোখে পড়েনি যেখানে বলা হয় যে কোহলির সেঞ্চুরির পর ভিউআরশিপের রেকর্ড হয়েছিল। যা থেকে এই দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন জেগে যায়।
এরপর আমরা আইপিএল-র চলমান ম্যাচ থেকে একটি স্ক্রিনশট নেই যেখানে লাইভ দর্শকসংখ্যাটি দেখা যাচ্ছে। তার সঙ্গে কোহলির ছবিতে থাকা স্ক্রিনশটে দর্শকসংখ্য়ার তুলনা করলে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, কোহলির ছবিতে ৪.১ সংখ্যাটি ফটোশপ করে বসানো হয়েছে। কারণ জিও সিনেমার অ্যাপে এমন ফন্ট ব্যবহার হয় না যেই ফন্ট ভাইরাল ছবিতে দেখানো হয়েছে।
সব শেষে আমরা খুঁজে দেখার চেষ্টা করি যে হায়দরাবাদের সঙ্গে ম্যাচে কোহলি সেঞ্চুরি করার সময় লাইভে দর্শকসংখ্যা কত ছিল। এই সম্পর্কিত কোনও তথ্য অফিশিয়াল তথ্য আমরা খুঁজে পাইনি। তবে কিছু কিওয়ার্ড সার্চ করে সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট হওয়া কিছু ছবি আমরা দেখতে পাই। তখন দেখা যায়, কোহলির সেঞ্চুরির সময় লাইভে দর্শকসংখ্যা ছিল ১.৯ কোটি। যদিও এই স্ক্রিনশটের সত্যতা আমরা যাচাই করিনি।
ফলে বিষয়টি স্পষ্ট যে একটি ভুয়ো স্ক্রিনশটের সাহায্যে মিথ্যে দাবি করা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
ধোনিকে ছাপিয়ে কোহলির আইপিএল সেঞ্চুরির সময় অনলাইনে লাইভ দর্শকসংখ্যা ছিল ৪.১ কোটি।
ভাইরাল স্ক্রিনশটটি সম্পাদিত। আইপিএল-এ এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ অনলাইন দর্শকসংখ্যা ২.৪ কোটি, যা ধোনির ব্যাট করার সময় হয়েছিল।